কলকাতা, 19 ডিসেম্বর : দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস পর গত 11 নভেম্বর থেকে আবার শুরু হয়েছে লোকাল ট্রেন চলাচল । তবে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে মানতে হবে কোভিড-19 স্বাস্থ্যবিধি ও বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব । তবে আদতে বেশ কয়েকটি লাইনে ট্রেনের সংখ্যাও যেমন কম তেমনই ট্রেন আসার সময়েরও কোনও ঠিক নেই । ফলে নাকাল হতে হচ্ছে নিত্য যাত্রীদের ।
দীর্ঘদিন পর আবার চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা । সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও ভিড় সামাল দিতে দিনের ব্যস্ত সময় ট্রেনের সংখ্যা বেশি থাকবে । রাতের দিকে সংখ্যা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে । তবে বাস্তব চিত্রটা একেবারেই অন্যরকম । শিয়ালদা ডিভিশনের সাউথ ও নর্থ মিলিয়ে মোট সার্ভিস 900-র উপরে । তবে এই সংখ্যাটি নামিয়ে আনা হয়েছে 470 টিতে । এর বেশিরভাগই 9 কামরার গাড়ি । এর ফলে স্বাথ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব শিকয়ে উঠেছে । শুধু তাই নয়, যাত্রীদের আগের চেয়ে অনেক বেশি ঠাসাঠাসি করে সফর করতে হচ্ছে ।
পাশাপাশি, একটা গাড়ি বেরিয়ে গেলে পরের গাড়ি এক ঘন্টা বা তারও বেশি পরে আসছে । কখনও সেটা 12 কামরার কিংবা 9 কামরার । অগত্যা যাত্রীদের ঠেলাঠেলি করেই ট্রেনে সফর করতে হচ্ছে । যাত্রীদের অভিযোগ, সন্ধ্যে 7.30 টা পর্যন্ত ট্রেনের সংখ্যা ঠিক থাকলেও তারপর থেকে একটি গাড়ি পাওয়া গেলেও পরেরটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে । লকডাউনের আগে সাধারণত কৃষ্ণনগর যাওয়ার জন্য সন্ধ্যে 7.35, রাত 8.20 (লালগোলা), 8.25, 9.00, 11.30 (লালগোলা) থাকত । এখন 7.35 এর গাড়িটি বেরিয়ে গেলে পরের ট্রেনটি রাত 8.20 ৷ লালগোলা আর কোনও গাড়ি থাকে না । এরফলে একটি গাড়িতে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে হয় । একইভাবে বনগাঁ শাখায় সন্ধে 7.24 এর গাড়িটি বেরিয়ে গেলে পরের গাড়ি রাত 8.24 মিনিটে ও 9.04 মিনিটে । মাঝের স্বল্প দূরত্বের সবকটি গাড়ি বাতিল করা হয় ।
আরও পড়ুন : দু'দিনের সফরে রাজ্য শাহ, রয়েছে একাধিক কর্মসূচি
এভাবে সমস্যা আরও বাড়ায় পরপর দুটি 9 কামরার ট্রেন দেওয়া হয় । ফলে মাঝের স্টেশন থেকে যাত্রীরা আর কেউ উঠতেই পারছেন না । চক্ররেলের ক্ষেত্রেই সমস্যা রয়েছে । আগে দমদম থেকে বিবাদি বাগের দিকে দিনের প্রথম ট্রেনটি ছাড়ত সকাল 7.30 টায় । সেই ট্রেনটি এখন ছাড়ে সকাল 9 টায় । ঠিক একইভাবে বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় অধিকাংশ ট্রেন বাতিল করা হয় । 12 কোচের ট্রেন বেশি পরিমাণে চালানোর সুবিধার্থে আগে শিয়ালদহতে সবকটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হত । এখন 11, 12, 13 ও 14 - এই চারটি প্লাটফর্মে লোকাল ট্রেন ঢোকানো ও বেরোনো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ফলে বেশি পরিমাণে 12 কামরার ট্রেন চালানো যাচ্ছে না ।
নিত্যযাত্রী অর্কপল সরকার বলেন যে, " যেখানে সরকারিভাবে বারবার বলা হচ্ছে যে ট্রেনে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রেন বেশি করে চালানো হোক, সেখানে এইভাবে ট্রেনের সংখ্যায় কোপ বসিয়ে কি আদৌ কোনও সমস্যার সমাধান হচ্ছে? বরং উলটে এতে সংক্রমণের আশংকা আরও বেড়ে যাচ্ছে । যাত্রীদের জোরালো আবেদনে 24 নভেম্বর থেকে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে শিয়ালদহ ডিভিশনে 639টি ট্রেন হয়েছে । কিন্তু তাতে আখেরে লাভ কিছুই হয়নি । হাওড়া ডিভিশনে কিন্তু এরকম সমস্যা হয়নি । তারা মোট ট্রেনের প্রায় 98 শতাংশ গাড়ি নামিয়ে দিয়েছে । তারা যদি পারে তাহলে শিয়ালদহ কেন পারল না ? "
আরও পড়ুন : 55 বছর পর ফের শুরু হলদিবাড়ি-চিলাহাটি ট্রেন পরিষেবা
সমস্ত বিষয়টি শুনে পূর্ব রেলের প্রধান জনসংযোগ আধিকারিক কমল দেও দাস বলেন, "এমনটা হওয়া উচিত নয় । আমাকে বিষয়টি জানালেন । আমি এবার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব । তবে এটা বলতে পারি যে গোড়ার দিকে মোট ট্রেনের 25 শতাংশ চালাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । এরপর যাত্রী সংখ্যা বাড়ার সাথে ধীরে ধীরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে । আর যে সেকশনে প্রয়োজন সেই সেকশনগুলিতে ট্রেন বাড়ানো হচ্ছে । তবে 9টি কোচের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সাথে কথা বলে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করব । "