কলকাতা ও জলপাইগুড়ি, 6 ফেব্রুয়ারি: তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদানের পর সোমবারই বয়ান বদল করলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল (BJP MLA Suman Kanjilal Joins TMC)। রবিবার ক্যামাক স্ট্রিটে এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে ঘাসফুল শিবিরে নাম লেখান সুমন । তিনি যখন দলবদল করে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আলিপুরদুয়ার পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ কর, উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা, আলিপুরদুয়ার তৃণমূল-কংগ্রেসের সভাপতি প্রকাশিক চিক বরাইক ।
অথচ সোমবার সংবাদমাধ্যম তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান দলবদল নয়, আলিপুরদুয়ারের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে গিয়েছিলেন তিনি । তিনি এও জানিয়েছিলেন, বিজেপি বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হলেও এলাকার মানুষের জন্য সেভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না । আর সে কারণেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন ।
এই ঘটনার পর খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তিনি যে দলে রয়েছেন সেই দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী আছেন বা দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আছেন, এমনকি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল আছেন অথবা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন । এদের কারোর কাছে না গিয়ে তিনি আচমকাই কেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গেলেন । এর জবাবে বিধায়ক জানান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গে এসে মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর কথা শুনে মনে হয়েছিল তিনি আন্তরিক । আর সে কারণেই তাঁর সঙ্গে দেখা করে আমার অসুবিধার কথা জানিয়েছি । তৃণমূল সাংসদ আমাকে সব ধরনের সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন । ক্যামাক স্ট্রিটে যাওয়া রাজনৈতিক সৌজন্য ছাড়া কিছু নয় ।
এদিকে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলেও তিনি ক্যামাক স্ট্রিটে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন স্বীকার করে নিলেও যোগদান করেছেন এই শব্দটি উল্লেখ করতে চাননি । বরং তিনি পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন যে, "ছবি দেখে আপনাদের কী মনে হচ্ছে। ছবি কথা বলে।"
আরও পড়ুন : উত্তরবঙ্গে পদ্মের ঘর ভাঙল, তৃণমূলে যোগ আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়কের
এই বিষয়ে উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ জানান, "সুমন একজন শিক্ষিত ও সাংবাদিক মানুষ । আজ হঠাৎ করে তিনি বলছেন যে তিনি আলিপুরদুয়ারের উন্নয়নের কাজ করতে পারছেন না । আমরা বিধানসভার এমএলএ হস্টেলে একসঙ্গেই থাকি ৷ কখনও এমন কথা আমাদের বলেননি তিনি । তাঁর যে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে সে কথাও কখনও তাঁর মুখ থেকে শোনা যায়নি । এই অবস্থায় তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে কী বলব বুঝতে পারছি না ।"
এদিকে আলিপুরদুয়ারের বিধায়কের এই বক্তব্য নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন । তিনি বলেন, "সুমনবাবুর কথা থেকেই স্পষ্ট তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুপ্রাণিত হতে গিয়েছিলেন । তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাঁর বিধানসভা এলাকায় উন্নয়নের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস বা এই সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন । এখন তিনি যেখানে আছেন সেখানে যদি তিনি মানুষের উন্নয়নের কাজ করতে পারতেন তাহলে তাই করতেন । অতীতেও তৃণমূলের ছাতার তলায় যে সমস্ত বিধায়কেরা এসেছেন তারাও কী উত্তরীয় পড়েছিলেন আপনারা দেখতে পেরেছেন । প্রত্যেকেরই কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, আমাদের এসব নিয়েই চলতে হয় । তবে বাংলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া কোনও বিকল্প নেই ।
রাজনৈতিক মহলে বিধায়কের এই বক্তব্য নিয়ে বলা হচ্ছে আসলে বিধায়কের এমন অবস্থানের পিছনে বাধ্যবাধকতা হল অ্যান্টি ডিফেকশন । আর এই অ্যান্টি ডিফেকশন আইনের কারণেই হয়তো সরাসরি যোগদানের কথাটা স্বীকার করতে পারছেন না বিধায়ক ।
আরও পড়ুন : বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক-বিরোধী হাইভোল্টেজ প্রচার, ত্রিপুরায় সোমবার অমিত-মমতা