কলকাতা, 12 ডিসেম্বর: ঘূর্ণিঝড় মন্দৌসের প্রভাব কাটিয়ে সোমবার থেকে ফের তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করেছে শহরে । সোমবার সকালে কলকাতার তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় 16.6 ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এদিকে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে শহর কলকাতায় বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, শহর কলকাতার অধিকাংশ জায়গার বাতাসের দূষণ সূচকের পরিমাণ 300 পেরিয়েছে (Amount of dust increasing in air of Kolkata)। যা এককথায় 'ভেরি পুওর' (AQI showing very poor) ।
কলকাতার যে সমস্ত এলাকায় ধূলিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে সেগুলি মূলত জনবহুল । কোনওটা আবার পর্যটনস্থল । ফলে শীতের বিকেলে কলকাতার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন পরিবেশবিদদের একাংশ । এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, এদিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকায় বিকেল চারটেয় বাতাসে একিউআই (Air Quality Index) বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে 346 । বিধাননগরে একিউআই 318 । যাদবপুর এলাকায় বাতাসের দূষণ সূচক 319 । কলকাতা ছাড়াও হাওড়া ও আসানসোলের একাংশেও বাতাসের গুণমান ভালো নয় । হাওড়া ঘুসুরিতে বাতাসের একিউআই 356 । আসানসোল আদালত এলাকায় বাতাসের একিউআই 358 ।
রাজ্যের অবশিষ্ট অংশে অবস্থা খুব ভালো না-হলেও সন্তোষজনক বলা চলে। শীতের মরশুমে ব্যাপকহারে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ায় পরিবেশবিদদের একাংশ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অ্যাজমা রোগী, বয়স্ক মানুষ, বাচ্চাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন । বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা থেকে রক্ষা পেতে দিনে তিন-চারবার জল ছেটানোর উদ্যোগ নিক প্রশাসন, এমনটা চাইছেন বিশারদরা। যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশ দফতরের উদ্যোগে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় রাস্তায় জল ছেটানো হচ্ছে । কলকাতা পৌরনিগমের তদারকিতে শহরে সকাল-বিকেল 54টি গাড়িতে করে রাস্তায় জল ছেটানো হচ্ছে (Air Pollution)।
জানা গিয়েছে, বাতাসে ধূলিকণা পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ, জলীয় বাষ্প কমে যাওয়া ও তাপমাত্রা কমলে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা নিচের দিকে নামতে শুরু করে । অর্থাৎ একজন মানুষের গড় উচ্চতা যতটা হয় সেই পর্যায়ে নেমে আসে । স্বাভাবিকভাবে এই বাতাস গ্রহণের ফলে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে । কিন্তু এখনও তো মারাত্মক হারে শীত পড়েনি বা তাপমাত্রা কমেনি ৷ তাই এখনই যদি বাতাসের গুণমান নামতে শুরু করে তাহলে তাপমাত্রা আরও কমলে অবস্থা কী হবে? তা নিয়ে শঙ্কিত পরিবেশবিদদের একাংশ ।
পরিবেশবিদ এসএম ঘোষ বলেন, "তাপমাত্রা কমলে বাতাসে ধূলিকণা পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বা নীচে নেমে আসে, বিজ্ঞানসম্মতভাবে তা ঠিক । কিন্তু বছরভর পরিবেশ দূষণ রোধে যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তার কী আদৌ বাস্তবায়ন হয়? এখনও বর্ধমান হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলায় ন্যাড়া পোড়ানো হয় ।"
আরও পড়ুন: জেলায় শীত পড়লেও কলকাতা কাঁপতে আরও একমাস, বলছে আলিপুর
তিনি প্রশ্ন তুলে আরও বলেন, "ডিসেম্বরের মধ্যে শহর কলকাতা থেকে 15 বছরের বেশি পুরনো গাড়ি তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল । সেই কাজ কতটা হল? রাস্তার ধারের কয়লার জলে সেখান থেকেও দূষণ ছড়ায় । তাই নাড়া পড়ানো বন্ধ -সহ 15 বছরের উর্ধ্বে যে সমস্ত ডিজেল চালিত গাড়ি রয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করতে হবে । রাস্তায় যেতে দীর্ঘক্ষণ ট্র্যাফিক জ্যাম না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে । সর্বোপরি সাধারণ মানুষদের সর্বক্ষণ সতর্ক থাকাটাই উচিত ।"