কলকাতা, 9 নভেম্বর : আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Alapan Bandyopadhyay) প্রাণে মেরে ফেলার কথা জানিয়ে সম্প্রতি একটি চিঠি আসে তাঁর স্ত্রী সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ৷ এই ঘটনায় চিকিৎসক অরিন্দম সেন-সহ 3 জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসকের মানসিক সমস্যা রয়েছে এবং সেই চিকিৎসা চলছে ৷ তাহলে কী ভাবে এবং কেন তিনি মুখ্য়মন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টাকে (Principal Advisor) চিঠি দিলেন ?
অক্টোবরের শেষে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sonali Chakravarti Bandyopadhyay) কাছে একটি হুমকির চিঠি আসে ৷ সোনালি চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) উপাচার্য (Vice Chancellor) ।
এক লাইনের চিঠিটি লেখা হয়েছিল ইংরেজিতে ৷ বাংলায় যার অর্থ, "আপনার স্বামীকে মেরে ফেলা হবে ৷ কেউ বাঁচাতে পারবে না ৷ (Your husband will be killed. No body can save the life of your husband) ৷ চিঠির নিচে সই রয়েছে জনৈক গৌরহরি মিশ্রের নামে এক ব্যক্তির এবং কেয়ার অফ মহুয়া ঘোষ লেখা ছিল ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মহুয়া ঘোষ রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের কর্মী এবং গৌরহরি মিশ্র ওই কলেজের কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবরেটরির কর্মী । মহুয়া ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে তিনি জানেন না কে বা কারা তাঁর নামে এমন চিঠি পাঠিয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Alapan Bandyopadhyay : আলাপনকে খুনের হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছিল মানসিক সমস্যাগ্রস্ত চিকিৎসক
এরপর তদন্তে লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিবের প্রাণনাশের কথা জানিয়ে পাঠানো চিঠিটি এসেছিল শরৎ বোস রোডের পোস্ট অফিস থেকে । তাঁরা ওই পোস্ট অফিসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন । খতিয়ে দেখেন একাধিক সরকারি নথিপত্র, পোস্ট অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও একাধিক হাতে লেখা চিঠি ৷
প্রায় হাজার খানেক চিঠি দেখার পর একটি নাম দেখে সন্দেহ হয় গোয়েন্দাদের । এরপরেই চিঠিটি দেওয়ার সময় দেখে সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে রমেশ সাউকে (Ramesh Shaw) চিহ্নিত করে পুলিশ । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা বিজয়কুমার কয়ালের (Bijoy Kumar Kayal) কথা জানতে পারেন ৷ বিজয় জানান, তিনি এই চিঠিটি শুধুমাত্র টাইপ করার কাজটি করেছে ৷ আর তাঁকে এই কাজটি দিয়েছেন চিকিৎসক অরিন্দম সেন (Dr Arindam Sen) ৷ পরে ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, অরিন্দম তাঁর গাড়িচালকের হাত দিয়ে ওই চিঠিটি টাইপের জন্য পাঠিয়েছিলেন বিজয়ের কাছে । বিজয় সেটি টাইপ করে গাড়িচালক রমেশ সাউকে দিয়ে দেন ৷ তিনি চিঠিটি শরৎ বোস রোডের পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট করেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের ঠিকানায় ৷
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গত দু'বছর ধরে এরকম চিঠি 7 জনেরও বেশি ব্যক্তিকে পাঠিয়েছেন চিকিৎসক অরিন্দম সেন । কিন্তু কেন তিনি এমন কাজ করেছেন, তার স্পষ্ট কোনও কারণ এখনও জানা যায়নি । ওই চিকিৎসকের মানসিক স্থিতাবস্থা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা । জেরায় ওই চিকিৎসক অরিন্দম জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে আক্রোশের জেরে তিনি চিঠি পাঠিয়ে থাকতেন । এমনকি এর আগে নিজের প্রতিবেশীকেও এমন চিঠি পাঠিয়েছেন অরিন্দম সেন ৷
চিঠিতে গৌরহরি মিশ্রের নাম কেন উল্লেখ করেছিলেন চিকিৎসক ? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, গৌরহরি মিশ্রকে হেনস্থা করতেই হুমকির চিঠিতে তাঁর নাম লিখেছিলেন । গৌরহরি মিশ্রের সঙ্গে চিকিৎসক অরিন্দ সেনের ঝামেলা হয়েছিল । তার প্রতিশোধ নিতেই নাকি এমন কাণ্ড । তবে পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে ।
অনেক সময় তিনি নাকি সাংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের দ্বারা প্রভাবিত হয়েও চিঠি লিখতেন । অরিন্দম সেনের মানসিক মেডিক্যাল রিপোর্ট খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা । অরিন্দম সেনের চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন গোয়েন্দারা ৷