ETV Bharat / state

"আর দেখা হবে না", সত্যি হল সজলবাবুর একথাই - সজল কাঞ্জিলাল

সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ সজলবাবুর বিচরণ ছিল শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন আঙিনায় । যার জেরে এসব ক্ষেত্রের বহু মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি । আর্ট কলেজের পুরুষ মডেল হিসেবেও পরিচিত ছিলেন ।

সজল কাঞ্জিলাল
author img

By

Published : Jul 15, 2019, 1:31 AM IST

Updated : Jul 15, 2019, 6:52 AM IST

কলকাতা, 15 জুলাই : কীভাবে সত্যি হয়ে গেল তিনটি শব্দ । "আর দেখা হবে না !" একথার শেষে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে পার্কস্ট্রিট মেট্রো রেলওয়ে স্টেশনের দিকে রওনা দিয়েছিলেন সজল কাঞ্জিলাল । গন্তব্য ছিল রবীন্দ্রসদন-নন্দন-অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বর । তারপর সব শেষ ! যদিও, আর দেখা না হওয়ার কথা তিনি বলেছিলেন অন্য প্রসঙ্গে । তবে, একথা যে এভাবে সত্যি হয়ে উঠবে, এখনও তা বিশ্বাস করতে পারছেন না গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক কোর্স সম্পূর্ণ করা অভিলাষ পাল । এখনও তিনি কার্যত বাকরুদ্ধ । এই কথাটি যে গতকাল সজলবাবু তাঁকেই বলেছিলেন ।


সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ সজলবাবুর বিচরণ ছিল শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন আঙিনায় । যার জেরে এসব ক্ষেত্রের বহু মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি । তবে, রবীন্দ্রসদন-নন্দন-অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বরে যতটা না তাঁর পরিচিতি ছিল, তার থেকে বেশি পরিচিতি ছিল লিটল ম্যাগাজিন, থিয়েটারের বই-ম্যাগাজিন-পোস্টার বিক্রেতা হিসেবে । আবার তিনি পরিচিত ছিলেন আর্ট কলেজের মডেল হিসেবে । কলকাতায় এই ধরনের পুরুষ মডেল হাতেগোনা কয়েকজন রয়েছেন । তবে, কলকাতার বিভিন্ন আর্ট কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষকদের বড় অংশের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ছিলেন একমাত্র পুরুষ মডেল । তাঁর এই স্থান আবার কবে পূরণ হবে, আদৌ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পড়ুয়া ও শিক্ষকরা ।

স্নাতক কোর্স সদ্য সম্পূর্ণ হয়েছে অভিলাষের । শনিবার স্নাতকোত্তর স্তরের জন্য ইন্টারভিউ ছিল গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে । এই কলেজেই স্নাতক হওয়ার বছরগুলিতে সজলবাবুর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর । তবে শুধুমাত্র তিনি একা নন । শুধুমাত্র সরকারি এই আর্ট কলেজেও নয় । আর্ট-এর পড়ুয়া, শিক্ষকদের প্রায় সকলের সঙ্গেই সজলবাবুর সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক ছিল । তিনি খোলা মনের মানুষ ছিলেন । তাঁর সঙ্গে পড়ুয়া, শিক্ষকদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো । এসব কারণেও সজলবাবু সেই অর্থে একজন প্রফেশনাল মডেল হয়ে উঠতে পারেননি । তবে, তিনি হয়ে উঠেছিলেন কলকাতার একমাত্র মডেল । আপাতত তাঁর বিকল্প অন্য আর কেউ নেই বলে জানিয়েছেন বহু পড়ুয়া, শিক্ষক ।

স্নাতকোত্তরের জন্য ইন্টারভিউতে অনেকেই সুযোগ পাবেন না‌ । অনেকে আবার কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবেন । অভিলাষের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই পড়ুয়া । শনিবার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে যখন বেরিয়ে যান সজলবাবু, তখন এই তিনজনের সঙ্গেই তাঁর শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ।‌ মাস্টার্সের জন্য তাঁদের কেউ যদি কলকাতার বাইরে চলে যান, সে ক্ষেত্রে সজলবাবুর সঙ্গে আবার কবে দেখা হতে পারে, তা কেউ-ই জানেন না । এই পরিস্থিতিতে সজলবাবু যখন গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন অভিলাষকে তিনি বলেন, "অভিলাষ, তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না, খুব খারাপ লাগছে ।" অভিলাষ বলেন, "আমি বললাম, দেখা হবে, নিশ্চয়ই দেখা হবে । আবার কলেজে তো আসব । উনি বললেন, ঠিক আছে । ভালো থেকো ।" এরপর আরও অনেক কথা হল তাঁদের মধ্যে । হাসি-ঠাট্টাও হল, যেমন হয় প্রতিদিন । অবশেষে, সাড়ে ছ'টা নাগাদ তিনি বেরিয়ে যান এই কলেজ থেকে ।

মিনিট 20 পর বাড়ি ফেরার জন্য পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে মেট্রো ধরতে যান অভিলাষ। তখন তিনি জানতে পারেন মেট্রো পরিষেবা বন্ধ রয়েছে । কিন্তু, ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে পারেননি । জানতে পারেননি, তাঁদের প্রিয় কাঞ্জিলালদার ওই আর দেখা না হওয়ার কথা, শেষে সত্যি হয়ে উঠবে এভাবে ! ঘটনার কথা কিছুই জানতেন না অভিলাষ । বাড়ি ফেরার পর তাঁর এক বন্ধু অনুভব মিত্র ফোন করেন তাঁকে । অভিলাষ জানতে পারেন তাঁদের কাঞ্জিলালদার শেষ সত্যি হয়ে ওঠা কথা, আর দেখা হবে না !

অভিলাষ বলেন, "জলজ্যান্ত মানুষ । কাঞ্জিলালদার সঙ্গে কথা হল । আমি শকড । বিশ্বাস করতে পারছি না ।" তিনি বলেন, "আমরা তিনজন ছিলাম । আমাদের উদ্দেশ্য করেই কথাটি বলেছিলেন । তবে, কাঞ্জিলালদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিল । কথাটি আমাকেই বলেছিলেন । উনি অন্য মানে নিয়েই বলেছিলেন । কারণ এই গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে আমার মাস্টার্স করা নাও হতে পারে । অন্য কলেজেও আবেদন করেছি । যেখানে সুযোগ পাব, সেখানেই ভরতি হব । এই কলেজে এত বছর ভালো সম্পর্কের মধ্যে আমরা ছিলাম । তখন কাঞ্জিলালদা বলেছিলেন, আর দেখা হবে না ।" তিনি বলেন, "মেট্রোতে যে কীভাবে, কী ঘটল, কিছুই বুঝতে পারছি না ।"

গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়া মানস দাস বলেন, "খুবই মর্মান্তিক ঘটনা । মেনে নেওয়া যায় না ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এ কথা বলতে পারি, গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে জুনিয়র থেকে সিনিয়রদের কাছে পুরুষ মডেল একমাত্র কাঞ্জিলালদাই ছিলেন । পুরুষ মডেল আরও আছেন । তবে, কাঞ্জিলালদাই ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ।" কলকাতার অন্য আর্ট কলেজেও যেতেন তিনি । তবে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে বেশিরভাগ সময় থাকতেন । এই কলেজের আনাচ-কানাচে সজলবাবুর বহু মূর্তি রয়েছে । তাঁকে দেখে বিভিন্ন সময় যে সব তৈরি করেছেন পড়ুয়ারা ।

খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন সজলবাবু । গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক হয়েছেন অনুভব মিত্র । তিনি বলেন, "আমাদের সকলের সঙ্গেই খোলামেলা সম্পর্ক ছিল কাঞ্জিলালদার । আমার এক বন্ধু অভিলাষ বলল, যদি পাঁচ মিনিট আটকে রাখতাম, তা হলে মেট্রোতে এই ঘটনা হত না । কাঞ্জিলালদা ওদের বলেছিল, ওরা চলে যাচ্ছে । ওদের সঙ্গে আর দেখা হবে না ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এ কথা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্ট হয় যে, এতটা খারাপ ঘটনা হতে পারে । সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না ।" তিনি আরও বলেন, "অনেক পুরুষ মডেল আছেন । কিন্তু, নিয়মিত মডেলের কথা যদি বলেন, তা হলে বলব, এই কাঞ্জিলালদাই শুরু এবং শেষ ।"


গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের অধ্যাপক মৃণালকান্তি গায়েন বলেন, "যতটা মনে পড়ছে, 2008-09 থেকে আমাদের গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে আসতেন সজল কাঞ্জিলাল । খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন । খুবই সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ ছিলেন । আগে নাটক করতেন । নাচও করতেন । খুব ভালো ব্যবহার করতেন । যাঁকে ভালোবাসতেন, তাঁর সঙ্গে খুব আন্তরিক হয়ে উঠতেন তিনি । এই মানুষটাকে আমরা আর দেখতে পাব না । আমরা কষ্ট পাচ্ছি ।"

এই গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বিনীত সিনহা বলেন, "আমি কাঞ্জিলালদাকে আর্ট কলেজে মডেল হিসেবে পাইনি । আমি পাশ করে আসার পর উনি মডেল হিসেবে ঢুকেছিলেন । কিন্তু, কাঞ্জিলালদার সঙ্গে অন্য রকমের সম্পর্ক ছিল । অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে যেতাম । উনি ঘুরে ঘুরে লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন । অ্যাকাডেমির স্কেচ ক্লাবেও কাঞ্জিলালদা মডেল হতেন ।" তিনি বলেন, "উনি আর্টিস্ট না হয়েও আর্টের সঙ্গে সবদিক থেকে এমনভাবে জড়িত ছিলেন, কালকের ঘটনাটা শোনার পর থেকে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে যারা আছি, প্রচণ্ড কষ্টে আছি । মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি । আমাদের কাছে খুবই মর্মান্তিক ঘটনা ।"

কলকাতা, 15 জুলাই : কীভাবে সত্যি হয়ে গেল তিনটি শব্দ । "আর দেখা হবে না !" একথার শেষে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে পার্কস্ট্রিট মেট্রো রেলওয়ে স্টেশনের দিকে রওনা দিয়েছিলেন সজল কাঞ্জিলাল । গন্তব্য ছিল রবীন্দ্রসদন-নন্দন-অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বর । তারপর সব শেষ ! যদিও, আর দেখা না হওয়ার কথা তিনি বলেছিলেন অন্য প্রসঙ্গে । তবে, একথা যে এভাবে সত্যি হয়ে উঠবে, এখনও তা বিশ্বাস করতে পারছেন না গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক কোর্স সম্পূর্ণ করা অভিলাষ পাল । এখনও তিনি কার্যত বাকরুদ্ধ । এই কথাটি যে গতকাল সজলবাবু তাঁকেই বলেছিলেন ।


সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ সজলবাবুর বিচরণ ছিল শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন আঙিনায় । যার জেরে এসব ক্ষেত্রের বহু মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি । তবে, রবীন্দ্রসদন-নন্দন-অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বরে যতটা না তাঁর পরিচিতি ছিল, তার থেকে বেশি পরিচিতি ছিল লিটল ম্যাগাজিন, থিয়েটারের বই-ম্যাগাজিন-পোস্টার বিক্রেতা হিসেবে । আবার তিনি পরিচিত ছিলেন আর্ট কলেজের মডেল হিসেবে । কলকাতায় এই ধরনের পুরুষ মডেল হাতেগোনা কয়েকজন রয়েছেন । তবে, কলকাতার বিভিন্ন আর্ট কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষকদের বড় অংশের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ছিলেন একমাত্র পুরুষ মডেল । তাঁর এই স্থান আবার কবে পূরণ হবে, আদৌ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পড়ুয়া ও শিক্ষকরা ।

স্নাতক কোর্স সদ্য সম্পূর্ণ হয়েছে অভিলাষের । শনিবার স্নাতকোত্তর স্তরের জন্য ইন্টারভিউ ছিল গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে । এই কলেজেই স্নাতক হওয়ার বছরগুলিতে সজলবাবুর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর । তবে শুধুমাত্র তিনি একা নন । শুধুমাত্র সরকারি এই আর্ট কলেজেও নয় । আর্ট-এর পড়ুয়া, শিক্ষকদের প্রায় সকলের সঙ্গেই সজলবাবুর সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক ছিল । তিনি খোলা মনের মানুষ ছিলেন । তাঁর সঙ্গে পড়ুয়া, শিক্ষকদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো । এসব কারণেও সজলবাবু সেই অর্থে একজন প্রফেশনাল মডেল হয়ে উঠতে পারেননি । তবে, তিনি হয়ে উঠেছিলেন কলকাতার একমাত্র মডেল । আপাতত তাঁর বিকল্প অন্য আর কেউ নেই বলে জানিয়েছেন বহু পড়ুয়া, শিক্ষক ।

স্নাতকোত্তরের জন্য ইন্টারভিউতে অনেকেই সুযোগ পাবেন না‌ । অনেকে আবার কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবেন । অভিলাষের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই পড়ুয়া । শনিবার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে যখন বেরিয়ে যান সজলবাবু, তখন এই তিনজনের সঙ্গেই তাঁর শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ।‌ মাস্টার্সের জন্য তাঁদের কেউ যদি কলকাতার বাইরে চলে যান, সে ক্ষেত্রে সজলবাবুর সঙ্গে আবার কবে দেখা হতে পারে, তা কেউ-ই জানেন না । এই পরিস্থিতিতে সজলবাবু যখন গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন অভিলাষকে তিনি বলেন, "অভিলাষ, তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না, খুব খারাপ লাগছে ।" অভিলাষ বলেন, "আমি বললাম, দেখা হবে, নিশ্চয়ই দেখা হবে । আবার কলেজে তো আসব । উনি বললেন, ঠিক আছে । ভালো থেকো ।" এরপর আরও অনেক কথা হল তাঁদের মধ্যে । হাসি-ঠাট্টাও হল, যেমন হয় প্রতিদিন । অবশেষে, সাড়ে ছ'টা নাগাদ তিনি বেরিয়ে যান এই কলেজ থেকে ।

মিনিট 20 পর বাড়ি ফেরার জন্য পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে মেট্রো ধরতে যান অভিলাষ। তখন তিনি জানতে পারেন মেট্রো পরিষেবা বন্ধ রয়েছে । কিন্তু, ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে পারেননি । জানতে পারেননি, তাঁদের প্রিয় কাঞ্জিলালদার ওই আর দেখা না হওয়ার কথা, শেষে সত্যি হয়ে উঠবে এভাবে ! ঘটনার কথা কিছুই জানতেন না অভিলাষ । বাড়ি ফেরার পর তাঁর এক বন্ধু অনুভব মিত্র ফোন করেন তাঁকে । অভিলাষ জানতে পারেন তাঁদের কাঞ্জিলালদার শেষ সত্যি হয়ে ওঠা কথা, আর দেখা হবে না !

অভিলাষ বলেন, "জলজ্যান্ত মানুষ । কাঞ্জিলালদার সঙ্গে কথা হল । আমি শকড । বিশ্বাস করতে পারছি না ।" তিনি বলেন, "আমরা তিনজন ছিলাম । আমাদের উদ্দেশ্য করেই কথাটি বলেছিলেন । তবে, কাঞ্জিলালদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিল । কথাটি আমাকেই বলেছিলেন । উনি অন্য মানে নিয়েই বলেছিলেন । কারণ এই গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে আমার মাস্টার্স করা নাও হতে পারে । অন্য কলেজেও আবেদন করেছি । যেখানে সুযোগ পাব, সেখানেই ভরতি হব । এই কলেজে এত বছর ভালো সম্পর্কের মধ্যে আমরা ছিলাম । তখন কাঞ্জিলালদা বলেছিলেন, আর দেখা হবে না ।" তিনি বলেন, "মেট্রোতে যে কীভাবে, কী ঘটল, কিছুই বুঝতে পারছি না ।"

গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়া মানস দাস বলেন, "খুবই মর্মান্তিক ঘটনা । মেনে নেওয়া যায় না ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এ কথা বলতে পারি, গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে জুনিয়র থেকে সিনিয়রদের কাছে পুরুষ মডেল একমাত্র কাঞ্জিলালদাই ছিলেন । পুরুষ মডেল আরও আছেন । তবে, কাঞ্জিলালদাই ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ।" কলকাতার অন্য আর্ট কলেজেও যেতেন তিনি । তবে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে বেশিরভাগ সময় থাকতেন । এই কলেজের আনাচ-কানাচে সজলবাবুর বহু মূর্তি রয়েছে । তাঁকে দেখে বিভিন্ন সময় যে সব তৈরি করেছেন পড়ুয়ারা ।

খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন সজলবাবু । গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক হয়েছেন অনুভব মিত্র । তিনি বলেন, "আমাদের সকলের সঙ্গেই খোলামেলা সম্পর্ক ছিল কাঞ্জিলালদার । আমার এক বন্ধু অভিলাষ বলল, যদি পাঁচ মিনিট আটকে রাখতাম, তা হলে মেট্রোতে এই ঘটনা হত না । কাঞ্জিলালদা ওদের বলেছিল, ওরা চলে যাচ্ছে । ওদের সঙ্গে আর দেখা হবে না ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এ কথা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্ট হয় যে, এতটা খারাপ ঘটনা হতে পারে । সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না ।" তিনি আরও বলেন, "অনেক পুরুষ মডেল আছেন । কিন্তু, নিয়মিত মডেলের কথা যদি বলেন, তা হলে বলব, এই কাঞ্জিলালদাই শুরু এবং শেষ ।"


গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের অধ্যাপক মৃণালকান্তি গায়েন বলেন, "যতটা মনে পড়ছে, 2008-09 থেকে আমাদের গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে আসতেন সজল কাঞ্জিলাল । খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন । খুবই সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ ছিলেন । আগে নাটক করতেন । নাচও করতেন । খুব ভালো ব্যবহার করতেন । যাঁকে ভালোবাসতেন, তাঁর সঙ্গে খুব আন্তরিক হয়ে উঠতেন তিনি । এই মানুষটাকে আমরা আর দেখতে পাব না । আমরা কষ্ট পাচ্ছি ।"

এই গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বিনীত সিনহা বলেন, "আমি কাঞ্জিলালদাকে আর্ট কলেজে মডেল হিসেবে পাইনি । আমি পাশ করে আসার পর উনি মডেল হিসেবে ঢুকেছিলেন । কিন্তু, কাঞ্জিলালদার সঙ্গে অন্য রকমের সম্পর্ক ছিল । অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে যেতাম । উনি ঘুরে ঘুরে লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন । অ্যাকাডেমির স্কেচ ক্লাবেও কাঞ্জিলালদা মডেল হতেন ।" তিনি বলেন, "উনি আর্টিস্ট না হয়েও আর্টের সঙ্গে সবদিক থেকে এমনভাবে জড়িত ছিলেন, কালকের ঘটনাটা শোনার পর থেকে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে যারা আছি, প্রচণ্ড কষ্টে আছি । মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি । আমাদের কাছে খুবই মর্মান্তিক ঘটনা ।"

Intro:কলকাতা, ১৪ জুলাই: "আর দেখা হবে না!" এ কথার শেষে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে পার্কস্ট্রিট মেট্রো রেলওয়ে স্টেশনের দিকে শনিবার রওনা দিয়েছিলেন সজল কাঞ্জিলাল। গন্তব্য ছিল রবীন্দ্রসদন-নন্দন-অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বর। তার পর... সব শেষ! যদিও, আর দেখা না হওয়ার কথা তিনি বলেছিলেন অন্য প্রসঙ্গে। তবে, এ কথা যে এ ভাবে শেষ সত্যি হয়ে উঠবে, এখনও তা বিশ্বাস করতে পারছেন না গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক কোর্স সম্পূর্ণ করা অভিলাষ পাল। এখনও তিনি কার্যত বাক রুদ্ধ। এই কথাটি যে শনিবার সজলবাবু তাঁকেই বলেছিলেন!
Body:সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ সজলবাবুর বিচরণ ছিল শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন আঙিনায়। যার জেরে এ সব ক্ষেত্রের বহু মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি। তবে, রবীন্দ্রসদন-নন্দন-অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বরে যতটা না তাঁর পরিচিতি ছিল লিটল ম্যাগাজিন, থিয়েটারের বই-ম্যাগাজিন-পোস্টার বিক্রেতা হিসাবে। তার থেকেও অনেক বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি আর্ট কলেজের পুরুষ মডেল হিসাবে। কলকাতায় এই ধরনের পুরুষ মডেল হাতেগোনা কয়েকজন রয়েছেন। তবে, কলকাতার বিভিন্ন আর্ট কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষকদের বড় অংশের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ছিলেন একমাত্র পুরুষ মডেল। এবং, তাঁর এই স্থান আবার কবে পূরণ হবে, আদৌ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন বহু পড়ুয়া, শিক্ষক।

স্নাতক কোর্স সদ্য সম্পূর্ণ হয়েছে অভিলাষের। গতকাল, শনিবার মাস্টার্স-এর জন্য ইন্টারভিউ ছিল গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে। এই কলেজেই স্নাতক হওয়ার বছরগুলিতে সজলবাবুর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর। তবে শুধুমাত্র তিনি একা নন। শুধুমাত্র সরকারি এই আর্ট কলেজেও নয়। আর্ট-এর পড়ুয়া, শিক্ষকদের প্রায় সকলের সঙ্গেই সজলবাবুর সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক ছিল। তিনি খোলা মনের মানুষ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে পড়ুয়া, শিক্ষকদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। এ সব কারণেও সজলবাবু সেই অর্থে একজন প্রফেশনাল মডেল হয়ে উঠতে পারেননি। তবে, তিনি হয়ে উঠেছিলেন কলকাতার একমাত্র মডেল। আপাতত তাঁর বিকল্প অন্য আর কেউ নেই বলে জানিয়েছেন বহু পড়ুয়া, শিক্ষক।

মাস্টার্স-এর জন্য ইন্টারভিউতে অনেকেই সুযোগ পাবেন না‌। অনেকে আবার কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবেন। অভিলাষের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই পড়ুয়া। শনিবার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে যখন বেরিয়ে যান সজলবাবু, তখন এই তিনজনের সঙ্গেই তাঁর শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল।‌ এই কলেজ থেকেই স্নাতকের কোর্স সম্পূর্ণ করেছেন তাঁরা। স্নাতক হয়ে ওঠার এই দিনগুলিতে যেভাবে সজলবাবুর সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, সেখানে এর পরে এই কলেজে কে মাস্টার্সের জন্য সুযোগ পাবেন, কে কলকাতা ছেড়ে চলে যাবেন, এই বিষয়টিও রয়েছে। কারণ, তাঁদের কেউ যদি কলকাতার বাইরে চলে যান, সে ক্ষেত্রে সজলবাবুর সঙ্গে গতকাল, শনিবারের পরে তাঁর দেখা কবে হতে পারে, তা কেউ-ই জানেন না। এমনই পরিস্থিতিতে সজলবাবু যখন শনিবার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন অভিলাষকে তিনি বলেন, "অভিলাষ, তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না, খুব খারাপ লাগছে!" অভিলাষ বলেন, "আমি বললাম, দেখা হবে, নিশ্চয়ই দেখা হবে। আবার কলেজে তো আসব। উনি বললেন, ঠিক আছে। ভালো থেকো।" এর পরে আরও অনেক কথা হল তাঁদের মধ্যে। হাসি-ঠাট্টাও হল, যেমন হয় প্রতিদিন। অবশেষে, সাড়ে ছ'টে নাগাদ তিনি বেরিয়ে যান এই কলেজ থেকে।

মিনিট ২০ পরে শোভাবাজারে বাড়িতে ফেরার জন্য পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে মেট্রো ধরতে যান অভিলাষ। তখন তিনি জানতে পারেন মেট্রো পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু, ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে পারেননি। জানতে পারেনি, তাঁদের প্রিয় কাঞ্জিলালদার ওই আর দেখা না হওয়ার কথা, শেষ সত্যি হয়ে উঠবে এভাবে! অভিলাষ তখন আবার কলেজে ফেরেন অন্য বন্ধুদের সঙ্গে ফিরবেন বলে। কিছু সময় পরে আবারও খোঁজ নিয়েছিলেন মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে কি না। শেষ পর্যন্ত, হেঁটে ধর্মতলা পৌঁছন তিনি। এর পরে বাসে করে ফেরেন বাড়িতে। বাড়িতে তিনি যখন ফিরেছেন, তখন তাঁর এক বন্ধু অনুভব মিত্র ফোন করেন তাঁকে। এই বন্ধুর কাছেই অভিলাষ জানতে পারেন তাঁদের কাঞ্জিলালদার শেষ সত্যি হয়ে ওঠা কথা, আর দেখা হবে না!

অভিলাষ বলেন, "জলজ্যান্ত মানুষ। কাঞ্জিলালদার সঙ্গে কথা হল। আমি শকড। বিশ্বাস করতে পারছি না।" তিনি বলেন, "আমরা তিনজন ছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য করেই কথাটি বলেছিলেন। তবে, কাঞ্জিলালদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। কথাটি আমাকেই বলেছিলেন। উনি অন্য মানে নিয়েই বলেছিলেন। কারণ এই গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে আমার মাস্টার্স করা নাও হতে পারে। অন্য কলেজেও আবেদন করেছি। যেখানে সুযোগ পাব, সেখানেই ভর্তি হব। এই কলেজে এত বছর ভালো সম্পর্কের মধ্যে আমরা ছিলাম। এই সেন্সে কাঞ্জিলালদা বলেছিলেন, আর দেখা হবে না।" তিনি বলেন, "মেট্রোতে যে কীভাবে, কী ঘটল, কিছুই বুঝতে পারছি না।"

গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়া মানস দাস। তিনি বলেন, "খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। মেনে নেওয়া যায় না।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এ কথা বলতে পারি, গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে জুনিয়র থেকে সিনিয়রদের কাছে পুরুষ মডেল একমাত্র কাঞ্জিলালদাই ছিলেন। পুরুষ মডেল আরও আছেন। তবে, কাঞ্জিলালদাই ওয়ান অফ দ্য বেস্ট।" কলকাতার অন্য আর্ট কলেজেও যেতেন তিনি। তবে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে বেশিরভাগ সময় তিনি থাকতেন। এই কলেজের আনাচ-কানাচে সজলবাবুর বহু মূর্তি রয়েছে।তাঁকে দেখে বিভিন্ন সময় যে সব তৈরি করেছেন পড়ুয়ারা।

খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন সজলবাবু। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক হয়েছেন অনুভব মিত্র। তিনি বলেন, "আমাদের সকলের সঙ্গেই খোলামেলা সম্পর্ক ছিল কাঞ্জিলালদার।আমার এক বন্ধু অভিলাষ বলল, যদি পাঁচ মিনিট আটকে রাখতাম, তা হলে মেট্রোতে এই ঘটনা হত না। কাঞ্জিলালদা ওদের বলেছিল, ওরা চলে যাচ্ছে। ওদের সঙ্গে আর দেখা হবে না।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এ কথা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্ট হয় যে, এতটা খারাপ ঘটনা হতে পারে। সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না।" তিনি বলেন, "অনেক পুরুষ মডেল আছেন। কিন্তু, নিয়মিতর কথা যদি বলেন, তা হলে বলব, এই কাঞ্জিলালদাই শুরু এবং শেষ।"
Conclusion:গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের এক অধ্যাপক মৃণালকান্তি গায়েন বলেন, "যতটা মনে পড়ছে, ২০০৮-০৯ থেকে আমাদের গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে আসতেন সজল কাঞ্জিলাল। খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। খুবই সংস্কৃতিকমনস্ক মানুষ ছিলেন। আগে নাটক করতেন। নাচও করতেন। খুব ভালো ব্যবহার করতেন। যাঁকে ভালোবাসতেন, তাঁর সঙ্গে খুব আন্তরিক হয়ে উঠতেন তিনি। এই মানুষটাকে আমরা আর দেখতে পাব না। আমরা কষ্ট পাচ্ছি।" এই গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বিনীত সিনহা বলেন, "আমি কাঞ্জিলালদাকে আর্ট কলেজে মডেল হিসাবে পাইনি। আমি পাশ করে আসার পরে উনি মডেল হিসাবে ঢুকেছিলেন। কিন্তু, কাঞ্জিলালদার সঙ্গে অন্য রকমের সম্পর্ক ছিল। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে যেতাম। উনি ঘুরে ঘুরে লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন। অ্যাকাডেমির স্কেচ ক্লাবেও কাঞ্জিলালদা মডেল হতেন।" তিনি বলেন, "উনি আর্টিস্ট না হয়েও আর্টের সঙ্গে সবদিক থেকে এমনভাবে জড়িত ছিলেন, কালকের ঘটনাটা শোনার পর থেকে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে যারা আছি, প্রচণ্ড কষ্টে আছি। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। আমাদের কাছে খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।" আর্ট কলেজে যাঁরা মডেল হন, তাঁদের জন্য পার্মানেন্ট পারিশ্রমিক চালুর দাবি করেছেন অনেক পড়ুয়া।

_______

ছবি:
wb_kol_01a_sajal_kanjilal_model_pic_7203421





Last Updated : Jul 15, 2019, 6:52 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.