কলকাতা, 20 মে: আজ সিবিআইয়ের মুখোমুখি হবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় শনিবার তাঁকে জেরা করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ তবে তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে কোনও দলীয় কর্মী-সমর্থক নিজাম প্যালেসে ঢুকতে পারবেন না ৷ তার জন্য কলকাতায় সিবিআইয়ের সদর দফতরের বাইরে ভবানীপুর থানা এবং টালিগঞ্জ থানার পুলিশ থাকবে ৷ কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশও মোতায়েন থাকবে । অভিষেকের নিজাম প্যালেসে আসার সময় কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না-হয়, তার জন্য এলাকা ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরার বন্দোবস্ত করছে পুলিশ ৷
শুক্রবার রাত থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে নিজাম প্যালেসের ভিতর ও বাইরের এলাকা ৷ কার্যালয়ের অন্দরমহলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন সিআরপিএফ-এর জওয়ানরা ৷ স্থানীয় থানার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ সিবিআই কার্যালয়ের বাইরেও থাকছে দু'জন সিআরপিএফ জওয়ান ৷ পাশাপাশি নিজাম প্যালেসের ভিতরে প্রবেশের রাস্তায় একটি অস্থায়ী চেকপোস্ট বানিয়েছে সিআরপিএফ ৷ মূল ভবনের মধ্যে প্রবেশের আগে যে কোনও ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুমতি নিতে হবে ৷
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই জেরার নির্দেশ বহাল রাখেন ৷ এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সেদিনই ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেন তৃণমূল নেতার আইনজীবীরা ৷ শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চ সেই আপিল শুনতে অস্বীকার করে ৷ বেঞ্চ জানায়, সোমবার থেকে গ্রীষ্ণকালীন ছুটি শুরু হওয়ায় হাইকোর্ট বন্ধ থাকবে ৷ এমতাবস্থায় নতুন মামলা শোনা সম্ভব নয়। তাই অভিষেকের আইনজীবীকে অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলা দায়ের করতে বলা হয় ৷
এই অবস্থায় শনি-রবি দু'দিন সিবিআই-ইডি জেরা এড়াতে শুক্রবারই তৃণমূল সাংসদের আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জেরা থেকে সুরক্ষাকবচ পাওয়ার আবেদন জানান আইনজীবীরা ৷ তবে প্রধান বিচারপতিও সাফ জানিয়ে দেন, মামলা না শুনে তাঁর পক্ষে কোনও নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয় ৷ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদন জানাতে পারেন ৷ আর নয়ত গ্রীষ্মের ছুটির শেষে আদালত খুললে আবেদন জানাতে পারেন অভিষেক ৷ এরপরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় জেরা করতে চেয়ে তলব করে সিবিআই ৷
এই সমন পাওয়ার সময় অভিষেক বাঁকুড়ার সোনামুখীতে ছিলেন ৷ সেখানে তিনি তৃণমূলের নব জোয়ার কর্মসূচির অনুষ্ঠান করছিলেন ৷ সিবিআই-এর তলব পাওয়ার পর তড়িঘড়ি শুক্রবার রাতে কলকাতায় ফিরে আসেন ৷ তার আগে বিকেলেই সামাজিক মাধ্যমে তিনি জানান, জেরার মুখোমুখি হবেন। সেই মতো কর্মসূচি বদল করে রাতে শহরে ফেরেন অভিষেক।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার কুন্তল ঘোষের অভিযোগ এবং তার আগে মার্চের শেষে অভিষেকের একটি মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় ৷ তারপরই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে জেরা করা হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন ৷ ঘটনার সূত্রপাত মার্চে তৃণমূলের যুব সমাবেশে ৷ সেখানে অভিষেক অভিযোগ করেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে জড়ানোর চক্রান্ত চলছে ৷ এই মামলায় সিবিআই-ইডি হেফাজতে থাকা অভিযুক্তদের তাঁর নাম উল্লেখ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে ৷
এই একই অভিযোগ করেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হুগলির প্রাক্তন তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ ৷ তিনিও হেস্টিংস থানা এবং আলিপুর আদালতের বিচারকের কাছে এই মর্মে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দেন ৷ ব্যাংকশাল কোর্ট এবং আলিপুর আদালতেও তিনি জানান, ইডি তাঁকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে ৷ অভিষেক ও কুন্তলের অভিযোগে মিল পাওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অভিষেককে জেরা করার কথা জানিয়েছিলেন ৷ পরে এজলাস বদল হয়ে মামলা অমৃতা সিনহার বেঞ্চে আসে। সেখানেও একই রায় বহাল থাকে।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে অভিষেককে ডাকতে পারে ইডি-সিবিআই, কুন্তলের চিঠিতে নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের