কলকাতা, 6 জুলাই: পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যপালের ভূমিকাকে চরম কটাক্ষ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি সরাসরি দাবি তুললেন সিভি আনন্দ বোসের মতো দক্ষ, যোগ্য, গণতন্ত্রের প্রতি আগাধ প্রজ্ঞা থাকা মানুষের বাংলার থেকে বেশি প্রয়োজন মণিপুরের । অবিলম্বে তাঁকে মণিপুরে পাঠানো হোক ৷
নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব থেকেই সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে । নির্বাচনী হিংসা নিয়ে বারবার কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি । কখনও ছুটে গিয়েছেন ভাঙড়, কখনও ক্যানিং, আবার কখনও তাঁর গন্তব্য হয়েছে সুদূর কোচবিহার । বারবারই তিনি নির্বাচন পর্বে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, হিংসাকে বরদাস্ত নয় । যেখানেই হিংসা হবে তিনি পাশে দাঁড়াবেন ।
যদিও রাজ্যের শাসকদলকে এই নিয়ে বারবার পালটা আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে । শাসক দলের তরফ থেকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, রাজ্যপাল রামফ্রন্টের চেয়ারম্যান । এ দিন খুব স্বাভাবিকভাবেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রচারের শেষ পর্বে হাতের কাছে পেয়ে রাজ্যপাল নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা । জবাবে তাঁকে আপন ধর্ম স্মরণ করালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক । স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেন, "উনি কনস্টিটিউশনাল কাস্টোডিয়ান । 100 দিনের কাজে বাংলার মানুষ বঞ্চিত । এই আইন সংসদের অভ্যন্তরে পাশ হয়েছে । আইন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার 100 দিনের টাকা আটকে রাখতে পারে না । রাজ্যপালকে কি একবারও দেখা গিয়েছে দিল্লিতে গিয়ে বলতে, বাংলার মানুষের টাকা আটকে রয়েছে । আপনারা ব্যবস্থা নিন । আপনারা রাজ্যপালকে কি দেখেছেন, এই যে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বাংলার 80 জন মারা গেল তাঁদের কারও বাড়ি গিয়ে তিনি দেখা করেছেন ! কারণ এই জায়গাগুলিতে নির্বাচনের ফায়দা তোলার কোনও জায়গা ছিল না ।"
আরও পড়ুন: রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু, দাবি অভিষেকের
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, এখানে তিনি নির্বাচনের ফায়দা তুলতে চাইছেন । দিল্লি সরকারের নির্দেশে কাজ করছেন রাজ্যপাল । এ ক্ষেত্রে দিল্লি থেকে তাঁর কাছে যে নির্দেশ আসছে, তিনি চেষ্টা করছেন তাঁর সীমাবদ্ধ ক্ষমতা অনুযায়ী সেই আদেশগুলি যতটা সম্ভব পালন করার । এ দিন রাজ্যপালের তৈরি করা পিস রুম নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা ঘটল, তখন রাজ্যপাল কেন পিস রুম খুললেন না ।
পরে মণিপুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন অভিষেক । তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে । আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কমিশন কাজ করছে । রাজ্যপাল বলছেন, নির্বাচন কমিশনের হাতে রক্ত লেগে আছে । তাহলে মণিপুরে যে 300 জন মারা গেলেন, তার রক্ত কার হাতে লেগে আছে । এ দিন রাজ্যপালের উদ্দেশে চরম কটাক্ষ শোনা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের গলায় । তাঁর কথায়, "আমি মনে করি রাজ্যপাল যথেষ্ট জ্ঞানী, বুদ্ধিমান এবং যোগ্য মানুষ । আর কী বলা উচিত কী বলা উচিত নয়, কী করা উচিত বা কী নয় - তা নিয়ে আমি মন্তব্য করব না । তাঁকে পরামর্শ দেওয়া অবশ্যই আমার জন্য সঠিক কাজ হবে না । আমি বরং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করছি, এটা সঠিক সময়, মণিপুরে আমাদের রাজ্যের রাজ্যপালের এই দক্ষতা এবং এই প্রজ্ঞাকে ব্যবহার করার । তাঁকে মনিপুরে পাঠানো হোক । মানুষ ছাড়া এত বুদ্ধিমত্তা, এত জ্ঞান, গণতন্ত্র সম্পর্কে যাঁর এত প্রজ্ঞা, তাঁর মতো প্রতিভার বাংলার থেকেও মণিপুরের ডবল ইঞ্জিন সরকারের অনেক বেশি প্রয়োজন ।"