কলকাতা, 13 এপ্রিল: সিবিআই ইডি এখন সবে কোমর পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে । আশা করি শীঘ্রই তারা মাথা খুঁজে পাবে । বৃহস্পতিবার এমনটাই বললেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ কুন্তল ঘোষের চিঠির প্রসঙ্গ খোলসা করতে শীঘ্রই তাঁকে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় । তিনি বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে বলেন, এ বছরের 29 মার্চ তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি জনসভা থেকে মন্তব্য করেন, "তাঁর নাম বলাতে জোর করা হচ্ছে ।" এই বক্তব্যের সঙ্গে কুন্তল ঘোষের চিঠির বক্তব্যের মিল রয়েছে । সেই জন্য অভিষেক ও কুন্তলকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে আদালত । সিবিআই-ইডির শীঘ্রই সেই জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার বলে মনে করছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় উল্লেখ করেন, "সিবিআই-ইডি এখন সবে কোমর পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে । আশা করি শীঘ্রই তারা মাথা খুঁজে পাবে । যদি না-পারে তাহলে আদালত বাধ্য হবে কঠোর নির্দেশ দিতে ।" বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, সিবিআই-ইডি এখনও পর্যন্ত দুর্নীতির কোমরের উপরে উঠতে পারেনি । তিনি বলেন, "দালালরা তো কমিশন খেয়েছে । আসল টাকাটা গেল কোথায় ?" কুন্তল ঘোষের চিঠির সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখার পর এটা সম্পূর্ণ বানানো বলেই মনে হয়েছে বিচারপতির । 'অত্যন্ত কাঁচা হাতে বানানো গল্প' বলে এদিন আদালতের নির্দেশে উল্লেখ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ।
সিবিআই-ইডির কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে একইরকম অভিযোগ হয়েছে কি না জানতে চান এদিন বিচারপতি । তিনি বলেন, "যেখানে তাদের নামে এফআইআর দায়ের হয়েছে । জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ?" সিবিআই আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান, কপিল রাজ (জয়েন্ট ডিরেক্টর) উমেশ কুমার (এসপি ), সুশান্ত ভট্টাচার্যদের বিরুদ্ধে লালন শেখ মৃত্যু মামলায় এফআইয়ার দায়ের করেছিল পুলিশ । কুন্তল ঘোষের চিঠি আসলে তদন্তকারী অফিসারদেরকে ভয় দেখানোর চেষ্টা বলে উল্লেখ করেন বিচারপতি । তারপর তিনি একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন ৷ সেগুলি হল-
- আজ থেকে আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনও সিবিআই অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না থানায় । যারা শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্ত করছে ।
- কুন্তল ঘোষের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোনও এফআইআর বা আদেশ কার্যকর হবে না আদালতের অনুমতি ছাড়া ।
- ইডি ও সিবিআই রিপোর্ট ফাইল করবে 20 এপ্রিল এই বিষয়ে তদন্ত করে । প্রয়োজনে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করতে হবে ।
- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য এই তদন্তের ব্যাপারে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
প্রেসিডেন্সি সংশোধনগারের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি । 21 মার্চ 2023 থেকে 6 এপ্রিল 2023 পর্যন্ত, এই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ রেজিস্টার ও আদালতে জমা দিতে হবে । কারণ কুন্তল চিঠি লিখেছিলেন 30 মার্চ ৷ 20 এপ্রিল 12টায় ফের শুনানি মামলার ।
আরও পড়ুন: কুন্তল ঘোষের লেখা চিঠি নিয়ে কোনও আদেশ বা এফআইআর কার্যকর হবে না
সিবিআইয়ের আইনজীবীরা নিম্ন আদালতে এমন সওয়াল করছে যাতে কিছু লোক জামিন পেয়ে যায় । অযোগ্য আইনজীবীদের সিবিআই নিম্ন আদালতে নিযুক্ত রেখেছে । অবিলম্বে তাদের বাদ দিতে বলুন । সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যকে আদালতে বললেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ।
এদিন শুনানিতে সম্রাট গোস্বামী ইডির তরফে জানান, 21 জানুয়ারি কুন্তল গ্রেফতার হয় ইডির হাতে । তাঁকে বিশেষ আদালতে হাজির করা হয় । প্রথমে 14 দিনের হেফাজতে ছিলেন । 3 ফেব্রুয়ারি তাঁর ইডির হেফাজত শেষ হয় ৷ তারপর তাঁকে 17 ফেব্রুয়ারি, 3 মার্চ পরে 17 মার্চ 2023 দফায় দফায় বিচারবিভাগীয় হেফাজত দেওয়া হয় । তিনি এসএসকেএমে চিকিৎসার জন্য আবেদন করলেও ইডি অফিসারদের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ ছিল না । 30 মার্চ প্রেসিডেন্সি জেল সুপারের মাধ্যমে হেস্টিংস থানায় অভিযোগ করে কুন্তল ঘোষ ।
মামলাকারীদের তরফে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "যেভাবে চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'আমি সজ্ঞানে, নির্ভয়ে জানাচ্ছি' বলে উল্লেখ করা, তা পরিকল্পনা ছাড়া সম্ভব নয় । ইডির ডেপুটি ডিরেক্টর তাঁকে ভয় দেখাতে পারে, জেল খাটাতে পারে, তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করতে পারেন ৷ সেই ভয়ে তিনি বলেননি ।"
কুন্তল চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম যাতে বলি তাঁর জন্য নানারকমভাবে ভয় দেখানো হয়েছিল ।" বিজয়কুমার নামে এক অফিসারের বিরুদ্ধে এই ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছেন তিনি । কুন্তল ও তাঁর মাকে অপমান করা হয়েছে । বউকে গ্রেফতার করার হুমকি দেওয়া হয় । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বললে রাজসাক্ষী করে তিন মাসের মধ্যে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও ইডির অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন চিঠিতে কুন্তল । এই চিঠির ফরেনসিক করা হোক বলে আর্জি জানান বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ।