কলকাতা, 8 নভেম্বর: রবীন্দ্র সরোবর ঘিরে বাঙালির আবেগের অন্ত নেই । শহর কলকাতাকে যে কয়েকটি জায়গার জন্য দেশ তথা প্রায় গোটা বিশ্ব চেনে তার অন্যতম কলকাতার এই লেক (Dengue Situation in Rabindra Sarobar) । শুধু তাই নয়, এটা পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র জাতীয় লেকও বটে । কিন্তু গর্বের এই জলাশয় এখন স্থানীয় মানুষের কাছে ত্রাসের কারণ হয়ে উঠেছে। মর্নিং এবং ইভিনিং ওয়াকদের শরীরচর্চার পীঠস্থান এখন ডেঙ্গির আঁতুড়ঘরে (New hotspot for Dengue) পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ ! লেকের অতি পরিচিত ডান্সিং ফাউন্টেনটিও যেন 'মশার মুক্তাঞ্চল' । সবথেকে বড় কথা, স্থানীয়দের একটা বড় অংশের দাবি সবকিছু দেখেও প্রশাসন নীরব !
দিনে দিনে শহর সহ রাজ্যের সর্বত্র বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ (Dengue is a fresh threat for Kolkata)। ইতিমধ্যেই মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েকজনের । রাজ্যের একমাত্র জাতীয় লেক রবীন্দ্র সরোবরের একদা সক্রিয় ডান্সিং ফাউন্টেনের পারে বহু কাল ধরে আটকে রয়েছে একটি ডিঙি নৌকা। পরিষ্কারের অভাবে ওই ডিঙি নৌকায় জল জমেছে। একই অবস্থা অনেকটা জায়গা জুড়ে ভেসে থাকা ফোয়ারাটিরও। সর্বত্রই কিলবিল করছে মশার লার্ভা।
মর্নিং ওয়াকাররা জানিয়েছেন তথৈবচ অবস্থা সরোবরের লিলি পুল ও সাফারি পার্কের কয়েকটি অংশেরও। টায়ারের মধ্যে ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্র ও জমে থাকা জল পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল এরমধ্যে। সেখানেও মিলেছে লার্ভা । তাছাড়া জলের বোতল এবং অন্য খাবার নিয়ে লেকে বেড়াতে আসা নাগরিকদের একাংশও সেসব এখানেই ফেলে যান অবলীলায় । সেখানেও মশারও অবাধ বিচরণ ।
আরও পড়ুন: বাতাসে হিমেল পরশ, শীতের দেখা কবে ?
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হবেন এই ভয়ে অনেকেই লেকে হাঁটতে আসা আপাতত বন্ধ রেখেছেন । ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পরিস্থিতি ? রবীন্দ্র সরোবরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত রুখতে ঠিক কী করছে প্রশাসন ? এই সব জরুরি প্রশ্নের জবাব পেতে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (KMDA)-এর প্রজেক্ট ডিরেক্টর নন্দিনী ঘোষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয় । কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। ইটিভি ভারতের তরফে তাঁর সঙ্গে কথা বলার উপযুক্ত সময় জানতে চেয়ে পাঠানো মেসেজেরও উত্তর প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আসেনি ।
বহু বছর ধরে এখানে হাঁটতে আসেন পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ । তিনি বলেন, " এই বিষয়টি লেকের দেখাশোনা যাঁরা করেন তাঁদের জানিয়েছি। তারপর কোনও কাজ না হওয়ায় আমরা কেএমডিএ কে বিষয়টি জানাই। কিন্তু তাতও কোনও কাজ হয়নি।" উৎসবের মরশুম শুরুর খানিকটা আগে থেকেই ডেঙ্গি ঘিরে ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে । বাড়িতে যাতে জল জমিয়ে রাখা না হয় তা নিশ্চিত করতে মাইকে লাগাতার প্রচার করছে প্রশাসন । শহরের মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমও (Mayor of Kolkata Municipal Corporation Firhad Hakim) বারবার জোর দিচ্ছেন নাগরিক সচেতনতায় । কিন্তু এরইমধ্যে কলকাতার গর্ব রবীন্দ্র সরোবর কী করে মশার মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে এবং তা নিয়ে প্রশাসনিক উদাসিনতার অভিযোগই বা কেন উঠবে সেটা সত্যিই চিন্তার বিষয়।