কলকাতা, 6 জুন: তিনবছর আগে যেটা ছিল আবর্জনার স্তুপ, সেখানেই আজ গড়ে উঠেছে মাদার আর্থ থিম পার্ক । গাঙ্গুলী বাগানের 4 নম্বর বিদ্যাসাগর কলোনির বাসিন্দা পরিমল দে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ময়লা আবর্জনার স্তুপ পরিষ্কার করে গড়ে তুলেছেন একটি নেচার পার্ক । দেড় বিঘে এই জমির উপরে এই পার্ক তৈরি করেছেন তিনি । পরিবেশ দিবসের দিন সেই পার্কেই 300টি বৃক্ষরোপণ করা হল । এছাড়াও বিলি করা হল চারাগাছ ৷
এই পার্কে বর্তমানে প্রায় কুড়িটি বড় গাছ রয়েছে । আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও নানা ধরনের ফুল গাছ রয়েছে ৷ সেই সঙ্গেই রয়েছে একটি পুকুর । পুকুরের উপর দিয়েই রয়েছে বাঁশের সেতু। পুকুরে সাঁতার বেড়াচ্ছে একাধিক হাস। তাক লাগানো এই কর্মকাণ্ড একাই করেছেন পরিমল দে। নিজের বাড়ি শুধু নয় নিজের এলাকায় সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলতেই এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন তিনি। শুধু পার্ক তৈরি করাই নয়, নিয়মিত ব্যক্তিগত খরচে পার্কটির দেখভাল করেন পরিমল দে ।
বছর তিনেক আগেও এই জায়গায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ হিসেবে পড়েছিল । আবর্জনার স্তূপের পাশ দিয়ে যাতায়াত করার সময় দুর্গন্ধে এলাকাবাসী নাকে কাপড় চাপা দিতে হত । আজ সেই জায়গা ফুলের গন্ধে সুরভিত । দীর্ঘদিন ধরে এই জমিটি খালি পড়েছিল । ফলে খালি জমিতে আবর্জনা জমতে থাকে । পরিমল দে জানিয়েছেন, এই খালি জমিতে পার্ক তৈরি করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি । সরকার থেকে অনুমতি নেওয়ার পর এখানে ব্যক্তিগত খরচে পার্ক গড়ে তুলেছেন । খরচ হয়েছে কুড়ি লাখ টাকার বেশি ৷ সত্তরোর্ধ্ব পরিমল দে বলেন, "সারাজীবন ব্যবসার কাজে বাইরে কাটিয়েছি । এখন নিজের শহরে থাকি । এই শহরের জন্য কিছু করতে হবে, আগামী প্রজন্মের কিছু দিয়ে যেতে হবে ৷ এই চিন্তা থেকেই পার্ক তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম । ঘূর্ণিঝড় আমফানের দাপটে শহর প্রচুর গাছ উপড়ে পড়েছে । ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে । অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে গেলে অনেক বেশি করে গাছ লাগাতে হবে ৷ তবেই আমরা আগামী প্রজন্মকে সুস্থ জীবন দিতে পারব । তাই পরিবেশ দিবসের দিন আমরা গাছ লাগানোর পাশাপাশি চারাগাছ বিতরণ করেছি ।"
পরিমল দে আরও বলেন, "ছোটবেলায় পড়েছি বিশ্বকে রক্ষা করতে গাছ লাগাতে হয় । তাই বৃক্ষরোপণে উদ্যোগী হই আমি । ধীরে ধীরে এই উদ্যানটিকে সাজিয়ে তুলেছি । এখানে শিশুরা আসে নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে । পার্কে প্রবেশের জন্য কোনও প্রবেশমূল্য লাগে না ৷ যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন গাছ লাগিয়ে যাব ।"