কলকাতা, 18 জুন : কলকাতায় একদিনে আত্মহত্যা করলেন সাতজন । এই ঘটনাকে বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারের কুপ্রভাব বলেই মনে করছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বিহেভিয়ারাল সায়েন্সের প্রধান ডঃ কেদার বন্দ্যোপাধ্যায় ।
বুধবার সকাল সাড়ে 8 টা নাগাদ টালিগঞ্জ থানায় এক ব্যক্তির আত্মহত্যার খবর আসে । এরপর পুলিশ হাজরা রোড এলাকা থেকে মোহন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে । ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁকে । MR বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় । তার আগে সকাল 8টা নাগাদ পাটুলি থানা এলাকায় বৈষ্ণবঘাটা টাউনশিপে উদ্ধার হয় 55 বছরের নরেশ সাহার দেহ । তাঁকেও ঝুলন্ত অবস্থাতেই উদ্ধার করে পাটুলি থানা পুলিশ । পরের ঘটনা সকাল সাড়ে 9টার । বেলেঘাটা থানা এলাকার কালীতলা বোস লেনে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় 30 বছরের ইন্দ্রনীল কর্মকারের দেহ । এরপর দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডে ঘটে মর্মান্তিক ঘটনা । অভিযোগ, সৎ মায়ের অত্যাচারের জেরে 10 বছরের সানি মণ্ডল জানালার সঙ্গে গলায় গামছা বেঁধে ঝুলে পড়ে । স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাঁর সৎ মা পরিচারিকার কাজ করেন । গতকাল তেমনই কাজে গেছিলেন । সানিকে SSKM হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় । পরের ঘটনা বিকেল সাড়ে 6 টায় । রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সরণিতে উদ্ধার হয় 19 বছরের রোহিত গুপ্তর ঝুলন্ত দেহ । বাঘাযতীন স্টেট জেনেরাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় । তার আগে দুপুর 2টো নাগাদ 19 বছরের তপন দাস গলায় শাড়ি জড়িয়ে আত্মহত্যা করে । মুচিপাড়া থানার পুলিশ APC বড়াল রোডের বাড়ি থেকে তার দেহ উদ্ধার করে । এই প্রতিটি ঘটনাতেই মানসিক অবসাদের বিষয়টি উঠে এসেছে ।
কিন্তু কেন একই দিনে শহরে এতগুলি আত্মহত্যার ঘটনা?
এই প্রসঙ্গে কেদার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "দেশে অনেক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে । কিন্তু অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের ঘটনা নিয়ে যেভাবে প্রচার চলছে তার কুপ্রভাব পড়েছে যারা মানসিক অবসাদে ভুগছিল তাদের মধ্যে । টেলিভিশন চ্যানেল, খবরের কাগজ কিংবা সোশাল মিডিয়া খুললেই একই খবর । আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, সোশাল মিডিয়ায় কয়েকজন বলছেন মানসিক অবসাদে ভুগলে আমার সঙ্গে কথা বলুন । জানেন না নিজেদের অজান্তেই আত্মহত্যার প্রচার করে চলেছেন তাঁরা । একটা মানসিক অবসাদে ভোগা রোগীকে কথা বলাতে হলে নির্দিষ্ট ট্রেনিং দরকার হয় । তা না করে একটা রোগের অদ্ভুতভাবে প্রচার চলছে । এটা অবিলম্বে বন্ধ না হলে আরও অনেক বেশি ঘটনা ঘটবে । দেখুন এমনিতেই লকডাউনের জেরে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব খারাপ । মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার কবে রেজাল্ট বেরোবে জানে না । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হয়নি । স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা জানে না কবে তারা আবার পড়াশোনা শুরু করবে । কাজ হারাচ্ছে অনেকে । সব মিলিয়ে মানসিক অবসাদ বাড়ছে । আর সেই সময় একটি আত্মহত্যার ঘটনার বহুল প্রচারের কুফল আজ দেখল কলকাতা । "