কলকাতা, 20 মে : জামিন পেলেন না রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতা ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় ৷ গতকাল রাতেো জেল হেফাজতে থাকতে হয়েছে তাঁদের ৷ আজ দুপুর দুটোয় ফের মামলার শুনানি ৷
গতকাল দুপুর দুটো নাগাদ কলকাতা হাইকোর্টে নারদ মামলার শুনানি শুরু হয় ৷ চার নেতার জামিনে স্থগিতাদেশের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি ছিল ৷ শুনানির শুরুতেই বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সাধারণ মানুষের প্রবল চাপের অভিযোগ ছিল বলে আদালত জামিনের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে । অভিযুক্তরা জামিন পাবেন কি না তা মামলা শোনার পরই ঠিক হতে পারে ৷" তৃণমূল নেতাদের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, "এই করোনা পরিস্থিতিতে শুধু শুধু এদের জেলে রাখার কি প্রয়োজন ছিল ? অভিযুক্তদের কিছু না জানিয়ে মামলার শুনানি হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে । অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই জামিনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে ।"
এই প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনেরাল তুষার মেহতা বলেন, "কিন্তু এরা তো এখন হাসপাতালে রয়েছেন ৷ এখানে সোমবার যা হয়েছে তা নজিরবিহীন । সিবিআই অফিসারদের হুমকি দেওয়া হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী নিজে সিবিআই অফিসে গিয়ে কাজে বাধা দিয়েছেন । চাপ সৃষ্টি করেছেন ।" এর প্রত্যুত্তরে অভিষেক মনু সিংভি বলেন, "ঝামেলা করা হয়নি ৷ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিবাদ করেছে মানুষ । গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই প্রতিবাদ হয়েছে । আসলে সিবিআই যেকোনও প্রকারে এদের গ্রেফতার করতে চাইছে ।" তিনি বলেন, "চার্জশিট দেওয়া হয়ে গিয়েছে । সিবিআইয়ের সঙ্গে এরা অসহযোগিতা করেছে এমন অভিযোগ কি রয়েছে ?"
আরও পড়ুন : শুভেন্দু সহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিচ্ছে সিবিআই
"কোভিড পরিস্থিতিতে অপ্রয়োজনীয় গ্রেফতার না করার নির্দেশ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ৷ এরা প্রত্যেকেই বয়স্ক । এদের এখন গ্রেফতার করার কি প্রয়োজন ছিল ?" প্রশ্ন ছিল অভিষেক মনু সিংভির । তখন হাইকোর্টের তরফে প্রশ্ন করা হয়, মুখ্যমন্ত্রী কি প্রতিবাদ করতে পারেন ? সিংভি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী শান্তিপূর্ণভাবেই প্রতিবাদ করেছেন । মুখ্যমন্ত্রী সেদিন সিবিআই অফিসে গিয়েছিলেন তাঁর দলের কর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা ব্যক্ত করার জন্য ৷ এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতির যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ৷ সাতবছর আগের একটি মামলায় হঠাৎ করে এই সমস্ত জননেতাদের গ্রেফতার তাদের সমর্থকরা সহজে নিতে পারেনি ৷ তাই ওইদিন নিজাম প্যালেসের সামনে তারা ভিড় করেছিল ৷ কিন্তু অভিযুক্তদের বক্তব্য না শুনেই কলকাতা হাইকোর্ট তাদের জমিনের উপর যে স্থগিতদেশ দেওয়া হয়েছে তা ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত স্বাভাবিক ন্যায়ের পরিপন্থী ৷" যা শুনে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, "ইট, পাথর ছোড়াটাও কি শান্তিপূর্ণ ?"
সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনেরাল আবার বলেন, "নিম্ন আদালতের বিচারকের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে । সিবিআই অফিসারদের কেস ডায়েরি পেশ করতে দেওয়া হয়নি আদালতে ।" তখন রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনেরাল কিশোর দত্ত বলেন, "আমরা অফিসারদের কাজের সুবিধার জন্য গ্রিন করিডর করে দেওয়ার কথা বলেছিলাম ৷ সেই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি ।" পাল্টা সলিসিটর জেনেরাল বলেন, "ইচ্ছাকৃতভাবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হয়েছিল । আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতির জন্য অভিযুক্তদের ডাক্তারি পরীক্ষার সুযোগ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ৷ কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল এই মামলার তদন্ত করতে । এখন সত্যটা যাতে সামনে না আসে তার চেষ্টা করা হচ্ছে ।" মনু সিংভি বলেন, চাপ সৃষ্টি করা হয়নি । তাঁরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন । অভিযুক্তদের কোনও নোটিস না দিয়ে কীভাবে রাজ্যপালের কাছে অনুমতি চাওয়া হল ? 2014 সালের মামলায় হঠাৎ করে এখন গ্রেফতারের কী প্রয়োজন পড়ল ?
আরও পড়ুন : নেগেটিভ এল ফিরহাদের কোভিড রিপোর্ট
এই পরিস্থিতিতে আজ দুপুর দুটোর সময় এই মামলার ফের শুনানি হবে ৷ জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ । গতরাতেও জেল হেফাজতে থাকতে হল চার নেতা মন্ত্রীকে ৷
সোমবার সকালে নারদ মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন রাজ্যের তিন বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় । ওইদিন সন্ধ্যায় কলকাতা নগদ দায়রা আদালতের বিশেষ সিবিআই আদালত এদের জামিন মঞ্জুর করে ৷ যদিও সেদিন রাতেই কলকাতা হাইকোর্ট জামিনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে ।