কালিম্পং , 8 মার্চ : কেউ ডাকেন জলপরি নামে । কেউ ডাকেন আয়রন লেডি । আবার কারও কাছে তিনি তিস্তাকন্যা । মানুষের সেবাই তাঁর কর্ম । মানুষের সেবাই তাঁর ধর্ম । আর তাই তিনি নিজের জীবনকে বাজি রেখেছেন বারবার । বাঁচিয়েছেন বহু প্রাণ । তিনি হলেন কালিম্পং জেলার শান্তি রাই ।
নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। শান্তির ছোটোবেলা কেটেছে তিস্তার বুকে । কালিম্পং জেলার বাংলা -সিকিম লাগোয়া তারখোলা নামক ছোটো গ্রামে তাঁর বাড়ি । পেশায় তিনি 10 নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া GTA-এর পর্যটন বিভাগের লেডি রিভার গাইড । পর্যটকদের র্যাফ্টিংয়ে দিশা দেখানো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা করাই তাঁর প্রধান কাজ । কিন্তু, তাঁর অন্য একটি স্বেচ্ছাধর্মী কাজও রয়েছে । খরস্রোতা তিস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে কোনওভাবে কেউ তিস্তার বুকে তলিয়ে গেলে ত্রাতার ভূমিকায় পাওয়া যায় শান্তি রাইকে । আজ পর্যন্ত তিস্তায় দুর্ঘটনার শিকার অন্তত 50 জনের দেহ উদ্ধার করেছেন তিনি । বাঁচিয়েছেন কয়েকশো প্রাণ ।
13 বছর বয়স থেকে তিস্তায় সাঁতার কাটা শুরু তাঁর । সিকিম ও দার্জিলিঙে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নজরকাড়া সাফল্য পান তিনি । তারপর ধীরে ধীরে র্যাফ্টিংয়ের কাজে আসা । আসলে ছোটোবেলা থেকেই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় শান্তি । পাশাপাশি, এই কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচানো তাঁর জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে ।
কীভাবে তিস্তাকন্যা হয়ে উঠলেন ?
সালটা 2005 । অগাস্ট মাস । মল্লিতে পর্যটকবাহী গাড়ি তিস্তায় পড়ে যায় । ওই গাড়িতে থাকা পর্যটকদের আর্তনাদে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রেখে চারজনকে উদ্ধার করেন শান্তি । সেই থেকেই শুরু । ওই বছরেই কালিম্পঙের রম্ভীতে NHPC-র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার সময় শান্তি সদলবলে 212 জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন । এরপর 2008 সালে বিহারে ভয়াবহ বন্যার সময় সেখানে ডাক পড়ে তাঁর । সদলবলে যান তিনি । হাজারের বেশি লোককে উদ্ধার করে তাঁর দল । তারপর থেকে আর থেমে থাকেননি । যখনই মানুষ তিস্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন, তখনই দলবল নিয়ে ছুটেছেন তিস্তাকন্যা । এরপর থেকেই তিস্তার মানুষের কাছে তিনি ভরসার হয়ে ওঠেন । পরিচিতি লাভ করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ।
তিনি এই কাজের জন্য একটি তিস্তা-রঙ্গিত রেসকিউ সেন্টার খুলেছেন । একাজে তিনি সরকারি সাহায্য চান । একইসঙ্গে চান , আরও যুবক-যুবতি একাজে এগিয়ে আসুক, মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ুক । যেমনভাবে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন তিস্তায় নিখোঁজদের সন্ধানে।