কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর : শাল-পিয়ালের জঙ্গলে এখন সবুজের সমারোহ । বর্ষার এ সময় ছবিটা নতুন নয় বটে । এ সময় জঙ্গলমহলের মানুষ খুঁজে ফেরেন কুরকুরি ছাতু, কাড়ান ছাতু । সারা বছরের উপার্জনের অনেকটাই এসে যায় এই চার মাসে । ছাতু তুলতে গিয়ে অনেকের চোখে পড়েছে “বনপার্টি"-র আনাগোনা । কেউ মুখে রা কাড়েনি । শুধু স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে 10 বছর আগের টুকরো ছবির কোলাজ ।
একটা সময় জঙ্গলমহল দেখেছে জনতার আদালত । দেখেছে সেই আদালতের বিধানে মৃত্যুদণ্ড । রক্তে ভিজেছে লালমাটি । মাওবাদীদের হাতে শহিদ হতে হয়েছে কখনও শিলদার EFR ক্যাম্পের জাওয়ানদের, কখনও সাঁকরাইল থানার OC-কে, কখনও আবার মৃত্যু হয়েছে সাধারণ মানুষের । জঙ্গলমহল দেখেছে রাতের মশাল মিছিল । অস্ত্রের ঝনঝনানি । আরও কত কিছু । বনপার্টিদের যাতায়াত ফেরাচ্ছে বছর দশেক আগে সব স্মৃতি । তবে কী জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদী-রাজ শুরু ?
তথ্য বলছে, আবার সংগঠন গুছিয়ে তুলছে মাওবাদীরা । যৌথবাহিনী-পুলিশের নাকের ডগাতেই তারা একটু একটু করে গড়ে তুলেছে গেরিলা সংগঠন । এবার উপস্থিতি জানান দেওয়ার পালা চলছে । গত 15 অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিনে ভুলোভেদা এলাকায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার পাওয়া গিয়েছিল । পুরোনো স্মৃতি ফিরিয়ে বেলপাহাড়ি এলাকায় বেশকিছু ব্যবসায়ীর কাছে তোলা চেয়ে চিঠি এসেছে মাওবাদীদের । পুলিশের কাছে জমা পড়েছে অভিযোগ । এইসব ঘটনা রাজ্য প্রশাসনের স্নায়ুচাপ বাড়াচ্ছিল । এরই মাঝে বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলপাহাড়ি থানা এলাকার সীমান্ত লাগোয়া ওদলচুঁয়া গ্রামে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা মুখোমুখি হয় একটি মাওবাদী দলের । খড়্গপুর সদর শহরের ওই পর্যটক দলটি মাওবাদীদের মুখোমুখি হয় ডাঙ্কিকুসুম গ্রামে । পরে তারা জানিয়েছে, মোট সাতজন ছিল ওই দলে । প্রত্যেকেই ছিল সশস্ত্র । মুখ গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল । দলে ছিল তিনজন মহিলা । অবশ্য তারা পর্যটকদের মারধর করেনি । শুধু কেড়ে নিয়েছে মোবাইল ফোন ।
ঘটনার পরম্পরায় গতকাল ফের গতকাল নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে মাওবাদীরা । বেলপাহাড়ি থানা এলাকার ভুলোভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রান্তে পশ্চিমা ও পোস্টার উদ্ধার হয়েছে । যেখানে এক ঠিকাদারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে । বলা হয়েছে অবিলম্বে রাস্তার কাজ বন্ধ করতে হবে । পরিস্থিতি একটু একটু করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বুঝে সক্রিয় হয়েছে রাজ্য প্রশাসন । স্বয়ং DGP বীরেন্দ্র পৌঁছে গেলেন জঙ্গলমহলে । ঝাড়গ্রামের নতুন পুলিশ লাইনে ADG ওয়েস্টার্ন রেঞ্জ, IG বাঁকুড়া রেঞ্জ, ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার, বেলপাহাড়ির DSP-দের নিয়ে বৈঠক করেন ।
এই সংক্রান্ত খবর : রাস্তার কাজ বন্ধের হুমকি, ঠিকাদারি সংস্থার নামে "মাওবাদী পোস্টার"
সূত্র জানাচ্ছে, বৈঠকে দ্বি-মুখী পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন । একদিকে যৌথবাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয়ে জঙ্গলমহলে টহলদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । অন্যদিকে সোর্স নেটওয়ার্ককে আরও বেশি করে সক্রিয় করতে বলা হয়েছে । কোন গ্রামে মাওবাদীরা যাতায়াত করলে দ্রুত যাতে পুলিশ খবর পায় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে । জঙ্গলমহলের নতুন করে কাদের রিক্রুট করা হয়েছে সেই তালিকাও তৈরি করতে বলা হয়েছে । পুলিশ নির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিয়ে মাওবাদী বাড়বাড়ন্ত রুখতে পারে কি না সেটাই এখন দেখার ।