ঝাড়গ্রাম, 9 অগস্ট: উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সরকার বনাম রাজভবনের দ্বন্দ্ব এখন কারও অজানা নয় । এই নিয়ে বলতে গিয়ে ফের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বললেন, মুখ্যমন্ত্রী যা করছেন, তা করতে চাইলে নির্বাচনে জিতে আসুন । একইসঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে তাঁর দাবি, "এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন রাজ্যপাল । আমরা কাজ করব । আর উনি সবকিছু আটকে দেবেন । এটা বরদাস্ত করব না ।"
বুধবার ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান থেকে বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মাননীয় গভর্নর সাহেব কালো চশমা পরে জ্ঞান দিয়ে বেড়াচ্ছেন । উনি একটা কেন, একটার জায়গায় দশটা চশমা পরতে পারেন । তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই । তবে যা খুশি তাই করতে পারেন না ।"
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যপালের কাজ সংবিধানে লেখা রয়েছে । সংবিধানের বাইরে বেরিয়ে তিনি কিছু করতে পারেন না । এখন বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী যা করবেন তিনিও তাই করবেন । আগে দল তৈরি করে নির্বাচনে জিতে আসুন । এমনটা 100 বছরেও পারবেন না । এখানে যা খুশি তাই করা যায় না ।
আরও পড়ুন: 'বিজেপি কুইট ইন্ডিয়া', ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে 'কেন্দ্রের বঞ্চনা' নিয়ে সরব মমতা
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকার উপাচার্যদের জন্য নাম পাঠালেও রাজভবনের থেকে তাঁদের নাম বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না। বরং রাজ্যপাল নিজের ইচ্ছামতো কেরল থেকে লোক নিয়ে এসে বসিয়ে দিচ্ছেন । উদাহরণ হিসাবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একজনকে উপাচার্য করে দেওয়া হয়েছে, যিনি আদতে শিক্ষা জগতের লোকই নন । তিনি কেরলের আইপিএস ছিলেন ।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, "কেরল থেকে কারওকে নিয়ে এলে আমার তাতে আপত্তি নেই । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে গেলে অন্তত 10 বছর শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থাকতে হয় ।"
এখানে ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, "ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে । সেখানে না আছে ভিসি না আছে রেজিস্ট্রার । নাম পাঠালেই তিনি তাঁর মতো করে একজন বিজেপির লোককে এখানে বসিয়ে দেবেন । আমি মুখ্যসচিবকে বলব, এ ক্ষেত্রে আমাদের যে রেকমেন্ডেশন সেটি হায়ার এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে রাজভবনে পাঠিয়ে দিতে । আগে অন্তত একটা রেজিস্ট্রার পাঠান এখানে ৷ পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেওয়া যাচ্ছে না । আমি ইউনিভার্সিটি তৈরি করছি, আর উনি দালালি করে সবকিছুকে আটকে দিচ্ছেন । আমরা এটা মানব না ।"
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "উপাচার্য ঠিক করতে গেলে তিনটে নাম পাঠাতে হয় । যদি আপনার সৎ সাহস থাকে, অ্যাসেম্বলিতে যে বিলটা পাশ হয়েছে, যে মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারপার্সন হবেন, চ্যান্সেলর হবেন, সেই বিলটা আপনি সই করে দিন । ইংরেজ আমলে একটা আইন ছিল । তখন মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল । আজকে আমাদের এখানে 44-45টি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গিয়েছে । তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য কে হবেন ঠিক করবেন ? ছাত্রছাত্রীদের ডেকে বলবেন দুর্নীতি কাকে বলে ! ছাত্রছাত্রীদের ডেকে বলবেন দাঙ্গা কাকে বলে ! এটা কী রাজ্যপালের কাজ !"
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপালের আসন সাংবিধানিক আসন । তাঁর কাজ সংবিধানে সীমাবদ্ধ করা আছে । সেই কাজটাই তিনি করবেন, তিনি সবকিছু এভাবে করতে পারেন না ।