ঝাড়গ্রাম, 28 জুন: পুলিশ সুপারের তৎপরতায় গণধর্ষণ করে খুন হওয়া শিশুকন্যার পরিবার সাক্ষ্যগ্রহণের এক বছরের মধ্যে দ্রুত বিচার পেল । পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে গণধর্ষণ, খুন ও মৃতদেহ লোপাটের ঘটনায় বুধবার দুই যুবককে ফাঁসির আদেশ দিল ঝাড়গ্রামের বিশেষ পকসো আদালত । ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত দুই যুবকের নাম ফাগুন মাণ্ডি ওরফে পুঁই এবং রবীন্দ্র রাউত ওরফে ভাকু । দু'জনেরই বাড়ি নয়াগ্রাম থানার অন্তর্গত বাবুরামপাতরা গ্রামে ।
এই পৈশাচিক ঘটনায় পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, খুন ও মৃতদেহ লোপাট-সহ পকসো আইনে মামলা রুজু করে । 2021 সালের 4 নভেম্বর ঝাড়গ্রামে নিখোঁজ হয়ে যায় পাঁচ বছরের এক শিশুকন্যা। খোঁজাখুঁজি করে না-পেয়ে পরদিন অর্থাৎ, 5 নভেম্বর শিশুর বাবা নয়াগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে নাবালিকার প্রতিবেশী ফাগুন মাণ্ডি এবং পরে রবীন্দ্র রাউতকে আটক করে। নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর অর্থাৎ 7 নভেম্বর দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ফাগুন ও রবীন্দ্রর কথামতো ধান জমিতে জল দেওয়ার নালার পাশে মাটি খুঁড়ে পাঁচ বছরের শিশুকন্যার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ।
পরের দিন শিশুকন্যার ময়নাতদন্ত হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। বিড়ি খেয়ে গণধর্ষণ করে শিশুকন্যাকে আঘাত করে অভিযুক্তরা । শিশুটির শরীরে 9টি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় । তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে শিশুকন্যার গোপনাঙ্গে বাঁশ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । মামলার তদন্তকারী অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর প্রবীর কর্মকার 2021 সালের 30 ডিসেম্বর মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেন । কিন্তু তারপর আর মামলার অগ্রগতি হয়নি ।
এরপর 2022 সালের মে মাসে ঝাড়গ্রাম জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পান অরিজিৎ সিনহা । তিনি জানতে পারেন ওই মামলার সাক্ষ্য তখনও শুরু হয়নি । তখন তাঁর হস্তক্ষেপে 2022 সালের 7 জুন থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় । সাক্ষীদের আদালতে নিয়ে আসার জন্য পুলিশ নিরাপত্তা এবং উইটনেস ব্রিফিংও করেন । ঘটনায় তিন চিকিৎসক-সহ মোট 30 জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর মঙ্গলবার পকসো আদালতের বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় দুই যুবককে দোষী সাব্যস্ত করেন ।
আরও পড়ুন : রাস্তা না থাকায় ভোট বয়কট, পঞ্চায়েতের মুখে লোধা শবরদের গ্রামের দেওয়ালে শুধুই রঙিন চিত্র
বুধবার মামলার রায় শুনতে আদালতে এসেছিলেন পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) উত্তম ঘোষ । এদিন ঝাড়গ্রামের পকসো আদালতের বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় দুই আসামীকে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করার পর সরকারি আইনজীবী শুভাশিস দ্বিবেদী বলেন, "শিশুকন্যাকে অপহরণ করে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে দু'জনকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন পকসো আদালতের বিচারক । 18 ফেব্রুয়ারি 2022 আদালতে চার্জ গঠন হয় । ওই বছরের 6 জুন থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ । চিকিৎসক, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট-সহ 30 জন সাক্ষ্য দেন । মঙ্গলবার দুই যুবককে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক ।"
ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, "এই মামলায় পারিপার্শ্বিক প্রমাণের সাহায্যে এবং 30 জন সাক্ষীকে সময়মতো আদালতে হাজির করানোর পাশাপাশি তাঁদেরকে সাক্ষ্যগ্রহণের মহড়া দেওয়া হয়েছিল আগেই । সাক্ষ্যগ্রহণের এক বছরের মধ্যেই দ্রুত খুন হওয়া শিশুকন্যার পরিবার বিচার পেল।"