ঝাড়গ্রাম, 18 অক্টোবর: সুবর্ণরেখা নদী পার হওয়ার সময় বালিখাদানের গর্তে পড়ে জলে ডুবে মৃত্যু হল এক হস্তিশাবকের । পরবর্তীতে শাবকহারা মা হাতির আক্রমণে মৃত্যু হল দু'জন গ্রামবাসীরও । বুধবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম থানার অন্তর্গত দেউলবাড় এলাকায় রামেশ্বর মন্দির সংলগ্ন এলাকার ঘটনা । তবে এই ঘটনায় মৃতদের পরিবার পিছু 5 লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
স্থানীয় ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ভোররাতে দুই শাবক-সহ 14টি হাতির একটি দল খড়গপুর বন বিভাগের অন্তর্গত সাঁকরাইল রেঞ্জের রোহিনীর দিক থেকে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে নয়াগ্রাম এলাকার চাঁদাবিলা রেঞ্জে প্রবেশ করছিল । সেই সময় একটি ছোট্ট হস্তিশাবক বালিখাদানের গর্তে পড়ে যায় । প্রচুর জল থাকায় জলে ডুবে মারা যায় শাবকটি । দীর্ঘ চেষ্টার পর মা হাতি শাবককে উদ্ধার করে ডাঙায় নিয়ে আসে । কোনওক্রমে তাকে রামেশ্বর মন্দির সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে যায় মা হাতিটি ৷
অন্যান্য হাতিগুলি সেখান থেকে এগিয়ে গিয়ে তপোবনের জঙ্গলে প্রবেশ করে । কিন্তু মা হাতি কোনওভাবেই তার সন্তানকে ছেড়ে যেতে চায়নি । সন্তান হারানোর দুঃখে পাগলের মতো গর্জন করে বিক্ষিপ্তভাবে ছোটাছুটি করতে থাকে সে । এই অবস্থায় হাতিমৃত্যুর খবর চাউর হতেই বহু মানুষ তা দেখার জন্য জমায়েত করে রামেশ্বর মন্দির সংলগ্ন এলাকায় । সেই সময় হঠাৎ করে মা হাতি গ্রামবাসীদের তাড়া করে । ঘটনায় দু'জন গ্রামবাসীকে ধরে ফেলে এবং শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে । ঘটনাস্থলেই ওই দুই গ্রামবাসীর মৃত্যু হয় । বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেউলবাড় গ্রামের আনন্দ জানা (73) এবং বিরিবেড়িয়া গ্রামের শশধর মাহাতো (60) নামের দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে ।
এছাড়াও মা হাতিটি একটি বাইক ভেঙে ফেলার পাশাপাশি রামেশ্বর-কটক রুটের একটি বাসকে ধাক্কা দেয় বলেও জানা গিয়েছে । এই বিষয়ে খড়গপুর বন বিভাগের বনাধিকারিক শিবানন্দ রাম জানান, প্রাথমিকভাবে দেখে যা মনে হচ্ছে নদী পারাপারের সময় জলে ডুবে একটি হস্তিশাবকের মৃত্যু হয়েছে এবং মা হাতির হানায় দু'জন গ্রামবাসীরও মৃত্যু হয়েছে । সরকারি নিয়মনীতি মেনে বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হবে । বর্তমানে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে নয়াগ্রাম থানার পুলিশ ও বনবিভাগের আধিকারিক ও কর্মীরা ।
আরও পড়ুন : গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে রেলগেট ভেঙে লাইন পেরোল হাতি