জলপাইগুড়ি, 26 জুন: তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচির পরেও মুখ্যমন্ত্রীকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে উত্তরে যেতে হল । যেখান থেকে অভিষেক নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু করেছিলেন, সেখান থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আজই কোচবিহারে সভার পর জলপাইগুড়ি জেলায় যান মুখ্যমন্ত্রী । জলপাইগুড়িতেও অভিষেকের নবজোয়ার কর্মসূচি যেখানে থেকে শুরু হয়েছিল, সেই ক্রান্তি থেকেই আগামিকাল জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার দুই জেলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রচারসভা করবেন মমতা ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মুখ্যমন্ত্রীকে প্রচারে আসতে হচ্ছে ! কিন্তু কেন ? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তরে বিজেপির বাড়বাড়ন্তকে কোনও ভাবেই হাল্কা ভাবে নিতে চাইছেন না তৃণমূল সুপ্রিমো । আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় 2019 লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস হেরেছে । শুধু তাই নয়, 2021 সালের বিধানসভায় আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় 12টি আসনের মধ্যে মাত্র 3টিতে জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । পরপর হারের পর এই অঞ্চলে অক্সিজেন ফিরে পেতে বেশ কয়েকটি সভা করেছেন মমতা ও অভিষেক । আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জলপাইগুড়ির সভা থেকে কী বার্তা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই দিকেই তাকিয়ে দল ।
জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা । বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একটা বড় মাথাব্যথার কারণ । জেলায় ক্রান্তি চেকেন্দা ভান্ডারির মাঠ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাত্রিযাপনের মধ্যে দিয়ে জলপাইগুড়ি জেলায় নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু করেছিলেন ।ক্রান্তি সাংগঠনিক ব্লক থেকে ফের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী প্রচার শুরু করায়, স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত জলপাইগুড়ি জেলা নেতৃত্ব । মহাদেব রায় সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসের ক্রান্তি ব্লক সভাপতি হওয়ার পর, ক্রান্তি ব্লক থেকে অভিষেকের নবজোয়ার কর্মসূচি ভালোভাবেই উতরে দিয়েছেন । এ বার মুখ্যমন্ত্রীর সভার দায়িত্বও তাঁর কাঁধে । মহাদেব রায় বলেন, "নেত্রী আমার এলাকায় আসবেন । আমার ব্লক থেকেই আমি মাঠ ভরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি ।"
আরও পড়ুন: টাকা নষ্ট করে মোদিবাবু আমেরিকায় নেতা হতে গিয়েছেন, কটাক্ষ মমতার
রাজ্যে 2011 সালে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার আসার পর 2013 সালে জলপাইগুড়িই ছিল রাজ্যের একটিমাত্র জেলা, যেখানে সিপিআইএম জেলা পরিষদ দখল করেছিল । 2016 সালে দল ভাঙিয়ে জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস । 2018 সালে জলপাইগুড়ি জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে । 2018 সালে একক ভাবে জিতে জেলা পরিষদ দখল করে শাসকদল । জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের 19টি আসনের মধ্যে 19টিতেই তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয় ।
এরপর 2019 সালে লোকসভা নির্বাচনে 1 লক্ষ 84 হাজার ভোটে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী ডা. জয়ন্তকুমার রায় । আলিপুরদুয়ার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী জন বারলা প্রায় দুই লক্ষ ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন । এরপর থেকে জলপাইগুড়ি জেলায় খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেস ।
অন্যদিকে, বিধানসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি জেলায় 7টি বিধানসভার মধ্যে 4টিতে জয়ী হয় বিজেপি ও 3টিতে জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস । অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ার জেলার 5টি বিধানসভার মধ্যে 5টিতেই জয়ী হয় বিজেপি । এ দিকে, কোচবিহারের লোকসভায় ভরাডুবি হয় তৃণমূল কংগ্রেসের । বিধানসভাতেও কোচবিহারে 9টি আসনের মধ্যে 7টিতে জয়ী হয় গেরুয়া শিবির । এ দিকে, 2018 সালে তৃণমূল কংগ্রেস জলপাইগুড়ি জেলায় জেলা পরিষদে ভোট পেয়েছিল 5 লক্ষ 98 হাজার 488টি ৷ পাশাপাশি বিজেপি ভোট পেয়েছিল 3 লক্ষ 48 হাজার 92 ভোট ।
আরও পড়ুন: সীমান্তে যারা গুলি চালাবে তাদের বিরুদ্ধেও এফআইআর হবে, নিশীথকে ঠুকে আক্রমণ মমতার
বিজেপির জেলা সভাপতি বাপী গোস্বামীর দাবি, "সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলে তৃণমূল কংগ্রেস জলপাইগুড়ি থেকে সাফ হয়ে যাবে । লোকসভায় আমরা সাফ করে দিয়েছি । বিধানসভাতেও খেলা দেখিয়েছিলাম । ঠিকভাবে ভোট হলে এ বার পঞ্চায়েতেও ভালো ফল হবে । সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রী আসছেন সভা করতে ।"
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায় জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের জন্য সব কিছু উৎসর্গ করেন । দল চেয়েছিল যে তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে নামুন । সেই কারণেই মমতা কোচবিহার থেকে প্রচার শুরু করলেন । এটা ভাবার কিছু নেই যে, বিজেপির শক্তি অনেক বেড়েছে । দলের জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে নেমেছেন।"