জলপাইগুড়ি, 8 জুন : স্মার্টফোন নেই ৷ তাই করোনার টিকা নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করাতে পারছেন না গ্রাম-গঞ্জের বহু মানুষ ৷ একই কারণে বিপাকে পড়েছেন চা বাগানের হতদরিদ্র শ্রমিকরাও ৷ তাঁরা চাইছেন, টিকাকরণের প্রক্রিয়া আরও সহজ করুক সরকার ৷ গ্রামের স্কুল বা অন্য কোথাও শিবির তৈরি করে দেওয়া হোক করোনার টিকা ৷ এমনটাই দাবি জলপাইগুড়ির চা বাগান এবং গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের ৷
জলপাইগুড়িতে জানুয়ারি মাসের 13 তারিখ থেকে করোনার টিকাকরণ শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ৷ গত কয়েক মাসে 2 লাখের কিছু বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে ৷ বস্তুত, টিকাকরণের নিরিখে জলপাইগুড়ি জেলা রাজ্যে তৃতীয় ৷ 2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি জেলার মোট জনসংখ্যা 23 লাখ 81 হাজার 596 ৷ 2021 সালে নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট ভোটার 18 লাখ 32 হাজার 938 জন।
এর মধ্যে মাত্র 2 লাখের কিছু বেশি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে ৷ পৌর এলাকাগুলিতে টিকাকরণ ভালোভাবে চললেও গ্রামাঞ্চলে সেই তুলনায় কাজের গতি অত্যন্ত শ্লথ বলে অভিযোগ ৷ জেলায় 80টি গ্রামপঞ্চায়েত, 29টি বনাঞ্চল এবং শতাধিক চা বাগান থাকলেও এর মধ্যে মাত্র 15টি এলাকায় টিকাকরণ শুরু হয়েছে ৷ তার উপর টিকার ভাণ্ডার পর্যাপ্ত না থাকায় এই এলাকাগুলিতে প্রতিদিন টিকাকরণ হচ্ছেও না ৷
চা বাগানের শ্রমিকদের অবস্থা সবথেকে খারাপ ৷ তাঁদের দৈনিক মজুরি মাত্র 202 টাকা মজুরি ৷ তাতে সংসার চালানোই দায় ৷ তাই স্মার্ট ফোন কেনার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না তাঁরা ৷ তার উপর অ্য়াপ ডাউনলোড করে সেখানে নাম নথিভুক্ত করার পদ্ধতিও এই মানুষগুলোর পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ৷
শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে মালবাজার, জলপাইগুড়ি (সদর) ও ধূপগুড়ি, এই তিনটি পৌরসভার পাশাপাশি ব্লকের সদরগুলিতেও টিকাকরণের কাজ চলছে পুরোদমে ৷ কিন্তু, গ্রামাঞ্চলের মানুষ সেই তুলনায় টিকা পাচ্ছেন না ৷ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলায় শিক্ষিতের হার 74 % ৷ ফলে বাকি 26 % মানুষের পক্ষে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া কার্যত অসম্ভব ৷
আরও পড়ুন : COVID 19 Vaccination Drive : কোচবিহারে বৃহন্নলাদের টিকাকরণ
এই অবস্থায় বাবুলাল বসাক, খোকন পাইন, মজনু মহম্মদরা জানান, তাঁরা দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষ ৷ টিকা পাওয়ার জন্য স্মার্ট ফোন কেনা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ টিকা জরুরি হলেও এক্ষেত্রে কিছু করার নেই তাঁদের ৷ বদলে সরকারই যদি গোটা প্রক্রিয়াটিকে সরল করে গ্রামে গ্রামে টিকা নিয়ে পৌঁছে যায়, তো ভালো হয় ৷ সহমত স্মার্ট ফোন না থাকা সঞ্জীব ঘোষ, সৌরভ সরকার, শ্যামল বিশ্বাসরাও ৷