ময়নাগুড়ি , 3 মার্চ : কয়েক বছর আগে স্কুল হয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েছিলেন সুন্দরবনে ৷ কিন্তু একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আঁতকে উঠেছিলেন বছর সতেরোর মেয়েটি ৷ দেখেন, ঋতুস্রাবের সময় সেখানকার মেয়েরা ব্যবহার করেন কাপড় ৷ হাতেগোনা কয়েক জন স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করলেও তার মধ্যে গাছের পাতা, বালি ঢুকিয়ে রাখত । একই প্য়াড বার বার ব্যবহার করতেই এমন পদক্ষেপ । এই ছবি দেখার পর থেকেই নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছিল সুদীপ্তার । স্বপ্ন দেখেছিলেন, কম দামে পরিবেশবান্ধব ন্যাপকিন তৈরি করার । যা পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে প্রত্যন্ত গ্রামগুলির ঘরে ঘরে ৷
সুদীপ্তা সরকার ৷ ময়নাগুড়ির ভোটপট্টি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ৷ এই বছর রাজ্য সরকারের 27 তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কংগ্রেসের প্রথম স্থানাধিকারী ৷ তাঁর বিষয় ছিল পরিবেশ বান্ধব ও কম খরচে কলাগাছের তন্তু থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রস্তুত ৷ যার জন্য রাজ্যে সেরার তকমা পেলেন তিনি ৷ আর এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন প্রশিক্ষক নীলেশ দাশগুপ্ত ৷
এই বিষয়ে কী বলছে সুদীপ্তা ?
এক সময় সুন্দরবনে গিয়েছিলাম স্কুলের কাজে ৷ সেখানে গিয়ে লক্ষ্য করি প্রচুর মেয়ে আছে যারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারে না শুধুমাত্র অতিরিক্ত দামের জন্য ৷ আবার অনেকে আছেন যারা একবার ব্যবহৃত প্যাডের মধ্যে পাতা, বালি ঢুকিয়ে সুঁতো দিয়ে বেঁধে তা আবার ব্যবহার করে ৷ সেখান থেকেই মনে হয় যে এমন একটি স্যনিটারি প্যাড বানানো যায় যা পরিবেশবান্ধব অথচ স্বল্প মূল্যের ৷ "
তবে কতটা সুরক্ষিত এই ন্যাপকিন ?
সুদীপ্তা বলেন, জীবাণু মুক্ত করতে ডেটল এবং হলুদ দিয়ে ধুয়ে নেওয়া হয়েছে ৷ এরপরও এটিকে গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠাবো ৷ রাজ্যে প্রথম হয়ে খুশি সুদীপ্তা ৷
অন্যদিকে, তাঁর প্রশিক্ষক নীলেশ দাশগুপ্ত জানান, " সুদীপ্তার এই সাফল্যে জলপাইগুড়িবাসী ভিষণ খুশি ৷ আজকের দিনে এই ন্যাপকিন কম খরচে গ্রামে অনেক মহিলাদের উপকারে কাজে আসবে ৷ "
সুদীপ্তার স্বপ্ন শুধু রাজ্য নয় , গোটা দেশের প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুক এই ন্যাপকিন ৷ প্রতিটি মহিলা যেন এক সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনের অধিকারী হতে পারেন ৷
সুদীপ্তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর ৷ তিনি বলেন, এমনভাবে কম খরচে যদি গ্রামবাংলার মা বোনেরা স্যানিটারি ন্যাপকিন পায় তাহলে অনেক রোগভোগ থেকে তারা রক্ষা পাবে।