জলপাইগুড়ি, 25 ডিসেম্বর : কয়েকদিন আগেই কলকাতায় ফিরে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন । জানিয়েছিলেন, তৃণমূলের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা । তাতে সমর্থন জানিয়েছিল রাজ্যের শাসক দলও । কারণ একুশের ভোটের আগে বিমল গুরুংকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ে নিজেদের হারানো মাটি ফেরত পেতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব ।
একটা সময় ছিল যখন মালবাজারে কোনও মিটিং-মিছিল করতে পারতেন না মোর্চা নেতারা । কিন্তু এখন মালবাজারে সভা করছেন গুরুং । শুধু সভাই নয়, মালবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে কে তৃণমূলের প্রার্থী হবে, সেই নিয়ে মন্তব্যও করছেন তিনি । তিনি জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে তাঁর পছন্দের প্রার্থীর নাম পিকে ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়েও দিয়েছেন তিনি । আর এই নিয়েই মালবাজারে শাসক দলের অন্দরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর । রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, বিমল গুরুং কার্যত গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসক দলের জন্য ।
কারণ এই মালবাজার এলাকাটি কার্যত আদিবাসী অধ্যুষিত । আড়াই লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় এক লাখ আদিবাসী ভোটার রয়েছে এখানে । এই পরিস্থিতিতে বিমল গুরুং তাঁর পছন্দের মানুষকে প্রার্থী করা নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তা মোটেই ভালোভাবে দেখছে না আদিবাসী বিকাশ পরিষদ । প্রকাশ্যে না হলেও মোর্চা নেতার বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের মধ্যে । আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সমর্থন রয়েছে তৃণমূলের দিকে । একদিকে মোর্চা, অন্যদিকে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ । এই দুই দিক সামাল দিতে তৃণমূলকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত ।
ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা রাজেশ বারলা বলেন, "গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে কোনওমতেই ডুয়ার্সে বিমল গুরুংকে সভা করতে দেব না । এর আগেই 2007 সাল থেকে 2010 সাল পর্যন্ত উত্তাল হয়েছিল ডুয়ার্স । আগুন জ্বলেছিল । গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের ফলে ডুয়ার্সে অনেক অশান্তি হয়েছে । কিন্তু এবার আর না ।"
এদিকে গুরুংয়ের মন্তব্যের পর তড়িঘড়ি কোর কমিটির বৈঠক ডাকে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব । বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মালবাজার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আদিবাসী প্রার্থীকেই আসন্ন নির্বাচনে দাঁড় করাতে চায় তারা । নিজেদের এই বার্তা দলনেত্রীকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন : গুরুঙের ভোলবদল কি রাজনৈতিক চাল, নাকি...
তৃণমূলের জেলা সভাপতি কিষান কল্যাণী বলছেন, "কার নাম পাঠালেন, তাতে কিছু যায় আসে না । মালবাজার বিধানসভা আসনটি আদিবাসী অধ্যুষিত । ফলে ওই আসনে কোনও আদিবাসী প্রার্থীই ভোটে লড়বেন । বিমল গুরুং তাঁর পছন্দের প্রার্থীর নাম বলতেই পারেন । সেটা তাঁর দলের ব্যাপার, তৃণমূলের নয় । বিমল গুরুং আমাদের দলকে সমর্থন করতেই পারেন । তবে কে কোথায় প্রার্থী হবেন তা আমাদের নেত্রী ঠিক করে দেবেন ।"
একই কথা তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার মুখপাত্র দুলাল দেবনাথের গলায় । বলেন, "বিমল গুরুং তাঁর নিজস্ব মত প্রকাশ করেছেন । তিনি আমাদের দলের কেউ না । এমনকী তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনও আসন সমঝোতাও হয়নি । ফলে আমাদের দলে কে লড়বেন তা নেত্রী ঠিক করবেন ।"
গত সপ্তাহেই বিমল গুরুং ওদলাবাড়িতে সভা করে মালবাজারে এসেছিলেন । তৃণমূলের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, "আমরা মালবাজারে নব প্রজন্মের একজন প্রার্থী চাইছি । সেই নাম প্রশান্ত কিশোর এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়ে দিয়েছি । " আর এতেই বেঁকে বসেছে শাসক শিবিরের একাংশ । মালবাজারের তৃণমূল বিধায়ক বুলুচিক বরাইক বলেন, "কে প্রার্থী হবেন তা বিমল গুরুং বলার কে ! তিনি কোথায় মিটিং করলেন, কাকে নিয়ে করলেন, সেসব আমার জানা নেই । তবে নেত্রী যাকে প্রার্থী করবেন তাঁর জন্য লড়াই করব ।"
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই নিতে শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদ । ডুয়ার্সে কোনও মতেই বিমল গুরুং যাতে আর সভা করতে না পারেন তা নিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন । পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছেন তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায়ও । জেলা তৃণমূলের তরফে বলা হচ্ছে, গুরুংয়ের এই মন্তব্য একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ।
এদিকে বিজেপির জেলা সহ সভাপতি অলোক চক্রবর্তী বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেস তো অশান্তির রাজনীতি করছে । বিমল গুরুং ফের ডুয়ার্সে এলে ফের অশান্ত হবে । যাঁর বিরুদ্ধে এত মামলা তাঁকে তোল্লাই দিচ্ছে । ভোটের চমক । এর আগে ছত্রধরকে নিয়েছে । যাঁর বিরুদ্ধে এত মামলা রয়েছে, তাঁকেই সভা করাচ্ছে । আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল ।"