জলপাইগুড়ি, 14 নভেম্বর: শিশুদিবস কবে ও কী সেটা ওরা জানে না। তা নিয়ে মাথাব্যথাও নেই ৷ কিন্তু কখন ওদের জন্য ভালো-মন্দ খাবার নিয়ে দাদা দিদিরা আসবে সেটা ওরা ভালো মতো জানে । কারণ ভুখা পেটে একটু ভালো-মন্দ খেতে পেলেই হাসি ফোটে চা বাগানের এই শিশুগুলির মুখে । প্রতিবছর 14 নভেম্বর জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনে শিশু দিবস পালিত হয় ৷ প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি শিশুদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন নেহরু ৷ শিশুরা তাঁকে 'চাচা' বলে ডাকত ৷ বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন নেহরু ৷ সর্বদা ওদের কীসে ভালো হবে তা ভাবতেন ৷ তাই তাঁর জন্মদিনটি শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয় ৷ ডেঙ্গুয়াঝার চা বাগানের শিশুরা ওদের দিন বলতে বোঝে খাবার আসার দিন ৷ আর শিশুদের ভালোর কথা ভেবে এগিয়ে এসেছে জলপাইগুড়ির গ্রিনভ্যালি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । বছরের আর পাঁচটা দিনের মতো প্রতিদিনই এই চা বাগানের শিশুদের কথা ভাবেন গ্রিনভ্যালির প্রশান্ত- সুমিত্রা-অতীন্দ্ররা ।
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ডেঙ্গুয়াঝার চা বাগানের পশ্চিমলাইন স্কুলের মাঠে সপ্তাহে চারদিন খাবারের ব্যবস্থা করে গ্রিনভ্যালি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন । চা বাগানের দু:স্থ শিশুদের জন্য একবেলা ভালো-মন্দ খাবারের ব্যবস্থা করা হয় ।কেউ বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন বা বাবা মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে গ্রিনভ্যালির মাধ্যমে চা বাগানের শিশুদের খাইয়ে থাকেন । দুপুরবেলায় চা বাগানে ই-রিক্সা করে খাবার নিয়ে আসেন গ্রিনভ্যালির সদস্যরা । বাগানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে হর্ন বাজাতে শুরু করেন । আর তাতেই বাচ্চারা থালা হাতে ছুটতে ছুটতে হাজির হয় বটগাছের তলায় ৷
তবে শুধু ওরা নয়, ওদের বাবা-মায়েরাও অপেক্ষা করে থাকে বাচ্চাদের জন্য তাদেরও ভালো-মন্দ খাবার জুটবে আজ । খাবার দেওয়ার পাশাপাশি এই সকল বাচ্চাদের জন্য পুজোর সময় জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করা, শিশুদের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে ঘোরানোর ব্যবস্থাও করা হয় বলে জানান জলপাইগুড়ি গ্রিনভ্যালি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি প্রশান্ত সরকার ।
এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি গ্রিনভ্যালি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের অন্যতম সদস্য সুমিত্রা হেমব্রম পাল বলেন, " জন আহারের চা বাগানের দু:স্থ শিশুদের আমরা খাইয়ে থাকি । প্রতিদিন কারও স্পেশাল দিন থাকে ৷ যেমন কারও জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী বা মা-বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে যে যেমন ফান্ড দেন আমরা সেইভাবে শিশুদের আমরা খাইয়ে থাকি । পুজোর সময় জামাকাপড়, বর্ষায় ছাতা, রেনকোট ও মশারি দেওয়া হয় । শিশু দিবস বলে আলাদা কিছু নেই । আমাদের প্রতিটা দিনই শিশু দিবস ।"
বাবা-মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একদিন চা বাগানের শিশুদের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন রচনা চৌধুরী ৷ তাঁর কথায়, "আমার বাবা ও মা গত হয়েছেন কয়েকবছর আগে । তাই বাবা মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই একদিন শিশুদের একবেলার খাবারের ব্যবস্থা করেছি । এখানে না এলে বাচ্চাদের খাবার নেওয়ার যে কী আনন্দ সেটা বুঝতে পারতাম না । ওদের মুখে আজ যে হাসি দেখলাম সেটা বিরাট প্রাপ্তি । রোজ যদি এমন ব্যবস্থা করতে পারতাম খুব ভালো হত ।"
ডেঙ্গুয়াঝার চা বাগানের বাসিন্দা বাসন্তী ওঁরাও, ভাগবতী ভুইঞারা বলেন, "এখানে ভাত, ডাল, মাছ, মাংস, পনির সবই খাওয়ায় । বাচ্চাদের সঙ্গে আমরাও আসি, খেয়ে যাই । বাচ্চাদের খেয়াল রাখে ওরা ৷ জামাকাপড় দেয় । বাড়িতে তো আমরা এমন খাবার বাড়িতে খেতে পারি না । ওরা নিয়ে আসে খুব ভালো লাগে ৷"
আরও পড়ুন :
1 শিশু দিবসে জলপাইগুড়ির চা বাগানে 'বিনে পয়সায় বাজার'
2 আতসবাজির ধোঁয়া থেকে শিশুর শ্বাসকষ্ট-অ্যালার্জি ! মেনে চলুন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
3 শিশুকন্যাকে অবহেলা-নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ, নিজের মেয়েকে লক্ষ্মীরূপে পুজো দম্পতির