জলপাইগুড়ি, 26 সেপ্টেম্বর: বেআইনি নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার চালানোর অভিযোগ উঠেছে ওষুধ ব্যবসায়ী শান্তনু শর্মার বিরুদ্ধে ৷ জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত মাধবডাঙা গ্রামপঞ্চায়েতের শর্মাপাড়ার বাসিন্দা শান্তনু শর্মা ৷ কিন্তু গ্রামের ওষুধ বিক্রেতা থেকে নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের মালিক কীভাবে হলেন তিনি ? কয়েক বছরের মধ্যেই রকেট গতিতে শান্তনু শর্মার উত্থান হয়েছে ৷
কে এই শান্তনু শর্মা ?
ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শান্তনু ৷ পরে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে ওষুধের ব্যবসায় মন দেন ৷ শর্মাপাড়ার ফালতুর মোড়ে ওষুধের দোকান ছিল শান্তনু শর্মার ৷ এমনকী স্থানীয়দের অসুখ-বিসুখে শান্তনু নিজে থেকেই ওষুধ দিতেন ৷ তাই তিনি এলাকায় ডাক্তার বলেও পরিচিত ৷ এই কোয়াক ডাক্তারি করার পর মাধবডাঙার শর্মাপাড়া ছেড়ে জলপাইগুড়ির হাসপাতালপাড়ায় নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার খোলেন তিনি ৷ সেখান থেকে তিনি পান্ডারপাড়ায় শ্বশুরের বাড়িতেই পাকাপাকি ভাবে নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার খুলে বসেন শান্তনু শর্মা । তাঁকে এই ট্রেনিং সেন্টার চালাতে সাহায্য করতেন তাঁর স্ত্রী অনুস্মিতা শর্মা ৷
করোনাকালে হঠাৎ সমাজসেবার উদ্যোগ নেন শর্মা দম্পতি ৷ অক্সিজেনের অভাব মেটাতে সক্রিয় ভূমিকা নেন তাঁরা ৷ এর জন্য নিজেদের অক্সিজেন দম্পতি বলে জাহির করতেও শুরু করেন শান্তনু ও তাঁর স্ত্রী ৷ মিডিয়া চ্যানেলগুলিতে বড় বড় বিজ্ঞাপন ছাড়াও শহরজুড়ে হোর্ডিং লাগানো হয় ৷ চলে দিশারী নার্সিং সেন্টারের প্রচার ৷ বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর পদ্ধতিটি আয়ত্ত করে ফেলেন শান্তনু ৷
আরও পড়ুন: অবৈধ নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে অভিযান স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ৷ ভুয়ো নার্সিং সেন্টারের আড়ালে চলতে থাকে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা ৷ অনেক অভিভাবকই মেয়েকে সাবলম্বী করে তুলতে শান্তনুর নার্সিং সেন্টারের দ্বারস্থ হন ৷ নার্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য শান্তনু অভিভাবকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিত বলে অভিযোগ ৷ হাজার হাজার যুবক-যুবতী দিশারী ট্রেনিং সেন্টারে অর্থের বিনিময়ে ফিজিওথেরাপি, এক্স-রে, প্যাথোলজির সার্টিফিকেট নেয় বলে অভিযোগ ৷ এমনকী রেজিস্ট্রেশন দেওয়া সংস্থার সার্টিফিকেট দেওয়া হত বলেও অভিযোগ ৷
প্রতারিত হওয়া দিশারী নার্সিং ট্রেনিংয়ের এক ছাত্রীর বাবা ইসমাইল খানের অভিযোগ, শান্তনু শর্মার মাধ্যমে তিনি মেয়েকে বেঙ্গালুরুর একটি নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে পাঠিয়েছেন ৷ সেখানে নার্সিং পড়ানোর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না ৷ তিনি তাঁর মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চান। এই নার্সিং পড়ানোর জন্য তিন বছরে 3 লক্ষ 60 হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল ৷
এদিকে শান্তনু শর্মার শ্বশুরের অভিযোগ, তিনি জামাই ও মেয়েকে নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের জন্য ঘর দিয়েছিলেন ৷ এর জন্য কোনও ভাড়া নেননি ৷ তবে মেয়ে-জামাইকে সরকারি অনুমতি নিয়ে সব কাজ করার কথা বলেছিলেন ৷ স্বাস্থ্য দফতরে অভিযানের পর তিনি ট্রেনিং সেন্টারের ঘরে তালা মেরে দিয়েছেন ৷ এদিকে অভিযুক্ত দিশারী নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের কর্ণধার শান্তনু শর্মার দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন ৷ তিনি কাউকে প্রতারিত করেননি ৷ নার্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য ছাত্রীদের যেখানে পাঠানো হয়েছে, তাঁরা সেখানে ঠিক জায়গায় রয়েছেন ৷ তবে শান্তনু স্বীকার করেছেন, তাঁর নার্সিং সেন্টারে ট্রেনিং টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট দেওয়া হত ৷
আরও পড়ুন: পদ্মশ্রী করিমুল হকের নাম জড়াল ভুয়ো দিশারী নার্সিং সেন্টারে, পুলিশের দ্বারস্থ সমাজকর্মী
19 সেপ্টেম্বর শান্তনু শর্মার দিশারী নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে হানা দেয় স্বাস্থ্য দফতর ৷ এরপর স্বাস্থ্য দফতরকে মুচলেকা দিয়ে নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারটি বন্ধ করেন ওষুধ বিক্রেতা শান্তনু শর্মা ৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই ট্রেনিং সেন্টারের আড়ালে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা করেছেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী ৷
তবে এই সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন শান্তনু ৷ তবে শান্তনু স্বীকার করেছেন, তাঁর নার্সিং সেন্টারে ট্রেনিং টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট দেওয়া হত ৷ 2018 সাল থেকে বেআইনিভাবে শ্বশুরবাড়িতেই দিশারী নার্সিং সেন্টারটি চালাচ্ছিলেন শান্তনু ও তাঁর স্ত্রী অনুস্মিতা শর্মা ৷ ভাড়া বাড়িতে থেকে গাড়ি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন শান্তনু ! কীভাবে তা সম্ভব হল ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ ৷ এদিকে মাধবডাঙা গ্রামের ছেলের এমন প্রতারণার ঘটনায় হতবাক শান্তনুর গ্রামের মানুষ ৷
এই নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানা এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন পদ্মশ্রী করিমুল হক ৷ এই অভিযোগের ভিত্তিতে শান্তনুর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে কোতোয়ালি থানা ৷ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ অসীম হালদারও শান্তনু শর্মার দিশারি ট্রেনিং সেন্টারের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন: বেআইনিভাবে চলছিল নার্সিং সেন্টার, স্বাস্থ্য দফতরে মুচলেকা দিয়ে ঝাঁপ বন্ধ করলেন কর্ণধার