জলপাইগুড়ি, 6 অক্টোবর: লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু ৷ এই প্রবাদ ফের সত্যি প্রমাণিত হল বানভাসি সিকিমে ৷
ভূমিকম্পপ্রবণ পাহাড়ে হিমবাহ হ্রদ উপচে পড়ে জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল সেনাবাহিনীর শিবির ৷ সেইসঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র, যুদ্ধসামগ্রী, বিস্ফোরকও ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তিস্তার জল ৷ পরে সেই সেনা-সামগ্রীই কুড়িয়ে বাড়ি নিয়ে গিয়ে ঘুম ওড়ে স্থানীয়দের ৷ সিসা বের করে টাকা রোজগারের আশায় মর্টার-সহ বিভিন্ন বিস্ফোরক বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা ।
কিন্তু গতকাল ভেসে আসা সেনা-যন্ত্রাংশ বাড়িতে এনে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতেই বিস্ফোরণ ঘটে । একজন মারাও যান । আহত হন 5 জন । তখনই টনক নড়ে । এখন বাড়িতে আনা সেনার সামগ্রী ফিরিয়ে দিতে সবাই একে একে এগিয়ে আসছেন । আর সেগুলি উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীর কর্তারা ও পুলিশও তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছেন । জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর, চাপাডাঙা এলাকায় প্রচুর সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে ।
সিকিমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ভেসে যায় । নিখোঁজ হন 23 জন সেনা । একজন জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হলেও বাকিদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না । কিন্তু সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে সেনার যুদ্ধসামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তিস্তার জলের তোড়ে ভেসে যায় । জল কমে যেতেই ভেসে উঠছে সেনার মর্টার শেল-সহ যুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন বিস্ফোরক । গতকাল জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তি, মালবাজার, সদর ব্লক ও ময়নাগুড়িতে বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার হয় । স্থানীয়রা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে খবর দিয়ে উদ্ধারকৃত জিনিসপত্র দিয়ে দিলেও কেউ কেউ লোভের বশবর্তী হয়ে বাড়িতে নিয়ে আসছিলেন ।
গতকাল তিস্তা নদীতে ভেসে আসা সেনাবাহিনীর যন্ত্রাংশ বাড়িতে এনে খুলতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে । সেনার বিস্ফোরক ফেটে মৃত্যু হয় একজনের । আহত হন পাঁচ জন । ঘটনাটি ঘটে জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তি ব্লকের চাপাডাঙা এলাকায় । সিকিমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে তিস্তা নদীতে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প ভেসে যায় । ক্রান্তি চাপাডাঙার বাসিন্দা তবিবর রহমান-সহ কয়েকজন মিলে কাঠ কুড়োতে গিয়ে তিস্তা নদীতে কয়েকটা বাক্স পেলে তা বাড়িতে নিয়ে আসেন ।
আরও পড়ুন: তিস্তার জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে মেয়ে, দেহের খোঁজে মর্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মান্নান খান
ভারী বস্তুটি কেটে সিসা বের করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে, এই ভেবে জিনিসটিতে আঘাত করতেই তা ফেটে যায় । এই ঘটনায় মৃত সাইনুর আলম (7)৷ আহত হয়েছেন লতিফা খাতুন, লাকু মহম্মদ (14), রুকসানা পারভিন, রমজান আলি (65), গুমের আলি (50)। জলপাইগুড়ি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে গুমের আলি ও লাকু মহম্মদকে ।
জলপাইগুড়ির তিস্তা চরের বাসিন্দা আমিনার রহমান বলেন, "সকাল থেকে তিস্তার বুকে দুটো বিস্ফোরণ হয়েছে । আমরা আতঙ্কে আছি । আমরা চাই এলাকায় সেনার যা যা আছে সব নিয়ে যাক । গতকাল একটা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে । জলের তলায় বোমা আছে । আমাদের এখানে যা ছিল দিয়ে দিয়েছি । যার কাছে সেনার যা যা আছে, সবাই দিয়ে দিক । সেনা সব নিয়ে যাক । নিয়ে গেলে ভালো হয় ।"
সান্ত্বনা বর্মন, পবিত্র বর্মনরা জানান, "আমরা আতঙ্কে আছি । সেনার জিনিসপত্র আমরা আগে দেখিনি । আমরা চাই সেনারা সব কিছু নিয়ে যাক ।"
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও ঘোষণা করা হয়েছে সিকিমে বন্যায় সেনাবাহিনীর কিছু বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি ভেসে এসেছে তিস্তা নদীতে । সাধারণ মানুষকে অবগত করা হয়েছে, তিস্তা নদীতে কোনও অচেনা বস্তু, বাক্স, আগ্নেয়াস্ত্র, প্যাকেট চোখে পড়লে স্থানীয় থানাতে খবর দেওয়ার জন্য । কেউ হাত দিলে বিস্ফোরণ হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে ।
জলপাইগুড়ি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক প্রদীপ কুমার বর্মা বলেন, "তিস্তায় ভেসে আসা সেনাবাহিনীর বাক্স বাড়িতে এনে খুলতেই ব্লাস্ট হয় । একজন মারা গিয়েছে । দুইজনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় । মানুষ লোভে পড়ে এই কাজটি করছে ৷ আমরা আর্জি জানিয়েছি যাতে কেউ কোনও কিছু পেলে পুলিশকে খবর দেন ।"