জলপাইগুড়ি, 1 ডিসেম্বর : শীতকালে বাঙালির পিঠে, পায়েস মানেই খেজুর গুড় ৷ পাড়ায় খেজুর গাছ থাকলেও তা কেটে খেজুর রস থেকে গুড় বানানোর লোক ছিল না ৷ এবার জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ির এলাকাগুলোতে গুড় বানাতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন বাবা ও ছেলে ৷ আইন মেনে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসে গুড় বানিয়ে বিক্রি করে রোজগার করে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বাসিন্দারা ৷
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের দুধিয়া গ্রামে এসে উপস্থিত হয়েছেন ৷ তাঁরা বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাগথানার মহম্মদ রহিম ও মহম্মদ আলমগির হোসেন ৷ সম্পর্কে বাবা-ছেলে ৷ চার বছর ধরে শীত পড়তেই রীতিমতো পাসপোর্ট বানিয়ে, ভিসা নিয়ে চ্যাংরাবান্দা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তিস্তা নদীর চরে দুধিয়া গ্রামে আসেন ৷ প্রতিদিন সকালে খেজুর গাছ কেটে, রস নামিয়ে, সেই রস জাল করে গুড় বানান তাঁরা ৷ সেই গুড় চলে যায় জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে ৷
বাড়িতে খেজুর গাছ থাকলেও গুড় বানিয়ে খাওয়া হত না ৷ কিন্তু বাংলাদেশের এই দুই ব্যক্তি এসে মুস্কিল আসান করে দিয়েছেন ৷ মহম্মদ রহিম জানান, প্রতিদিন 70টা খেজুর গাছ কেটে গড়ে 150 লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ হয় ৷ তারপর তা জাল দিয়ে তৈরি হয় প্রায় 30 কিলোগ্রাম গুড় ৷ তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে ৷ কিন্তু, যার যার গাছ সেই কাটে, আর গুড় বানায় ৷ লোকের মুখে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের দুধিয়া গ্রামে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে ৷ কিন্তু গাছ কাটার বা গুড় করার লোক নেই খবর পেয়েই সোজা চলে আসা ৷"
রীতিমতো ভিসা নিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিন মাস থেকে গুড় বানিয়ে তা বিক্রি করে রোজগার করে বাড়ি ফেরেন রহিমরা ৷ রুটিরুজির টানে এপার বাংলায় এলেও সবাইকেই আপন করে নিয়েছেন তাঁরা ৷ মহম্মদ আলমগির হোসেন বলেন, বাংলাদেশে তিনি কিছুই করেন না ৷ ভারতে বাবার সঙ্গে গুড় বানাতে এসেছেন তিনি ৷ অক্টোবরে ভিসা তৈরি করে নভেম্বরের শুরুতেই চলে আসেন তাঁরা ৷
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, "হোসেনদের জন্য খাঁটি গুড় খেতে পারছি ৷ না হলে জলপাইগুড়ি, ওদলাবাড়ি সহ অন্য বাজার থেকে গুড় কিনতে হত আমাদের ৷ আর আমাদের গাছের খেজুরের রসের গুড় নিজেরাই খাচ্ছি এটা বড় প্রাপ্তি ৷ এমন কী, আত্মীয়দেরও গুড় দিচ্ছি ৷ খুব ভালো লাগছে ৷"