জলপাইগুড়ি, 24 জুন : অত্যাবশ্যক পণ্যের মধ্যে পড়লেও, লকডাউনে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন দুধ ব্যবসায়ীরা। কারণ, অনেক বাড়িতেই বন্ধ হয়েছে দুধ নেওয়া। বিক্রি কমেছে মিষ্টির। ফলে মিষ্টির দোকানে ছানার চাহিদা কমেছে। এই অবস্থায় গোরুর খাবার জোগাড় ও নিজেদের পেট চালাতে সমস্যায় পড়েছেন জলপাইগুড়ির দুধ ব্যবসায়ীরা।
দুধ ব্যবসার একটা সিংহভাগই যায় মিষ্টির দোকানে। এরপর আসে রেস্তরাঁ, গৃহস্থ বাড়ি, চায়ের দোকান ইত্যাদি । লকডাউন ওয়ানে পুরোপুরিই বন্ধ ছিল মিষ্টির দোকান ও রেস্তরাঁ। এরপর ধীরে ধীরে মিষ্টির দোকান খুললেও চাহিদা গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে । অন্যদিকে কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে দুধের চাহিদা কমেছে গৃহস্থ বাড়িগুলিতে ।
পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয় তৃতীয়া ছাড়াও বৈশাখ মাসে থাকে বাঙালির নানা পুজো ও বিয়ের অনুষ্ঠান। ফলে প্রতিবছরই এই সময় দুধের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। তবে এবছর ছবিটা একবারেই উলটো। লকডাউনের জেরে মার খেয়েছে পয়লা বৈশাখ ও অক্ষয় তৃতীয়ার বাজার। বন্ধ হয়েছে পুজো পার্বন, বিয়ে বাড়ি। হলেও তা ঘরে-ঘরেই গুটি কয়েক লোককে নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এই সব অনুষ্ঠানগুলিতে চাহিদা বাড়ে মিষ্টি ও পনিরের। তবে লকটাউনে এই সবই কমে যাওয়ায় দুধের চাহিদাও কমেছে অনেকাংশ। ফলে দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতে সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ী ও গোয়ালারা।
পরিসংখ্যান বলছে, পয়লা বৈশাখে এবার জলপাইগুড়িতে 25 শতাংশও দুধের ব্যবসা হয়নি। আগে জেলায় প্রতিদিন প্রায় 30 কুইন্টাল দুধের কারবার হত। বিয়ের মরসুমে চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেত। কিন্তু, এবছর বৈশাখ মাসে সেটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে । লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় বর্তমানে তা নেমে এসেছে 10-15 কুইন্টালে । জলপাইগুড়ি শহরে দুধ আসে ধুপগুড়ি, চাউলহাটি, হলদিবাড়ি, রংধামালি, ভাটাখানা, কাঠের ব্রিজ, সুকান্ত নগর থেকে । লকডাউনের ফলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় শহরে দুধ সরবরাহ করতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা । ফলে প্রতিদিনই ফেলনা যাচ্ছে প্রচুর দুধ ।
জলপাইগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য লাল সিং জানান, "লকডাউনের আগে শহরে প্রতিদিন প্রায় 5 কুইন্টাল ছানার কারবার হত। এখন ছানা সরবরাহ হচ্ছে মাত্র 2 কুইন্টাল । জলপাইগুড়ি শহরে মূলত ছানা আসে ধুপগুড়ি থেকে। সেটা একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । শহরে ছানার ব্যবসায়ী রয়েছেন 20-25 জন। লকডাউনের জেরে মিষ্টির চাহিদা কমায়, কমেছে ছানার চাহিদাও । ফলে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। কর্মীদের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকদের।" শহরের এক মিষ্টি বিক্রেতা জয়ন্ত ভট্টাচার্যের গলাতেও শোনা গেল একই সুর। তিনি বলেন, লকডাউনে কমেছে মিষ্টি বিক্রি। ফলে আমরাও ছানা আমদানির পরিমাণ কমাতে বাধ্য হয়েছি। এতে স্বভাবতই দুধ ব্যবসায়ী ও গোয়ালারা সমস্যায় পড়েছেন।
জলপাইগুড়িতে এই দুধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত 300-400টি পরিবার। যানবাহনের অভাবের জেরে তাঁরা ঠিক মতো শহরে আসতে পারছেন না। এমনই এক দুধ বিক্রেতা বিনয় রায় জানিয়েছেন, "কোরোনা ভাইরাসের জেরে চরম সমস্যায় পড়েছে তাঁরা। রাস্তায় পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকায় গ্রাম থেকে শহরে আসতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এর পরেও পেটার দায়ে কোরোনার আতঙ্ক নিয়েই কাজে আসতে হচ্ছে। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে 50-60 কেজি দুধ আসছে। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় প্রচুর পরিমাণ দুধ নষ্ট হচ্ছে।" ছানার কারিগর উপেন পাল জানান, "লকটাউনের জেরে আগের মতো ব্যবসা এখন নেই। এভাবেই ব্যবসা চলতে থাকলে মালিকরা আর আমাদের কাজে রাখবেন না।"