জলপাইগুড়ি, 27 জুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রথম প্রচার সভা থেকে বিএসএফের বিরুদ্ধে সরাসরি সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ তুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সোমবার তিনি এই মন্তব্য করার পর থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে ৷ সেই বিতর্কের রেশ কাটার আগেই মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির প্রচার সভা থেকে আরও একবার বিএসএফের নাম শোনা গেল মমতার মুখে ৷ এবার তিনি সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা এই আধাসামরিক বাহিনীকে নিরপেক্ষ থাকার বার্তা দিলেন ৷ বললেন, ‘‘স্বাধীনভাবে কাজ করুন ৷ মোদি আজ আছে, কাল চলে যাবে ৷’’
মমতার বিএসএফ মন্তব্যে বিতর্ক: সোমবার থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ওই দিন তিনি প্রথম প্রচার সভা করেন কোচবিহারে ৷ সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, বিএসএফ গুলি করে সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করছে ৷ মঞ্চে কয়েকটি পরিবারের সদস্যকেও হাজির করা হয় ৷ ওই পরিবারের সদস্যরা বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৷ ওই পরিবারগুলির পাশে থাকার বার্তাও দেন তিনি ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক ৷ একজন মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে সরকারি বাহিনী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন, সেই প্রশ্নও ওঠে ৷
আরও পড়ুন: সীমান্তে যারা গুলি চালাবে তাদের বিরুদ্ধেও এফআইআর হবে, নিশীথকে ঠুকে আক্রমণ মমতার
বিএসএফকে নিরপেক্ষতার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর: এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির ক্রান্তির চেকেন্দাভাণ্ডারী মাঠে তিনি বলেন, বিএসএফের সবাই খারাপ নয় ৷ স্বাধীনভাবে কাজ করুন ৷ মোদি আজ আছে, কাল চলে যাবে ৷ কিন্তু আপনারা তো দেশের রক্ষা করার জন্য থাকবেন ৷ তাহলে অত্যাচার করা উচিত নয় ৷ মানুষের সঙ্গে মিলে কাজ করা উচিত ৷’’ তবে বিএসএফের গুলিতে নিহতদের পরিবারের পাশে যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি থাকবেন, সেটাও স্পষ্ট করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিএসএফের গুলিতে যারা মারা গিয়েছেন, আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা (নিহতের পরিবারের সদস্যরা) স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি ও 2 লক্ষ টাকা করে পাবেন ৷ আগেকার সিদ্ধান্ত৷ নতুন করে নয় ৷’’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার কোচবিহারের দিনহাটা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত ৷ তিনি তৃণমূল কর্মী বলে খবর ৷ বিজেপি ও তৃণমূলের সংঘর্ষে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ৷ এ দিন সেই প্রসঙ্গও এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে ৷ তিনি সরাসরি দিনহাটার নাম করেননি ৷ শুধু কোচবিহারের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘‘ আজ সকালেও শুনেছি বাংলাদেশের বর্ডার থেকে এসে গুলি চালিয়ে একজনকে মারা হয়েছে ৷’’
আরও পড়ুন: ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি, শুভেন্দুকে তীব্র আক্রমণ মমতার
মমতার বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএসএফের বিবৃতি: অন্যদিকে মমতার সোমবারের বক্তব্য নিয়ে বিএসএফ প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল ৷ সেখানে তারা লেখে, বিএসএফ হল ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষিত করার দায়িত্ব থাকা একটি পেশাদার বাহিনী ৷ সীমান্তবর্তী এলাকার কোনও বাসিন্দা ভোটারকে কোনও কারণে তারা ভয় দেখায়নি । সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ জাগানোর জন্য ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, অনুপ্রবেশ বা ভারতের ভূখণ্ড থেকে পালিয়ে যাওয়া আটকাতেই বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে । সীমান্তে চোরাচালান ও অন্য কোনও অবৈধ কার্যকলাপ রোধ করার দায়িত্বও বিএসএফের উপরই রয়েছে ।
ওই বিবৃতিতে বিএসএফ আরও জানায়, এখনও পর্যন্ত বিএসএফ বা অন্য কোনও সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে সীমান্ত এলাকায় কাউকে ভয় দেখানোর অভিযোগ পাওয়া যায়নি ৷ সীমান্ত ও অন্যান্য এলাকায় শান্তিপূর্ণ ও বাধাহীন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিএসএফ সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য বিএসএফ সদস্যদেরও মোতায়েন করা হচ্ছে । তাই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ তারা খারিজ করছে বলেও বিএসএফের তরফে জানানো হয় ৷
আরও পড়ুন: এবার থেকে পঞ্চায়েত আমরা নিয়ন্ত্রণ করব, দলীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি মমতার