ফুলবাড়ি, 15 নভেম্বর: গৃহবধূকে খুন করে আত্মহত্যা প্রেমিকের । মঙ্গলবার সকালে শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি 2 নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের খাটালবস্তি এলাকার একটি বাড়ি থেকে এক গৃহবধূর গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয় । মনে করা হচ্ছে, এই খুনের ঘণ্টাখানেক পরে রেললাইনে দাঁড়িয়ে সোশাল মিডিয়ায় লাইভ করে আত্মহত্যা করে প্রেমিক ৷ মৃত গৃহবধূর নাম রিয়া বিশ্বাস (30) ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্মঘাতী প্রেমিকের নাম কিরণ দেবনাথ ৷ তাঁর বাড়ি এনজেপি এলাকায় । রিয়া বিশ্বাসের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল কিরণের । দু'জনের বাড়ি সামনাসামনি বলেই জানা গিয়েছে ৷ মাঝে একবার বাড়ি ছেড়ে কিরণের সঙ্গে পালিয়েও গিয়েছিলেন রিয়া । পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় । তবে স্বামীর কাছে ফিরলেও কিরণের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল গৃহবধূ রিয়ার ।
কিরণ তাঁর সোশাল মিডিয়া লাইভে রিয়াকে 'রেশমা' উল্লেখ করেন ৷ খুনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, "আমি রেশমাকে খুব ভালোবাসতাম ৷ ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না ৷ তাই ওকে নিজের হাতে মেরে ফেলেছি ৷" পিছন দিক থেকে ট্রেন চলাচলের শব্দ শোনা যাচ্ছিল ৷ তাঁর অভিযোগ, "বিনা দোষে আমাকে জেল খাটাল ৷ পুলিশ ঘুষখোর ৷"
আরও পড়ুন: দিনদুপুরে ফাঁকা বাড়িতে গৃহ বধূর গলাকাটা দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য রায়গঞ্জে
জানা গিয়েছে, স্বামীর অবর্তমানে রিয়ার বাড়িতেও যেতেন কিরণ । পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাতে স্বামী বাড়িতে না-থাকাকালীন রিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাড়িতে যান কিরণ । এরপর সকালে ওই গৃহবধূর রক্তাক্ত দেহ মেলে বাড়ির শৌচাগারে । অনুমান, তাঁকে খুন করার ঘণ্টাখানেক পর রাঙাপানি রেললাইনে সোশাল মিডিয়া লাইভ করেন কিরণ ৷ সেখানে রিয়াকে খুনের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি । ঠিক সেই সময় তাঁকে পিছন থেকে ট্রেন ধাক্কা মারে । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কিরণের । পরে এনজেপি জিআরপি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় ।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, গৃহবধূ রিয়ার স্বামী অমিয় বিশ্বাস পেশায় কাঠমিস্ত্রি ৷ ওই দম্পতির একটি পাঁচ বছরের ছেলে রয়েছে । দম্পতি নদিয়ার বাসিন্দা হলেও দু'বছর আগে ফুলবাড়িতে আসেন । তবে মাঝেমধ্যে তাঁদের মধ্যে অশান্তি হত । ফুলবাড়ি 2 নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ রায় বলেন, "ফোনে খবর পাই ওই বধূর খুন হয়েছে ৷ এরপরই পুলিশে খবর দিই । পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখুক ।" শৌচাগারে বধূর মৃতদেহ নিয়ে তিনি বলেন, "এসে দেখি রিয়া বিশ্বাস গলাকাটা অবস্থায় শৌচালয়ে পড়ে আছেন ৷ স্বামী বাড়িতে নেই ৷ তাঁর জা জানান, দু'দিন আগে দুই ভাই মাকে আনতে নদিয়ার বাড়িতে গিয়েছেন (রিয়া বিশ্বাসের স্বামী ও তাঁর ভাই) ৷ তাঁদের ফোনে খবর দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁরা আসছেন ৷"
কিরণের ভাই হরিশ দেবনাথ বলেন, "দু'জনের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিল ৷" স্থানীয় বুথ সভাপতি সুভাষ রায় বলেন, "ভোর 3টের সময় হঠাৎ প্রতিবেশীরা ওই বাড়ি থেকে শিশুর কান্না শুনতে পায় । তারপর মায়ের খোঁজ শুরু হয় ৷ শৌচাগারে লাইট জ্বলছে ৷ সেখানে দরজা নেই, পর্দা দিয়ে ঢাকা ৷ পর্দা সরিয়ে দেখা যায় মহিলা গলাকাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ৷ আমিও এলে দেখলাম গলার নলি কাটা ৷" তিনিও নিশ্চিত গৃহবধূকে খুন করা হয়েছে ৷ তিনি আরও বলেন, "এই দম্পতি অন্য জায়গায় থাকতেন ৷ এক-দেড় বছর আগে এখানে এসে থাকতে শুরু করেন ৷ মাঝেমধ্যে তাঁদের মধ্যে অশান্তি হত ৷ আমি বুঝিয়েছিলাম, এখানে এরকম পরিবেশ নয় ৷ পরে খবর পেতাম তাঁরা নিজেদের মধ্যে মাঝে মাঝেই ঝামেলা করতেন আবার ভালো থাকতেন ৷"
পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি শুভেন্দ্র কুমার ও গোয়েন্দা বিভাগ ৷ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
আরও পড়ুন: ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক ! শান্তিপুরে দু'জনের বিয়ে দিলেন স্বামী