জলপাইগুড়ি, 7 ডিসেম্বর: কীর্তনের মাধ্যমে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে রেল রোকো সফল করলেন কামতাপুরি স্টেট ডিমান্ড ফোরামের সদস্যরা । পুলিশের নজর এড়িয়ে রেললাইনে শুয়ে পড়ে রেল রোকো (Rail Blockade) সফল করেছেন সমর্থকরা ।
কীভাবে এত মানুষকে একত্রিত করলেন আন্দোলনের নেতারা ? পুলিশ উত্তর খুঁজতেই বেরিয়ে এল কীর্তনের কৌশলে । তবে লোক জমায়েতের অভিনব এই কৌশলে বাজিমাত করেছেন কামতাপুরি আন্দোলনের (Kamtapur Movement) নেতা প্রয়াত অতুল রায়ের ছেলে অমিত রায় । তাঁর দাবি, কীর্তন ছাড়া কোনও বুদ্ধিতেই পুলিশের নজর এড়িয়ে আমাদের সমর্থকদের একজোট করা সম্ভব ছিল না । তাই এই কৌশল নিতে হয়েছে ৷
কামতাপুরি রাজ্য ও ভাষার স্বীকৃতির দাবি দীর্ঘদিনের বারবার রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে দরবার করেও কোনও সদুত্তর মেলেনি বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের ৷ তাই কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণে উত্তরবঙ্গ (North Bengal) জুড়ে রেল রোকোর ডাক দিয়েছিল কামতাপুর পিপলস পার্টি (ইউনাইটেড) ও কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির যৌথ মঞ্চ কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড ফোরাম (KSDF) । সেই মোতাবেক উত্তরবঙ্গের একলাখি, কোচবিহার ও ময়নাগুড়িতে রেল অবরোধ করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল । কিন্তু রেলের তরফে অবরোধ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল ৷ পাশাপাশি অবরোধ ঠেকাতে পুলিশি পদক্ষেপের জন্য প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারদের অনুরোধ করা হয় ৷
ফলে অবরোধ আটকাতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সক্রিয় ছিল পুলিশ ৷ বিভিন্ন স্টেশনে অনেক পুলিশ মোতায়েন করা হয় ৷ নিউ কোচবিহারে কোনও অবরোধকারী খুঁজে পাওয়া যায়নি ৷ এমনকী, জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ময়নাগুড়িতেও মঙ্গলবার রাতে অবরোধের উদ্দেশ্যে স্টেশনে কেউ হাজির হয়নি ৷ ফলে বুধবারের অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করা যাবে বলে প্রায় নিশ্চিন্তই ছিল পুলিশ ৷
কিন্তু সকাল হতেই সম্পূর্ণ উলটো ছবি ধরা পড়ে ৷ রেল আচমকাই হাজির হয়ে যান অনেক অবরোধকারী ৷ থমকে যায় ট্রেন পরিষেবা ৷ শিলচর থেকে শিয়ালদাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস অবরোধে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে পড়ে ৷ পরে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অবরোধ ওঠে ৷
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এত লোক জড়ো করল ওই যৌথমঞ্চ ৷ জানা গিয়েছে, পুলিশের চোখে ধুলো দিতে রেল লাইন সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার রাতে কীর্তনের আসর বসানো হয়েছিল ৷ সেখান থেকেই সকালে রেল লাইনে পৌঁছে অবরোধ করা হয় ৷ ফলে পুলিশ কিছু আন্দাজ করতে পারেনি ৷ কামতাপুরি সংগঠনের নেতা বিমল রায় জানান, ময়নাগুড়ি ব্লকের চুড়াভাণ্ডার, ময়নাগুড়ি বাইপাস, সদর খই ও রাজারহাটে অবরোধকারীদের জন্য ক্যাম্প করা হয়েছিল ৷ পুলিশ গাড়ি আটকাতে পারে এটা আন্দাজ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷
কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির তথা কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান অমিত রায় বলেন, ‘‘পুলিশ যেভাবে আমাদের রেল রোকো কর্মসূচি বানচালের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কর্মীদের আটকানো, কাউকে থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কাজ করছিল, তাতে আমাদের কর্মীরা রেল রোকো কর্মসূচিতে আসার পথে বাধা পাচ্ছিল । তাই আমরা নিউ ময়নাগুড়ির স্টেশনের কাছে ছোট ছোট করে বিভিন্ন বাড়িতে কীর্তনের মাধ্যমে সমর্থকদের একজোট করেছিলাম । যাতে পুলিশ কোনও ভাবেই কোনও কিছু সন্দেহ করতে না পারে । আর কীর্তনে প্ল্যানে আমরা সফল হয়েছি ।’’
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্যের দাবিতে রেল রোকো আন্দোলনের ডাক