জলপাইগুড়ি, 6 ডিসেম্বর: পানীয় জলের সমস্যা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার এজলাস থেকে নেমে এসে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ বুধবার ওই মামলার শুনানিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের তিনি জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসের মধ্যে গ্রামবাসীরা জল না পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ এ দিন এই মামলার রায় তিনি দেননি৷ মামলাটি তিনি নিজের কাছে রেখেছেন ৷ আগামী 9 ফেব্রুয়ারি পানীয় জলের সমস্যার সমাধান হল কি না, তা যাচাই করে দেখবেন বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি ৷
অভিযোগ, দার্জিলিং জেলার নক্সালবাড়ি ব্লকের নক্সালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের শেপ দল্লা জোত গ্রামের আদিবাসী বাসিন্দারা পানীয় জল পাচ্ছেন না । দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন দফতরে আবেদন নিবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি । এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই । গ্রামে রাস্তার ধারে কয়েকটি পানীয় জলের ট্যাপ লাগানো হয় 2014-15 সালে । কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি । এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় মাঞ্ঝা নদীর জল খেয়ে বেঁচে আছেন ।
তাই পানীয় জলের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের দ্বারস্থ হন গ্রামবাসীরা । মঙ্গলবার সেখানেই মামলা ওঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ৷ গ্রামবাসীদের সার্কিট বেঞ্চে ডেকে এজলাস থেকে নেমে এসে গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা শোনেন বিচারপতি । জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের তুলোধনাও করেন তিনি ৷
বুধবার আদালতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই পানীয় জল পাবেন গ্রামবাসীরা । এর পরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ও ঠিকাদারকে ডেকে নিয়ে সতর্ক ৷ জানান, জানুয়ারি মাসের মধ্যে গ্রামবাসীরা জল না পেলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে ৷
কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের সরকারি আইনজীবী হীরক বর্মন বলেন, ‘‘আজ মহামান্য বিচারপতি কোনও রায় দেননি । তিনি মামলাটি নিজের কাছেই রাখলেন । আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই গ্রামবাসীরা জল পেয়ে যাবে বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে । বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী 9 ফেব্রুয়ারি তিনি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জল পেল কি না গ্রামবাসীরা, তার রিপোর্ট দেখবেন ।’’
সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটির সম্পাদক তথা স্থানীয় বাসিন্দা দীপু হালদার বলেন, ‘‘শেপ দল্লা জোতের গ্রামের মানুষের কারণে এবার জল পাবেন আরও পার্শ্ববর্তী তিনটি গ্রামের মানুষ । আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই জল পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে বিচারপতিকে ।’’
একই সঙ্গে তিনি জলের দাবিতে চলা দীর্ঘ লড়াইয়ের কথাও শুনিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘জলের দাবিতে জেলাশাসক, কমিশনার সবাইকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনও লাভ হয়নি বলে । আমরা স্বাধীনতার 75 বছর পরেও পানীয় জলের জন্য হাইকোর্টের আসতে হল ।’’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তবে আজ মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন আমাদের গ্রামে জল তাড়াতাড়ি পৌছে দেওয়া হবে । তিনি আরও পরে বলতে পারতেন । আমরা এত সরকারি দফতরে এত দাবি জানালাম, তাঁর কানে গেল না ! তিনি জানতে পারলেন না !’’
আরও পড়ুন: