ময়নাগুড়ি, 19 জুন : উত্তরবঙ্গের একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত জল্পেশ মন্দির । এই মন্দির অত্যন্ত প্রাচীন ও বিখ্যাত একটি শিব মন্দির । বিখ্যাত এই মন্দির জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত । এই জেলার ময়নাগুড়ি থেকে 7-8 কিলোমিটার দূরে জরদা নদীর ধারে জল্পেশ মন্দিরের অবস্থান । জল্পেশ মন্দিরকে অত্যন্ত পবিত্র স্থল হিসেবে বিশ্বাস করেন ভক্তরা ।
1524 সালে কোচবিহারের রাজা মহারাজ নারায়ণের বাবা শ্রী বিশ্ব সিংহ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । পরবর্তীকালে তিনি 1563 সালে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন । আবার 100 বছর পর রাজা প্রাণ নারায়ণ 1663 খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন । 1899 সালের 30 জানুয়ারি রাজা জগেন্দ্র দেব রায়কতের স্ত্রী রানি জগদেশ্বরী দেবীর তত্ত্বাবধানে মন্দিরটি আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় ।
আবার অন্য মতে, 800 খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি তৈরি করেন বাঘদত্তার উত্তরসূরি জল্পেশ। সেই থেকে এই মন্দির অনেক সংস্কার ও পরিবর্তন হয়েছে । কথিত আছে, বখতিয়ার খিলজি যখন কামরূপ আক্রমণ করেছিলেন, এই মন্দিরটিও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল । পরে, দ্বাদশ খ্রিস্টাব্দে ভুটানের রাজা এই মন্দির পুনরায় গড়ে তোলেন ।
আরও পড়ুন...উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে উধাও ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত রোগী
প্রতিবছর শিবরাত্রি উপলক্ষে জল্পেশ মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গে জল ঢালতে আসেন অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী । মন্দিরে ভক্তদের বেশি ভিড় হয় জুলাই-অগস্ট মাসে । তবে ভক্তরা মহাদেবের কাছে পুজো দেওয়ার জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে আসেন । তীর্থযাত্রীদের ভিড় শ্রাবণী মেলায় উপচে পড়ে । শিবরাত্রির দিন সকাল থেকেই ময়নাগুড়ি ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি থেকে ভক্তদের ঢল নামতে শুরু করে জল্পেশ মন্দিরে ।
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এবছর শিবরাত্রির দিন সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থা ।
কিন্তু সেই করোনার কাঁটাতেই একপ্রকার বিদ্ধ হয়ে বেহাল অবস্থা মন্দির কর্তৃপক্ষ ও নিয়মিত পুরোহিতদের । তবে এখন চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা । মন্দির প্রাঙ্গণ ফাঁকা, ধু ধু করছে এই পর্যটন কেন্দ্র । জনমানব শূন্য হয়ে রয়েছে এই মন্দির, নেই কোনও ভক্তের সমাগম ।
করোনাকালে রাজ্যে চলছে কার্যত লকডাউন, জারি হয়েছে একাধিক বিধিনিষেধ । মন্দির বন্ধের কারণে ভক্তদের ভিড় না থাকায় এবং ন্যূনতম রোজগারের রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে মন্দিরের পুরোহিতদের । করোনা হাজির হওয়ায় গত বছরের পাওনা বেতন সময়মতো পাননি । পুজো অর্চনা করেই তাঁদের সংসার অতিবাহিত হয় । যদিও এই পরিস্থিতিতে মন্দিরের স্থায়ী আমানত ভাঙিয়ে পুরোহিতের ভাতা চালু করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ । তবে এতে লাভ হয়নি সেভাবে । কীভাবে কাটবে জীবন? পরিবার নিয়ে কীভাবেই বা চালাবে সংসার? যদি আগামী শ্রাবণীমেলা হয় তাহলে মিলবে একটু সুরাহা । এখন পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার প্রার্থনা করছেন তাঁরা ৷