জলপাইগুড়ি, 22 জুলাই : রাজ্যে ক্রমেই বাড়ছে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা । প্রতিদিনই সংক্রমিত হচ্ছে দু'হাজারেরও বেশি মানুষ । এই পরিস্থিতিতে চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলিতে । সেখানেও বেড সংখ্যা সীমিত । যার জেরে রোগীদের রাখা হচ্ছে হাসপাতালের মেঝের বিছানায় ৷ একইসঙ্গে ঠাসাঠাসি করেও রয়েছেন একাধিক রোগী । ঠিক এই ছবি ধরা পড়েছে জলপাইগুড়ির বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনের কোরোনা হাসপাতালে । হাসপাতালের ভিতরের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায় । সেখানে দেখা যাচ্ছে, ওই হাসপাতালে বেশ কয়েকজন কোরোনা রোগী একটি হলঘরের মেঝেতে বিছানা পেতে বসে রয়েছেন । আশপাশে বেড রয়েছে তবে প্রতিটি বেডেই রোগী ভরতি । কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতালগুলির পরিস্থিতিও যে খারাপ তা একবাক্যে স্বীকার করছেন জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ।
সামান্য উপসর্গ থাকলে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য সরকার । শারীরিক অবস্থা একান্ত খারাপ হলে তবেই হাসপাতালে ভরতি হওয়ার কথা প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে । কিন্তু, রাজ্যের কয়েকটি জেলায় সামান্য উপসর্গ থাকলেই হাসপাতালে ভরতি হচ্ছে সাধারণ মানুষ । আবার অনেক জায়গায় লোক সংখ্যা অনুযায়ী কোরোনা হাসপাতালের বেড সংখ্যা কম । যেমন, জলপাইগুড়ির বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গনের কোরোনা হাসপাতাল ৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাচ্চাকে নিয়ে মেঝেতে বসে রয়েছেন মহিলা । শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত তাঁকে বেড দেওয়া সম্ভব হয়নি ।
ভিডিয়োটি দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, জলপাইগুড়িতে গতকাল বিকেল পর্যন্ত 64 টি বেড খালি ছিল ৷ তাহলে ওই মহিলা বেড পেলেন না কেন ? তাহলে কী বেড সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে সরকার? না হাসপাতালে দেওয়া তথ্যে অসংগতি রয়েছে ? অনেকেই বলছেন, রাজ্য সরকারের হিসেব অনুযায়ী, জলপাইগুড়িতে এপর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা মোট 898 । হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন 553 অর্থাৎ বাকিরা হাসপাতালেই আছেন । জেলায় মোট সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা 341 । শুধু জলপাইগুড়ির বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গন হাসপাতালের শয্যা সংখ্যাই 200 টি । তাহলে বাকি হাসপাতালের কী অবস্থা । সেখানে কি রোগী ভরতি নেওয়া হচ্ছে না ? না কি সরকারের কাছে সঠিক তথ্য নেই ?
এই বিষয়ে BJP-র জলপাইগুড়ি জেলা সহ-সভাপতি অলোক চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, জলপাইগুড়ি কোরোনা হাসপাতালে আক্রান্তরা নিচে বেড পেতে শুয়ে আছে । ওষুধের ব্যবস্থা নেই, জলের ব্যবস্থা নেই । জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল ঘুঘুর বাসায় পরিণত হয়েছে । জলপাইগুড়ির এমন পরিস্থিতির জন্য OSD সুশান্ত রায়কে দায়ি করেছেন তিনি । তাঁর কথায়, ''কিছু বেড আছে যা শাসকদলের লোকেদের জন্য । দিদি যা বলছেন সুশান্ত রায় তাই করছেন ।''
জলপাইগুড়ির কোরোনা হাসপাতালগুলিতে শুধু বেড নিয়েই নয়, অভিযোগ উঠছে নিম্নমানের খাবার ও প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার দেওয়া নিয়েও । অনেকেই বলছে, সকালে খাবার ঠিকঠাক পাচ্ছেন না । আবার কারও দাবি, কোরোনায় ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য যেখানে কলা, ডিম, দুধ খাবার হিসেবে দেওয়ার কথা, তার বদলে দেওয়া হচ্ছে লুচি, তা'ও তিনটে । যা খেয়ে পেট ভরছে না । জলপাইগুড়ির আর এক কোরোনা হাসপাতালের রোগীর কথায়, তাঁদের দুপুরে বেশ কয়েকদিন ধরে কচুর ঝোল দেওয়া হচ্ছে । যার মান অত্যন্ত খারাপ । ভরতি হওয়ার পর দু'দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত তাঁদের কোনও ডাক্তার দেখেনি ।
এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি মহিলা মোর্চার জেলা সভাপতি টিনা গঙ্গোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ''মালবাজার থেকে কোরোনা হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন কয়েকজন । তাঁদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না । জল দেওয়া হচ্ছে না । একটা বাচ্চা সঙ্গে আছে, তাকেও ঠিকমতো খেতে দেওয়া হচ্ছে না । মেঝেতে শুতে হচ্ছে । তাঁরা আমাদের কাছে সাহায্য চাইছে । কিন্তু আমাদের কোরোনা হাসপাতালে যাওয়া নিষেধ আমরাও কিছু করতে পারছি না । মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে পারছেন না, তিনি ব্যর্থ । আমরা তাঁর পদত্যাগ চাই ।''
জলপাইগুড়ি CPI(M) নেতা বিপুল সান্যাল অভিযোগ করেন, জলপাইগুড়িতে যেভাবে প্রতিদিন কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তা সামলানোর পরিকাঠামোই নেই জেলায় । খুব তাড়াতাড়ি জলপাইগুড়িতে কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে ।
সব অভিযোগই কার্যত এক কথায় মেনে নিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামানিক । তিনি জানান, খুব খারাপ অবস্থা রোগীদের ৷ তাদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না । তাই নতুন করে সেন্টার খোলা হচ্ছে ।