জলপাইগুড়ি, 1 সেপ্টেম্বর: 'ইন্ডিয়া' জোট গোটা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কী হবে ? শুক্রবার মহম্মদ সেলিম আর অধীর চৌধুরী ধুপগুড়ির উপনির্বাচনে বিজেপি আর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখবেন। কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস 'ইন্ডিয়া' জোটের শরিক হিসেবে লড়াই করে তবে আগামী দিনে রাজ্যে বামপন্থীরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে বলেই মনে করছে বামেদের একাংশ। বাম শরিকদের দাবি, মুখ দেখানো শুধু না, বেশি মাখামাখি করলে তার পরিণাম নতুন বন্ধুরা যখন পাশে থাকবে না, তখন বামপন্থীদেরই নেতারা যারা একযোগে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার স্লোগান দিচ্ছে তারাই মুখ দেখাতে পারবে না। বামফ্রন্টের নেতাদের কাছে জবাব দেওয়ারও কিছু থাকবে না। 'ইন্ডিয়া' জোট নিয়ে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সভাপতি গোবিন্দ রায়।
অন্যদিকে, 'ইন্ডিয়া' জোট নিয়ে প্রশ্ন শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর স্পষ্ট দাবি, রাজ্যে বিজেপি আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব মানুষ এককাট্টা হচ্ছে। সাগরদিঘি দেখিয়েছে, ধুপগুড়িও দেখাবে বলেও সাফ জানান তিনি। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠক হচ্ছে মুম্বইয়ে। তৃণমুল, বাম ও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু রাজ্য কংগ্রেস ও বামেদের প্রধান শত্রু তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেস ও বামেদের সংঘাত চরম আকারে পৌঁছয়। এদিকে ধুপগুড়ি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেস জোট প্রার্থী দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। এমন পরিস্থিতি 'ইন্ডিয়া' জোটে যদি কংগ্রেস, তৃণমুল ও বামেরা সহমত হয় তাহলে ধুপগুড়ি উপ-নির্বাচনে কীভাবে প্রচার করবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সভাপতি গোবিন্দ রায়।
এদিন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সভাপতি গোবিন্দ রায় বলেন, "'ইন্ডিয়া' জোট নিয়ে আমরা চিন্তিত। জোটের শরিক কংগ্রেস দল আছে। কংগ্রেস মধ্যমনি। তৃণমূল আছে, বামপন্থীরাও আছে। বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে 'ইন্ডিয়া' জোটের ক্ষেত্রে এটাই বার্তা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কী হবে! পশ্চিমবঙ্গে আমরা ফরওয়ার্ড ব্লক মনে করি তৃণমূল কংগ্রেসের আরএসএস-এর মতবাদকে সামনে রেখে বিজেপিকে জায়গা করে দিয়েছে। এই কারণে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিরোধী লড়াই করতে হলে তৃণমূল বিরোধী লড়াই আমাদের করতে হবে। জোটের হুবহু প্রতিরূপ পাওয়া যাবে না। জোটের শরিকদেরও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে আদর্শগত কারণে।"
ধুপগুড়িতে উপনির্বাচন এমন একটা সময়ে হচ্ছে। সেখানে মুম্বইতে 'ইন্ডিয়া' জোটের তৃতীয় বৈঠক হচ্ছে। আর বাম ও কংগ্রেসের সভা আছে প্রার্থীর সমর্থনে। বাম-কংগ্রেসের সভায় বামেদের তরফে মহম্মদ সেলিম যেমন আছেন, তেমনই অন্যদিকে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী থাকবেন। একই মঞ্চে দুই জনই বিজেপি বিরোধী ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধী বক্তব্য রাখবেন। ফরওয়ার্ডব্লক নেতা বলেন, "সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের এই জোট হলে বামফ্রন্টের নেতাদের কাছে জবাব দেওয়ারর কিছু থাকবে না। এটাই আশঙ্কার বিষয়। আজকের সভায় CPIM ও কংগ্রেসের নেতাদের বক্তব্য। এখানে বামফ্রন্টের শরিক নেতাদের কোন নাম নেই। তাতে প্রচারপত্রে বা পোস্টারে। আমি বাংলা কমিটির সভাপতি হিসেবে সেখানে গিয়ে বসে থাকতে পারি না। কারণ বক্তা তালিকায় আমার নাম নেই। আমি যাচ্ছি না। আমাদের কর্মীরা যাবেন।"
আরও পড়ুন: ধূপগুড়ি দখলে মরিয়া বিজেপি-তৃণমূল-সিপিএম, প্রচারে চাঁদের হাট সবপক্ষের
এদিন ধুপগুড়ি উপনির্বাচনে সভা করতে এসে 'ইন্ডিয়া' জোটের কথা শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেলিমকে জোট প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "'ইন্ডিয়া' জোট হোক। ধুপগুড়ি থেকে ধুপগুড়ির খবর হবে। ধুপগুড়ি থেকে মুম্বই-এর খবর হবে না।" জোট নিয়ে কতটা আশাবাদী প্রশ্নের ঊত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন, "সেটা মুম্বই থেকে জানতে পারবেন সংবাদ মাধ্যমে। আমি এখান থেকে বলব ? মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় নবান্নে বসে বুঝতে পারে যাদবপুরে কে খুন করেছে। পুলিশ বুঝতে পারে দুর্ঘটনা হলে কার কী দোষ আছে। আমাদের দেশে ট্রেইন্ড করা কুকুর আছে। দূর থেকে তারা শুঁকে বলতে পারে। মহম্মদ সেলিম সেটা বলতে পারবে না।" ধুপগুড়িতে জোট কতটা শক্তিশালী সেই প্রশ্নের উত্তরে সেলিম জানান, মানুষ বলবে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা এই জায়গায় যেখানে বিজেপি আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব মানুষ এককাট্টা হচ্ছে। সাগর দিঘী দেখিয়ে ধুপগুড়িও দেখাবে।