জলপাইগুড়ি, 3 নভেম্বর: একদিকে তিস্তায় ভেসে আসা বিস্ফোরক ফেটে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক, অন্যদিকে কৃষিজমিতে হাতির আক্রমণ ৷ দুই এর বেড়াজালে বিপাকে তিস্তাপাড়ের কৃষকরা। প্রতিবছর এই সময়ে তিস্তার চরে কয়েক হাজার একর জমিতে সবজি চাষ হয়ে থাকে। এবার চাষ করতে গিয়ে প্রথমেই সিকিমের জলাশয়ের ভাঙা জলে চাষের জমি ভেসে গিয়েছে। সেই ধাক্কা সামাল দিতে দিতেই একে একে উদ্ধার হচ্ছে বিস্ফোরক।
সিকিমের সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ভেসে যাওয়ায় সেনার বিভিন্ন বিস্ফোরক উদ্ধার হচ্ছে। সেনাবাহিনী সেই বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করছে। ফলে তিস্তা নদীর চরে কোথায় বালির নীচে বিস্ফোরক আছে তা কৃষকরা জানতে পারছে না। চাষ করতেই বেরিয়ে আসছে বিস্ফোরক। ইতিমধ্যেই চাষ করতে গিয়ে বিস্ফোরক ফেটে আহত হয়েছেন এক চাষী। এরই মাঝে লাগাতার হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ জলপাইগুড়ি তিস্তাপারের বাসিন্দারা ৷ বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল থেকে হাতির পাল তিস্তার চরে আসছে খাবারের খোঁজে।
তিস্তা নদীর চরে হাজার হাজার বিঘা জমিতে চাষ করেন কৃষকরা। এই ফসল খাবারের লোভেই হাতির পাল হানা দিচ্ছে বলে মনে করছে তারা। আর তাতেই ঘুম উড়ে গিয়েছে কৃষকদের। কৃষকের জমির ফসল খেয়ে যাচ্ছে হাতির পাল। অন্যদিকে, ঘর-বাড়িও নষ্ট করছে। এতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাতকাটা, বারপাটিয়া, পাহারপুর গ্রামপঞ্চায়েতের তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকার বিভিন্ন ধরনের ফসল-সহ শীতকালীন ফসল উৎপাদন করেন স্থানীয় কৃষকরা। অভিযোগ বেশকিছু দিন থেকে বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল থেকে প্রায় 80 থেকে 100টি হাতির একটি দল জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে। জমিতে থাকা কৃষকদের উৎপাদন করা বিভিন্ন ফসল খেয়ে যাচ্ছে হাতির দল ৷ ফসল খেতে এসে ভাঙছে কৃষকদের বাড়ি ঘর। কার্যত ফসল ও নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন কৃষকরা ৷ বন দফতর একাধিকবার হাতিগুলিকে জঙ্গলে ঢুকিয়ে দিলেও ফের হাতি লোকালয়ে চলে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সেনাবাহিনীর আধিকারিক জানান, তিস্তার নদীর চরে প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার হচ্ছে। তারা গ্রামবাসী এবং প্রশাসনের কাছেও সতর্ক থাকার আবেদন করছে। কোনও বিস্ফোরক বস্তু দেখা গেলে সেনাকে তৎক্ষণাৎ জানাতেও বলা হয়েছে ৷ যাতে তারা সেগুলি নিস্ক্রিয় করতে পারে। স্থানীয় কৃষক অজয় রায় বলেন, "বন্যার সমস্যা চলে গিয়েছে ৷ এরপর বোম পাওয়া গেল। এখন বড় সমস্যা হল হাতি। ফসল হলেই হাতি সব নষ্ট করে খেয়ে চলে যাচ্ছে।প্রতিদিন হাতি আসছে। কীভাবে চাষ হবে সেটাই চিন্তার ! আবার ট্র্যাক্টর নিয়ে চাষ করতে গেলে যদি বোমা ফেটে যায় সেও চিন্তার ৷ সবেতেই বিপদ। পুজোতে চাষাবাদ করতে পারিনি। বোমার আতঙ্কে চাষ করতে পারছি না। প্রতিদিনি বোম নিস্ক্রিয় করা হচ্ছে। চাষীরা এখন নিরুপায় হয়ে আছে।"
আরও পড়ুন: পৃথক অভিযানে উদ্ধার কোটি টাকার সোনা ও মাদক! গ্রেফতার রাজস্থানের বাসিন্দা-সহ 4
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য কৃষ্ণ দাসের দাবি, প্রশাসন এখনই এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা না নিলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে চলেছে। আগামীদিনে কাঁচালঙ্কা, আলু, ধান-সহ বিভিন্ন শাক সবজির আকাশছোঁয়া হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি ৷