জলপাইগুড়ি, 6 জুন: এই এলাকায় ভালো কর্মসংস্থান থাকলে তরুণকে এভাবে ভিন রাজ্যে যেতে হত না । তরুণের নিথর দেহ এলাকায় পৌঁছতেই স্থানীয় যুবকদের মুখে শোনা গেল এ কথাই । ওড়িশার বালাসোরে জোড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তরুণ রায়ের ৷ তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার মাধবডাঙ্গা 1 গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়নাগুড়ি গ্রামে ৷ মঙ্গলবার সকালে গ্রামে পৌঁছয় ওই যুবকের দেহ ৷ জেলা প্রশাসনের তরফে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় দেহটি ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণ প্রায় সাত বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতেন ৷ তিনি গাড়ির চালক ছিলেন । কর্ণাটক ও কেরলে কাজ করেছেন তিনি ৷ এবার তামিলনাড়ুতে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তরুণ । ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে কাজে যোগ দিতে যাওয়ার পথেই ওড়িশার বালাসোরের বাহানাগা বাজারের কাছে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার মুখে পড়ে করমণ্ডল ও যশবন্তপুর এক্সপ্রেস দুটি ৷ করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে ছিলেন তরুণ ৷ এই ঘটনায় মৃত্যু হয় বছর ত্রিশের ওই যুবকের ।
আরও পড়ুন: 'চোখের সামনে বন্ধু চলে গেল, আর বাইরে কাজে যাব না !' নাগরাকাটার পরিযায়ী শ্রমিকের আর্তনাদ
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে তরুণের সঙ্গে ছিলেন শৈলেন রায় । তাঁরা একই সঙ্গে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন বাড়ি থেকে । ট্রেন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন শৈলেন । কিন্তু তরুণের মৃত্যু যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তাঁর পরিবার-সহ ময়নাগুড়ির গ্রামের মানুষ । পুজোর সময় বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁদের । কিন্তু তাঁর আগেই তরুণ বাড়ি ফিরলেন । তবে মৃত অবস্থায় ৷
ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তরুণের মা সুমিত্রা রায় । তাঁকে হাসপাতালেও ভরতি করা হয়েছে । তরুণের মৃত্যুতে গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে । উত্তরবঙ্গে ট্রেন দুর্ঘটনার ভয় এখন ভাবাচ্ছে শ্রমিকদের । স্থানীয় বাসিন্দা শশাঙ্ক বর্মন এবং ভুপাল বেধ বলেন, "এখানে কাজ করলে 300-400 টাকা দিন মজুরে কাজ করতে হয় । এখানে বড় কলকারখানা নেই । বড় কাজ নেই তাই ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে হয় ।"
আরও পড়ুন: আসছি বলে চলে গেলেন, রেল দুর্ঘটনায় মৃত ডুয়ার্সের শ্রমিকের দেহ ফেরাতে হিমশিম পরিবার
প্রসঙ্গত, রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই বলে বারেবারে অভিযোগ করেছে বিরোধী দলগুলি ৷ এই নিয়ে বিজেপি থেকে বামেদের নেতা মন্ত্রীরা সরাসরি আক্রমণ করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ বালাসোরের দুর্ঘটনায় পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু ফের বাংলায় কর্মসংস্থান নিয়ে প্রশ্ন খাড়া করেছে ৷ মৃতদের পরিবারের তরফ থেকে গ্রামবাসীরা দাবি করেছে রাজ্যে কাজ থাকলে ভিন রাজ্যে যেতে হয় না শ্রমিকদের ৷