জলপাইগুড়ি, 30 জুন : এক মাস, দুই মাস, ছয় মাস নয় পাক্কা ছয় বছর ধরে আটকে ধূপগুড়ি-শিলিগুড়ি পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়ক (East West corridor) নির্মাণের কাজ ৷ জমি জটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে থমকে সড়ক নির্মাণের কাজ ৷ যা নিয়ে নাজেহাল জেলা প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ । জমি জট সমস্যার সমাধানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠকে বসেছে রাজ্য সরকার । কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি ৷ এর সঙ্গে দোসর হয়েছে বর্ষাকাল ৷ বৃষ্টিতে স্থানীয় ও নিত্য যাতায়াতকারীরা সমস্যায় পড়েছেন ৷
ইস্ট ওয়েস্ট করিডোরের (East West corridor) শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি হয়ে অসমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে এই মহাসড়ক । 2010 সালে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য নোটিফিকেশন জারি করে ৷ 2015 সালে জমি নেওয়া শুরু হয় । কিন্তু 155 কিলোমিটার রাস্তার কাজের জন্য পুরোপুরি জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সমস্যায় পড়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ । সেই 2015 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত জমি জটে জেরবার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ । পিছিয়ে গিয়েছে চার লেনের পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের কাজ ।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, একমাত্র উত্তরবঙ্গ ছাড়া দেশের আর কোনও প্রান্তে এই মহাসড়কের (Mahasadak) কাজ বাকি নেই । শিলিগুড়ি লাগোয়া ঘোষপুকুর থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে আলিপুরদুয়ারের সলসলাবাড়ি পর্যন্ত 155 কিলোমিটার পথেই শুধু সড়কের কাজ থমকে রয়েছে । এই পুরো অংশকে তিন অংশে ভাগ করে কাজ শুরু করেছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ । প্রথম অংশ ঘোষপুকুর থেকে ধূপগুড়ি ৷ এই অংশের কাজ 2018 সালে শেষ করবার লক্ষ্য মাত্রা নেওয়া হয় । জমি জটের গেরোয় তা হয়নি । পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় 2020 সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হবে । তাও হয়নি ।
কিন্তু কী কারণে এই জমিজট ? জানা গিয়েছে, মহাসড়ক নির্মাণের জন্য বেশ কিছু পরিবার নিজেদের জমি দিয়েছে ৷ কিন্তু পরিবর্তে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তাতে কয়েকটি পরিবার সন্তুষ্ট নয় ৷ চার থেকে পাঁচটি পরিবার বেঁকে বসায় মহাসড়কের কাজ এখন বিশ বাঁও জলে ৷ এদিকে মহাসড়কের কাজ আটকে থাকায় ধরলা নদীর উপর তৈরি নতুন সেতুর সংযোগ হচ্ছে না ৷ নতুন সেতুর পাশেই জাতীয় সড়কের পুরানো ভাঙাচোরা সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে ৷ 31 নম্বর জাতীয় সড়কের ময়নাগুড়ি থেকে জলপাইগুড়িগামী ধরলা নদীর উপর ফোর লেনে এই নতুন সেতু করা হয়েছে । সেতুটি চালু হলে যানজট সমস্যার যেমন সমাধান হবে তেমনি দুর্ঘটনার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে ।
আরও পড়ুন : Siliguri Air Pollution : বাতাসে বিষ, গাড়ির ধোঁয়ায় দমবন্ধ ; সঙ্কটে শিলিগুড়ি
ধূপগুড়ি বাইপাস এলাকায় সাড়ে আট কিলোমিটার মহাসড়কের রাস্তার সার্ভের কাজ হয়নি । এর জন্যও ধূপগুড়ি ব্লক অফিসে স্থানীয়দের সঙ্গে ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আলোচনায় করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা চলছে । এছাড়া রাজগঞ্জ ব্লকের বিন্নাগুড়িতেও জমিজটের একটা সমস্যা রয়েছে । এক কিলোমিটার রাস্তার জমির সমস্যার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কাজ করতে পারছে না । যারা জমি দিচ্ছেন তাদের দাবি, জমির দাম না পাওয়ার দরুণ জমিজট তৈরি হয়েছে ।
এই বিষয়ে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিবম বসুনিয়া বলেছেন, "জমিজটের সমস্যা রয়েছে । ধরলা নদীর সেতুটির অবস্থা খুবই খারাপ ৷ যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । আমরা চাইছি জাতীয় সড়কের উপর নির্মিত দ্বিতীয় ধরলা সেতুটি চালু হোক । কিন্তু সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরি করা যাচ্ছে না । পাঁচটি পরিবারের সমস্যার জন্য কাজটি করা যাচ্ছে না । আশা করি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।"
সম্প্রতি জমিজট কাটিয়ে মহাসড়কের কাজ যাতে ঠিকমত করা যায় তার জন্য বৈঠকে বসেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা । জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর সঞ্জয় শর্মা, জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের অতিরিক্ত জেলাশাসক রঞ্জন চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধানের নির্দেশ দেন ।
এর আগেও জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু হলেও জমির প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় টেকাটুলির স্থানীয় বাসিন্দারা কাজে বাধা দেন ।
এদিকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রজেক্ট ডিরেক্টর সঞ্জীব শর্মা বলেছেন, "পুরো জমি আমাদের হাতে চলে এসেছে । ক্ষতিপূরণের হার নিয়ে কিছু আপত্তি রয়েছে । তবে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রস্তাবিত সড়ক এলাকায় প্রথমেই জমি দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে । ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধির দাবিতে যেখানে মামলা হয়েছে সেখানেও উচ্ছেদ হবে । পরে আদালত যে নির্দেশ দেবে তাই মানা হবে ।" এই পদ্ধতি ছাড়া মহাসড়কের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই মত তাঁর ৷