জলপাইগুড়ি, 23 জুলাই: জল্পেশ মন্দিরে পুণ্যার্থীদের প্রবেশে নিষাধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট । শ্রাবণী মেলায় কোনও পুণ্যার্থী টিকিট কেটে জল্পেশ মন্দিরে ঢুকতে পারবেন না ৷ মন্দিরের বাইরে থেকেই পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল্পেশে মন্দিরের শিবলিঙ্গে জল ঢালতে হবে । আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরেই আজ থেকে ময়নাগুড়ি জল্পেশ মন্দিরে পূণ্যার্থীদের মন্দিরের বাইরে থেকে জল ঢালার পরিকাঠামো গড়ার কাজ শুরু করল ব্লক প্রশাসন ।
উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী জল্পেশ মন্দিরের প্রতিবছর শ্রাবণ মাসে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী আসেন পুজো দিতে ৷ জল্পেশ মন্দিরের ভেতরে ঢোকার প্রবেশপথ অত্যন্ত চাপা ও ছোট । গত বছর জল্পেশ মন্দিরের ভেতরে সংকীর্ণ পথ দিয়ে মন্দিরের গর্ভে গিয়ে পুজো দিতে যাওয়ার সময় চোট লেগে অসুস্থ হন রাজকুমার দাস নামে এক পুণ্যার্থী ৷ এর পরেই তিনি কলকাতা হাইকোর্ট জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে একটি মামলা দায়ের করেন । সেই মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রায় দেন, মন্দিরের গর্ভগৃহে আর কোনও পুণ্যার্থীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না । পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি ।
মন্দিরে প্রবেশ না করে মন্দিরের বাইরে থেকে পুণ্যার্থীদের জল ঢালার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় মন্দির কমিটিকে । সেই নির্দেশই এ বারও বহাল রখেছে হাইকোর্ট ৷ এই নির্দেশের পরেই ময়নাগুড়ি ব্লক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জল্পেশ মন্দির কমিটি মন্দিরের বাইরে মোট তিনটি জায়গায় পাইপ লাগানোর ব্যবস্থা করছে শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য । মন্দিরের বাইরে থেকেই এই পাইপের মাধ্যমে এখন থেকে পুণ্যার্থীরা শিবের মাথায় জল ঢালবেন, আর সেই জল সোজা চলে যাবে মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গে । শ্রাবণ মাসে জল্পেশ মন্দিরে জল ঢালতে আসা পুণ্যার্থীদের রবিবার ও সোমবার কোনও প্রকার টিকিট বিক্রি করবে না মন্দির কমিটি ।
আরও পড়ুন: জল্পেশ মন্দিরের উন্নয়নে খনন কাজ করতে গিয়ে উদ্ধার শিবলিঙ্গ
এছাড়াও মন্দিরের বাইরে বসানো হচ্ছে এলইডি ৷ সেখান থেকে পুণ্যার্থীরা মন্দিরের ভেতরের জল ঢালার দৃশ্য দেখতে পারবেন বাইরে থেকেই । আগের নির্দেশ মতো এ বারও একই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে ৷ এমনটাই জানিয়েছেন ময়নাগুড়ির বিডিও শুভ্র নন্দী । তিনি বলেন, "গত বছর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যা নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই নির্দেশ মতোই আমরা কাজ করছি । হাইকোর্টের নির্দেশের কপি জল্পেশ মন্দির কমিটি নিতে আসেনি । বারবার মন্দির কমিটিকে ডাকা হয়েছিল । তাই মন্দির কমিটির অফিস ঘরের সামনে আমরা নির্দেশিকা টাঙিয়ে দিয়েছি । হাইকোর্টের নির্দেশ মতো কাজ শুরু হয়েছে ।"
জল্পেশ মন্দির কমিটির সম্পাদক গিরিন দেব বলেন, "কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মন্দিরের বাইরে থেকে চ্যানেলের মাধ্যমে জল ঢালতে হবে । সঞ্জয় দে নামে একজন অভিযোগ করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি । তার ফলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে মন্দিরে ভেতরে ঢুকে জল ঢালতে পারবে না । প্রশাসন চ্যানেলের ব্যবস্থা করবে । ইতিমধ্যেই তাদের স্বেচ্ছাসেবক তুলে নিয়েছেন । জল্পেশ মন্দির কমিটির সম্পাদক গিরিন দেব জানান, "আমাদের টিকিট বিক্রি করে আয় হয় সেই টাকা দিয়েই আমরা স্বেচ্ছাসেবক রাখি । টিকিট বিক্রি না হলে স্বেচ্ছাসেবক রাখব কী করে ।"
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড় হয় জল্পেশ মন্দিরে । টিকিট কেটে পুণ্যার্থীরা জল্পেশ মন্দিরের ভেতরে সংকীর্ণ রাস্তা দিয়েই প্রবেশ করেন । অসম্ভব ভিড়ের ফলে মন্দিরের ভেতরে পদপিষ্ট হওয়া বা পড়ে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে । এই আশঙ্কা থেকেই আদালতের এই সিদ্ধান্ত । অন্যদিকে, জল্পেশ মন্দিরে পুণ্যার্থীরা থেকে পাওয়া অর্থে সারা বছর মন্দিরের সেবায়েত ও কর্মীদের বেতন-সহ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলত । সেই কারণেই আদালতের নির্দেশে চিন্তায় মন্দির কমিটি ৷