জলপাইগুড়ি, ১৩ অগাস্ট : লকডাউনে কাজ নেই । রুজিরুটির টানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিস্তা নদীতে চলছে নৌকা ভ্রমণ । আনলক পর্বে গুটি কয়েক পর্যটক আসতে শুরু করায় আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার আসা দেখছেন তিস্তা পাড়ের নৌকাচালকরা ।
মার্চের আগেও ছবিটা অন্যরকম ছিল । তখন তিস্তা পাড় পর্যটকের ভিড়ে গমগম করত । বেশিরভাগ নৌকা ভ্রমণে আসতেন । কেউ আবার নদী তীরে বসে সৌন্দর্য উপভোগ করতেন । কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের জেরে সেসব বন্ধ হয়ে যায় । পর্যটক শূন্য তিস্তা পথ চেয়ে বসে থাকে- কবে আসবে সুদিন । কোরোনার প্রভাব থেকে রক্ষা পাননি নৌকাচালকরা । নৌকাবিহার বন্ধ হওয়ায় ধীরে ধীরে আর্থিক সংকট ঘিরে ধরে তাঁদের । কোথা থেকে টাকা আসবে, কীভাবে সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেবেন? ভেবে ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না তিস্তা পাড়ের নৌকাচালকরা । চিন্তা ক্রমেই কুয়াশার মতো ঘিরে ধরছিল দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলিকে । তাই আনলক পর্বে টুকটাক পর্যটক আসতে থাকায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই বেরিয়ে পড়েছেন তাঁরা । অনেকে ভিন রাজ্যে কাজ করতেন । লকডাউনে কাজ হারিয়ে তাঁরা জেলায় ফিরে এসেছেন । সেইসব কর্মহীন শ্রমিকও সংসারের পাশাপাশি নৌকার হাল ধরেছেন ।
প্রতি বর্ষায় তিস্তা নদী ভয়ংকর হয়ে ওঠে । তার জলস্ফীতি গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয় । তখন নৌকাবিহার একেবারে নিষিদ্ধ । এবছর সেই ঝুঁকি নিয়েই নৌকাবিহার চলছে তিস্তায় । সরকার থেকে লাইফ জ্যাকেট পাননি । তাই নিজেদের খরচে অনেকে লাইফ জ্যাকেট কিনে নিয়েছেন । যদিও জল বাড়লে নদীতে কেউ নামবেন না বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় নৌকাচালকরা । জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে দিয়ে চলছে নৌকাবিহার । জন প্রতি ৩০-৫০ টাকা করে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন নৌকাচালকরা । খুব বেশি দূর নয়, কাছাকাছি ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয় পর্যটকদের । নদীপথ আগে ঘুরে যাওয়ায় নৌকাবিহার বন্ধ ছিল । এবার নদীর পথ ফের পালটে যাওয়ায় নৌকাবিহার শুরু হয়েছে । বিকেলের দিকে সাধারণ মানুষ ভিড় করেন তিস্তার শোভা দেখার জন্য । অনেকে আবার বাড়ির ছোটোদের নিয়ে একটু আনন্দ করতে আসেন । প্রায়দিন তিস্তার দোমোহনির অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করছে সেচ দপ্তর, আবার উঠিয়েও নেওয়া হচ্ছে ।
তিস্তায় নৌকা বিহারে আসা এক পর্যটক শীলা রায় জানান, "ভয় হচ্ছে ঠিকই । কিন্তু আনন্দ মাটি করতে চাই না । লকডাউনের জন্য অনেক দিন বাচ্চারা বাড়িতে ছিল । তাই তাদের নিয়ে এলাম ।" নৌকাচালক গোবিন্দ বিশ্বাস জানান, "যদি নৌকাগুলিতে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হত, তাহলে আমাদের সুবিধা হত । লকডাউনে আমাদের কাজ নেই । তাই নৌকা চালিয়ে রোজগার করছি । যদি তিস্তাতে জল থাকে তাহলে আমাদের কিছুটা রুজিরুটির জোগাড় হবে । তবে অনেকেই ভয় পান নৌকায় চড়তে । আমরা লাইফ জ্যাকেট রেখেছি । সরকার থেকেও দিলে ভালো হত ।"
আর এক নৌকাচালক হরি সরকার জানান, "লকডাউনের জন্য রোজগার কমে গেছে । খুব কম লোক আসছে । কিন্তু রোজগারের জন্য একটু ঝুঁকি তো নিতে হয় । লাইফ জ্যাকেট হলে ভালো হত । কিন্তু বেশি জল না থাকায় নৌকা চালাচ্ছি । বেশি জল হলে আমরা নৌকা চালাই না । যারা আসেন নৌকা চড়তে তার মধ্যে বেশিরভাগই ভয় পান । তাঁদের আশ্বস্ত করি । সরকার থেকে যদি লাইফ জ্যাকেট, টিউব দেওয়া হত তাহলে আমাদের সুবিধা হত । গাজোলডোবায় তিস্তায় নৌকাচালক ও পর্যটকদের জন্য লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করা হয়ছে । এখানে এমন ব্যবস্থা করলে পর্যটকরা আরও আসবেন ।"
জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা শাসক রঞ্জনকুমার দাস জানান, "তিস্তা নদীতে সরকারিভাবে কোনও দপ্তরের নৌকাবিহারের ব্যবস্থা নেই । তবে এমন হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । আর যাঁরা তিস্তায় মাছ ধরেন, তাঁরা তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে চলেন । যাঁরা নৌকা চালাচ্ছেন তাঁরা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, আমরা তাঁদের পরামর্শ দেব ।"