শিলিগুড়ি, 18 জুলাই: উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় বন্যা ও ভাঙন পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী ভুটান সরকার। বাংলার সেই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র সরকারও কোনও সদর্থক ভূমিকা পালন করছে না। সোমবার রাজ্যের উত্তরবঙ্গের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর উত্তরবঙ্গের বন্যা ও ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ে ভুটান সরকার ও কেন্দ্র সরকারকে একযোগে দায়ী করলেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, "উত্তরের এই বন্যা পরিস্থিতি মূলত ভুটান সরকারের উদাসীনতার জন্য হচ্ছে। ভুটানে কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। যার ফলে আচমকা হড়পা বান ও ভাঙন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আর এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারও কোনও কাজ করছে না। কেন্দ্র সরকারকে পদক্ষেপ করার জন্য জানালেও কাজ হচ্ছে না।"
বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির জেরে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি জেলায় বন্যা ও ব্যাপক ভাঙন পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিস্থিতি যাচাই করে পদক্ষেপ করার তৎক্ষনাৎ নির্দেশ দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশমতোই সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে এদিন বন্যা ও ভাঙন পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন সেচ মন্ত্রী। সকালে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের জেলার অধীন হদুগছ ও যাত্রাপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন ।
সেখানে নদীস্রোতে ভেঙে যাওয়া সেতু পরিদর্শন করেন এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে সেই সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপর উত্তরকন্যায় পূর্ত, সেচ, জলসম্পদ বিকাশ, কৃষি, বিপর্যয় মোকাবিলা, দমকল-সহ পাঁচ জেলার পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক সারেন। বৈঠক উপস্থিত ছিলেন কৃষি দফতরের মুখ্যসচিব ওঙ্কার সিং মিনা, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মুখ্যসচিব দুষ্মন্ত নারিয়ালা ও সেচ দফতরের মুখ্যসচিব প্রভাতকুমার মিশ্রা।
বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভুটান সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। তবে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় বৃষ্টিপাত জানতে যন্ত্র বসালেও তা খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এমত অবস্থায় দুটি উপায় ছাড়া এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা বেশ সমস্যাজনক। মূলত, ভুটান সরকারকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে তাদের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আগাম সতর্কতা জানানো এবং ভুটান থেকে বাংলায় আগত নদীগুলোতে চেক ড্যাম দেওয়া।
আরও পড়ুন: কলকাতা কর্পোরেশনের চিফ ল অফিসারের নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ
ভুটানে উৎপত্তি রায়ডাক, সঙ্কোশ, বাসরা, কালজানি, জয়ন্তী ও তোর্সা নদীতে বাঁধ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। এদিকে বিগত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কোচবিহারের 48টি জায়গায়, জলপাইগুড়িতে 700টি বাড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায় 250টি বাড়ি আংশিক ও 70টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে কোচবিহারের 14টি বড় জায়গার মধ্যে 7টি জায়গায় কাজ চলছে। জলপাইগুড়ি জেলার হাতিনালা ও গদাধরখালের কাজ শুরু হয়েছে। ওই জেলাতেই বীরুবাদপুরে 9 কোটি টাকা ব্যায়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মালদার মুজনাই ও ফুলাহার নদী ভাঙন নিয়েও বাংলা, বিহার ও ঝাড়খণ্ড সরকার যৌথভাবে ওই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।