জলপাইগুড়ি, 8 অক্টোবর : ট্রায়াল রানেই উচ্ছ্বসিত দুই দেশের মানুষ । 1965-র পর উত্তরবঙ্গে ফের চালু হতে চলেছে ভারত-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ । ভারতের জলপাইগুড়ির হলদিবাড়ি হয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটির ভেতরে দিয়ে কলকাতায় পৌঁছাবে এই ট্রেন । বৃহস্পতিবার হয়ে গেল যার ট্রায়াল রান ৷ আজ অবশ্য দু'দেশের রেল ট্রাকে চলল কেবল ইঞ্জিন ৷ তাতেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস !
এপারে ভারতের হলদিবাড়ি, ওপারে বাংলাদেশর চিলাহাটি ৷ মাঝখানে কাঁটাতার ৷ বৃহস্পতিবার সকাল 11টা 15 মিনিট নাগাদ সেই কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ইঞ্জিনটি । হাততালি দিয়ে ভারতীয় রেলকে স্বাগত জানাল বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ । ইঞ্জিনটি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ডাঙাপাড়া BOP-র অন্তর্গত ভারতের হলদিবাড়ি থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জ়িরো পয়েন্ট পর্যন্ত যায় ৷ ফিতে কেটে ভারতের দিক থেকে আজকের রেলযাত্রার সবুজসংকেত দেন উত্তরপুর্ব সীমান্ত রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়র (কনস্ট্রাকশন) জেপি সিং । জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের তরফে দিন কয়েকের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ইঞ্জিন চালানো হবে ৷ সেই পরীক্ষা সফল হলেই যাত্রীবাহী ট্রেন চালাচল কবে শুরু হবে তা জানা যাবে ৷
একটা সময় জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতায় পৌঁছাত যাত্রীবাহী ট্রেন । 1965 সালে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় সেই রেল যোগাযোগ । এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম ৷ মাঝে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পর ফের রেলপথ চালু করতে উদ্যোগী হয় ভারত ও বাংলাদেশের সরকার । হলদিবাড়ি রেল স্টেশনটিকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সীমান্ত পর্যন্ত 3.34 কিমি রেল লাইন পাতে ভারতীয় রেল । একইভাবে সীমান্তের ওপারে চিলাহাটি স্টেশনকে সাজিয়ে তোলার পাশাপাশি চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত 6.24 কিলোমিটার নতুন রেলপথ স্থাপন করে বাংলাদেশ রেল । পরে দুই দেশের রেল মন্ত্রক দু'দেশের লাইন জুড়ে দেওয়ার কাজও সেরে ফেলে । এরপরই আজ ভারতের তরফে ইঞ্জিনের সফল ট্রায়াল রান হল ।
ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়র (কনট্রাকশন) জেপি সিং বলেন, "আমি খুব খুশি এই কাজটা করতে পেরে । দুই দেশের মানুষের দাবি ছিল এই রেললাইন নিয়ে । তাদের স্বপ্ন সার্থক হতে চলেছে । 2017 সালে কাজটা শুরু হলেও মাঝে বন্ধ ছিল । আমরা আজ দেখে নিলাম যে লাইন ট্রেন চলাচলের যোগ্য কি না । এবার বাংলাদেশের দিকে ইঞ্জিন চালিয়ে দেখে নেওয়া হলেই ফিট সার্টিফিকেট দেবে দুই দেশ ৷"
বাংলাদেশের রেলের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর মহম্মদ আবদুল রহিম বলেন, "আমরা খুব আনন্দিত যে দুই দেশের মধ্যে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হবে । দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালো হবে এতে ।"
বাংলাদেশের নিলফামারির বাসিন্দা মাহাবুবুল হক মাহাবুব বলেন, "আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে ! খুব আনন্দ হচ্ছে, যে দুই দেশের মধ্যে ফের রেল যোগাযোগ শুরু হচ্ছে । দুই দেশের সম্পর্ক আরও নিবিড় হবেই । দেখুন কত মানুষ স্বাগত জানাতে এসেছে ৷"
ভারতের হলদিবাড়ির বাদিন্দা সামসের আলি সরকার বলেন, "আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি পুরণ হচ্ছে । এই পথে দার্জিলিং মেইল-এ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাতায়াত করতেন শুনেছি । খুব তাড়াতাড়ি রেল চলাচল শুরু হোক ৷"
বাস্তবিক এককালে এই হলদিবাড়ি-চিলাহটি রেলপথ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দার্জিলিং মেইল-এ করে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করতেন । 1939 সালে নেতাজি অবিভক্ত বাংলার কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হিসেবে এপথেই জলপাইগুড়ি এসেছিলেন । অতীতের সেই স্মৃতিকে উসকে দিয়ে আবার চালু হচ্ছে রেল । আশায় বুক বাঁধছে দুই দেশের মানুষ ৷