জলপাইগুড়ি, 22 অগস্ট: লাটাগুড়ি ফ্লাইওভার থেকে পড়ে গিয়ে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ উঠল প্রশাসনিক গাফিলতির দিকে । ফ্লাইওভারের মুখ কেন খোলা রাখা হয়েছিল তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে । বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়াই কাল হয় কিশোরের । নির্মীয়মাণ ফ্লাইওভারে ওঠার মুখ খোলা থাকার কারণে রেললাইনে আছড়ে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এক কিশোর ও তরুণীর । পিডব্লিউডি-এর এই কাজে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জনমানসে ।
সকাল থেকেই মৃতদেহের নাম পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও অবশেষে মৃতদের নাম পরিচয় জানা গিয়েছে । মৃত কিশোরের নাম নয়ন ঘোষ (16) ৷ তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ি পৌরসভার 12 নং ওয়ার্ডের জয়ন্তীপাড়াতে । আহত যুবকের নাম সঞ্জু বসাক । তাঁর বাড়ি শহর সংলগ্ন টোপামারি এলাকায় । গুরুতর আহত অবস্থায় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সঞ্জু ।
জানা গিয়েছে, 2017 সাল থেকে লাটাগুড়ির জঙ্গল কেটে নেওড়া মোড় থেকে রেললাইনের উপর দিয়ে প্রায় 2 কিলোমিটারের ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয় । প্রায় 6 বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও ফ্লাইওভারের কাজ বিশবাঁও জলে । কবে শেষ হবে ফ্লাইওভার সেই আশায় দিন গুনছেন লাটাগুড়ির মানুষ ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির মনসা পুজোর মেলাতে এসেছিলেন নয়ন ও সঞ্জু । তারপর মোটর বাইক নিয়ে তাঁরা লাটাগুড়িতে ঘুরতে যান । সঙ্গে ছিল এক বান্ধবী । রাতে লাটাগুড়ির জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা মোটর বাইকে চড়ে যাচ্ছিলেন । নেওড়া মোড়ে ফ্লাইওভারের মুখ খোলা থাকায় তাঁরা ফ্লাইওভারে উঠে পড়েন । এরপরেই বিপত্তি ।
আরও পড়ুন: অর্ধসমাপ্ত ফ্লাইওভারে বাইক চালাতে গিয়ে রেললাইনে আছড়ে পড়লেন 3, ঘটনাস্থলেই মৃত 2
রেললাইনের উপরে ফ্লাইওভার জোড়া না থাকায় ফ্লাইওভার থেকে রেললাইনের উপর আছড়ে পড়েন তিনজন । ঘটনাস্থলেই নয়ন ও তাঁর বান্ধবীর মৃত্যু হয় ৷ সঞ্জুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । জানা গিয়েছে, যে মোটর বাইকটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তার মালিক পাপ্পু রায় নামে এক যুবক । তিনি আগেই চালসা গিয়েছিলেন । তাঁর কাছেই দুই বন্ধু সঞ্জু ও নয়ন যাচ্ছিলেন তাঁদের বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে । এমন সময়ে লাটাগুড়িতে ফ্লাইওভারে ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ।
পিডব্লুউডি-এর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (নর্থ জোন) কল্যাণ রায় বলেন, "লাটাগুড়িতে অ্যাপ্রোচ রোড ধরে 56 কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় 2 কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ হচ্ছে । আজ যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা মর্মান্তিক । তবে ফ্লাইওভার থেকে পড়ে গিয়ে অ্যাপ্রোচ রোডে কীভাবে ছিটকে গেল, তা প্রমাণসাপেক্ষ । কারণ ফ্লাইওভারের উপরে আমাদের এক মিটার গ্যাপ রয়েছে দুটো স্ল্যাবের মধ্যে । এক্সপ্যানশন জয়েন্টের জন্য গ্যাপটা ছাড়া আছে । সেখানে স্পিডে বাইকের চাকা পড়লে সেখানেই গাড়ি উলটে যাওয়ার কথা । কোনও অবস্থাতেই গাড়ি ফ্লাইওভারের শেষ প্রান্তে আসতেই পারবে না । পুলিশ সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখছে । আমরা আগামী 2024 সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই এই ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করব । আমরা লোহার ব্যারিয়ার দিয়ে ফ্লাইওভারের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলাম । কিন্তু স্থানীয় চালকরা তা সরিয়ে দিয়েছিলেন । পুলিশকে বলেছি, কেউ ব্যারিয়ার সরালেই ব্যবস্থা নিতে ৷ আজই ফ্লাইওভারের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।"
ক্রান্তি ফাঁড়ির ওসি মনসুর উদ্দিন জানান, "আমরা ফ্লাইওভারের খোলা অংশ ব্যারিয়ার লাগিয়ে দিয়েছি । যাতে আর কেউ উঠতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছি । দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আহত ও মৃতরা কোথায় যাচ্ছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।"