জলপাইগুড়ি, 5 ফেব্রুয়ারি : কেএলওর প্রাক্তন সদস্যদের চাকরি দিচ্ছে সরকার । কিন্তু কেএলওর গুলিতে নিহত ও জখমদের পরিবার সরকারি সাহায্য পাচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠছিল । এই সব পরিবারগুলির অভিযোগের কথা এর আগেও তুলে ধরা হয়েছিল ইটিভি ভারতে । এবার কেএলও দ্বারা আক্রান্ত জলপাইগুড়ির 23 টি পরিবারের সদস্যদের 17 বছর পর হোমগার্ডে চাকরি দিল রাজ্য সরকার ।
জলপাইগুড়ি জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার ঝাড় । এখন দেখলে বোঝার উপায় নেই, কিন্তু বছর পনেরো আগে ছবিটা এরকম একেবারেই ছিল না । একটা সময় ছিল যখন এই রাস্তায় সন্ধে হলে আর মনুষ্যদর্শন মিলত না । আতঙ্কে ঘর থেকে বেরোতে চাইতেন না গ্রামবাসীরা । আতঙ্কের নাম কেএলও । কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজ়েশন । বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্রপন্থী সংগঠন । লক্ষ্য পৃথক কামতাপুর রাষ্ট্র । একটা সময়ে বন্দুকের নলই শেষ কথা বলত এখানে ।
কেএলও সদস্যদের ভয়ে গৃহবন্দী হয়ে থাকতেন মানুষজন । 2003 সালের 14 মার্চ । বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্রপন্থীদের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন 3 জন । জখম হয়েছিলেন আরও বেশ কয়েকজন । রাজ্য সরকার কেএলওর প্রাক্তন সদস্যদের পুলিশের চাকরি দিচ্ছে । কিন্তু অভিযোগ ছিল, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলিতে যাঁরা নিহত হয়েছেন, যাঁরা জখম হয়েছেন, যাঁরা চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন, তাঁরা কোনও সরকারি সাহায্য পাচ্ছিলেন । বাংলারঝাড়ের মানুষদের সেই দুর্দশার কথা, প্রথমবার তুলে ধরা হয়েছিল ইটিভি ভারতে । আর তারপরই প্রশাসন কড়া নাড়ে নিহত ও জখমদের দরজায় । গ্রামের পাঁচটি পরিবারের প্রত্যেকটি থেকে একজনকে হোমগার্ডে চাকরি দিল রাজ্য সরকার । গোটা জেলায় এমন 23 টি পরিবারের একজন করে সদস্যকে হোমগার্ডে চাকরি দিল রাজ্য ।
আরও পড়ুন : মালদায় 35 জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিকে চাকরির নিয়োগপত্র
বাংলারঝাড় গ্রামেই থাকেন বিষ্ণুপদ দাস । বাবা, দাদাকে হারিয়েছেন কেএলও হানায় । অবশেষে এবার মুখ তুলে চাইল সরকার । চাকরি পাচ্ছেন বিষ্ণুপদ । চাকরি পেয়ে আর্থিক অবস্থা কিছুটা ফিরলেও দাদা-বাবাকে হারানোর সেই বিভীষিকাময় রাত আজও ফিকে হয়নি ।
কেএলওদের গুলিতে গুরুতর জখম হন কালিপদ সরকারের ছেলে নন্দলাল সরকার । বাঁ পায়ে গুলি লাগার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করালেও সফল অস্ত্রপ্রচার হয়নি । আজও খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটেন নন্দলাল । চিকিৎসার জন্য প্রায় সর্বস্ব খুইয়েছেন কালিপদ । কালিপদর ছেলে এখন চাকরি পেয়েছে বটে । কিন্তু অনেকটা দেরি হয়ে গেল বলেই মনে করছেন তাঁরা । কান্নামাখা চোখে কালিপদ বললেন, "যদি আরও কিছুদিন আগে সরকার মুখ তুলে চাইত, তাহলে অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচতে পারতাম ।"
আরও পড়ুন : "মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও চাকরি হয়নি", জেলাশাসকের দ্বারস্থ আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিরা
জখম হয়েছিলেন কৃষ্ণ সরকারও । তিনি আজ বলেন, "কেএলওদের গুলিতে আমি জখম হয়েছিলাম । চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেলাম । আজ হোমগার্ডে চাকরি দিল রাজ্য সরকার । ভালো লাগছে । কিন্তু আমার চিকিৎসার জন্য ভিটে মাটি সব বিক্রি করতে হয়েছে ।"