হাওড়া, 21 জুন : সভ্যতার অগ্রগতির পথে চলতে চলতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পেরেছিল সে সর্বদা সুখ খুঁজছে । আর এই সুখের সন্ধানেই যোগকে খুঁজে পাওয়া । আজও যার নিরবিচ্ছিন্ন অন্বেষণ জারি রয়েছে । আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে তারই নানা দিক সম্পর্কে কথা বললেন বেলুড় মঠের মহারাজ দিব্যগুণানন্দ ।
Etv ভারত : যোগ ও যোগাসন কী ?
স্বামী দিব্যগুণানন্দ : যোগ এবং যোগাসন দুটি জিনিস আলাদা করেই দেখা ভালো । যোগ একটি বৃহত্তর বিষয় বা উপায় । যা একটি বিশেষ কারণে আমাদের অবলম্বন করতে হয় । সভ্যতার অগ্রগতির পথে চলতে গিয়ে মানব সমাজ বুঝতে পেরেছিল, মানুষ সর্বদা শান্তি প্রকারান্তে সুখ খুঁজছে । অর্থাৎ, দুঃখের হাত থেকে মুক্তি । এই মুক্তিকে খুঁজতে গিয়ে সারা পৃথিবীতে দুটি পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে । একটি পদ্ধতি হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথ । অর্থাৎ কর্মের মাধ্যমে দুঃখের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পদ্ধতি । যেমন গরম লাগে, তাই ফ্যান বা AC আবিষ্কার হয়েছে । কিন্তু মানুষ এটিও বুঝেছিল, এই পদ্ধতিতে সাময়িক সময়ের জন্য দুঃখের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । তবে ভারতবর্ষে অতি প্রাচীনকাল থেকে অন্য একটি পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু হয়ে যায় । যে পদ্ধতি অবলম্বন করে সমস্ত দুঃখের নিবারণ করা সম্ভব । এই পথ খুঁজতে গিয়েই যোগকে খুঁজে পায় মানুষ । তবে এর বিভিন্নভাবে প্রয়োগ হয় । যোগকে স্বামী বিবেকানন্দ চারভাগে ভাগ করেছেন । এই চার যোগ হল জ্ঞানযোগ, রাজযোগ, কর্মযোগ ও ভক্তিযোগ ।
যোগাসন বলতে আমরা যা বুঝি, তা হল এই চার যোগের মধ্যে রাজযোগের একটি ধাপ । এই রাজযোগে যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়, তার বেশিরভাগই দুঃখ নিবারণের জন্য । মন চঞ্চল হলে, শ্বাসপ্রশ্বাস চঞ্চল হয় । আর শরীরও চঞ্চল হতে শুরু করে । এই মনের অস্থিরতা পঞ্চ ইন্দ্রিয় থেকে সৃষ্টি হয় । তাই একদিকে চৈতন্য সত্ত্বা মাঝে মন আর একদিকে ইন্দ্রিয় । আর ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রিত এই পথ থেকে মুক্তি পেতেই এই যোগাসনের যাত্রা ।
Etv ভারত : যাঁরা নিয়মিত যোগাসন করেন আর যাঁরা করেন না তাদের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে ?
স্বামী দিব্যগুণানন্দ : অনাগত দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পেতে যোগের ভূমিকা রয়েছে । অর্থাৎ যে দুঃখ আসতে পারে বা সমস্যা হতে পারে, সেখান থেকেও মু্ক্তি দিতে পারে যোগ । যোগের মাধ্যমে শরীরের মধ্যে শক্তির সঞ্চার হয় । জীবন অনেক নিয়ন্ত্রিত হয় । জীবন ছন্দে চলে । তাই যাঁরা যোগ করেন, তাঁরা একটা পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারবেন । যাঁরা শুরু করবেন, তাঁরা দেখতে পাবেন যোগের অভ্যাসের মধ্য দিয়ে জীবন একটা নির্দিষ্ট ছন্দে চলবে ।
Etv ভারত : রোগমুক্তিতে যোগাসনের ভূমিকা কী ?
স্বামী দিব্যগুণানন্দ : সমস্ত যোগাসনেরই বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । পেশি বা স্নায়ুর মধ্যে ক্ষতিকারক সমস্ত শক্তি নষ্ট করতে যোগাসন জরুরি । যেমন ত্রিকোণাসন, চক্রাসন, পবনামুক্ত আসন ইত্যাদি । এখন বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ যোগাসন ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে । তবে প্রতিটি যোগাসনেরই গুরুত্ব রয়েছে ।
Etv ভারত : মানুষের জীবন কর্মব্যস্ত, এই সময়ে যোগাসন করাটা কীভাবে সম্ভব ?
স্বামী দিব্যগুণানন্দ : সবকিছু একসঙ্গে মেনে চলা সম্ভব নয় । স্বল্পে সন্তুষ্টির বিষয়ও রয়েছে । জীবনে কিছু না কিছু একটা কমাতে হবে । দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা সম্ভব নয় । তাই এই স্বল্পে সন্তুষ্টির বিষয়ে নজর দিতে হবে । এবং এই সময়ের মধ্য যোগাসনের অভ্যাস করতে হবে ।
Etv ভারত : স্কুলগুলিতে যোগাসন শুরু হয়েছে । স্কুল শিক্ষায় এটি কতটা জরুরি?
স্বামী দিব্যগুণানন্দ : শিক্ষার অঙ্গ শরীরচর্চা । শিশুরা যারা এখন সুস্থ সবল । তারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ক্ষতি নেই । এতে কোনও খরচাও নেই । আমাদের ছোটোবেলায় এই অভ্যাস ছিল । এই যোগের অভ্যাস শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে পারে । ছাত্রছাত্রীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে যোগাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
Etv ভারত : যাঁরা যোগাসন করতে ইচ্ছুক তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?
স্বামী দিব্যগুণানন্দ : যাঁরা দুঃখ থেকে মুক্তির বড় লক্ষ্যে এগোতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে বলব যোগা শুরু করা উচিত । এতে অনাগত দুঃখ, সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । পুরো জীবন একটা ছন্দে বাঁধা পড়বে । যোগদিবসে এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই চলব । যোগকে হালকাভাবে না নিয়ে জীবনকে একটা ছন্দে বাঁধতে হবে । পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদাটাও নিবারণ করতে হবে । এতে আমরা ছাড়াও আমাদের পাশাপাশি যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও ভালো থাকতে পারবেন ।