কলকাতা, 31 জুলাই: জুন মাসে মহারাষ্ট্রে মহাবিকাশ আঘাড়ি সরকারের পতন হয় ৷ শিবসেনার একটি অংশের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়ে বিজেপি ৷ এরপর রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশই মনে করেছিল ঝাড়খণ্ড এবং বাংলাতেও সরকার গড়ার কথা ভাবছে বিজেপি ৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যেই বলে থাকেন 2024 সালেই বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন ৷ এমতাবস্থায় শনিবার বিকেলে পুলিশ হাওড়া পাঁচলা থানার অন্তর্গত রানিহাটি মোড় থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা উদ্ধার করে । ওই গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনে ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস বিধায়কদের বোর্ড রাখা ছিল ৷ গাড়িতে ছিলেন তিন কংগ্রেস বিধায়ক ইরফান আনসারি, রাজেশ কাশ্যপ ও নমন বিক্সল ৷ এই টাকার উৎস জানতে প্রথমে আটক করা হলেও পরে বিধায়কদের গ্রেফতার করে পুলিশ হয় ৷ গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে পাঁচলা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে (TMC suspects BJP connection in lakhs recovery from 3 Jharkhand Congress MLA in Bengal) ।
এবার এই টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিজেপি যোগ দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস । যেভাবে মহারাষ্ট্রে সরকার বদলের সময় ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ উঠেছিল, এক্ষেত্রেও তেমনটাই থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এই রাজ্যের শাসক দল । একসঙ্গে 50 লক্ষ টাকা উদ্ধার হওয়ার পর এই তিন বিধায়ককে নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কী পদক্ষেপ করবে, সে দিকেও নজর রাখছে এ রাজ্যের শাসক দল ।
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এদিন টুইট করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, "ঝাড়খণ্ডে সরকার ফেলতে ঘোড়া কেনাবেচার গুঞ্জন ৷ পশ্চিমবঙ্গে তিন জন কংগ্রেস বিধায়কের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে । এর উত্স কী ? কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কোনও পদক্ষেপ করবে ? নাকি বাছাই করা কয়েকটি ক্ষেত্রেই নিয়ম প্রয়োগ করা হয় ?"
আরও পড়ছি: হাওড়ায় গাড়ি থেকে বিপুল টাকা উদ্ধারে গ্রেফতার ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ক
একইসঙ্গে তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য এই বিষয়টি উদ্ধৃতি করে লিখেছেন, "ঘটনা ১: মহারাষ্ট্রের পর রাজস্থান আর ঝাড়খণ্ডকে টার্গেট ঘোষিত করল বিজেপি । ঘটনা ২: ঝাড়খণ্ড যাওয়ার সময় তিন কংগ্রেস বিধায়ক বিপুল টাকা-সহ ধরা পড়লেন হাওড়ায় । এবার ১ এবং ২ মেলান । কী বুঝছেন ? আজ অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল । আরও বিধায়ক আনতে পারলে হয়তো বাকিটা পেমেন্ট হত ! কিন্তু যা!!'
আরেকটি টুইটে তিনি লেখেন, "তিনটি বিন্দু: ১. শুভেন্দু বলেছিলেন মহারাষ্ট্রের পরের টার্গেট ঝাড়খণ্ড । তাই MLA কেনার গল্প নয়তো ? ২. বাংলার বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, অমিতাভ চক্রবর্তীদের মাধ্যমে ডিলিং হচ্ছিল না তো ? ৩. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড থেকে হওয়া ক্রস ভোটিং এর পেমেন্ট ক্লিয়ার করা হচ্ছিল কি ?"
এ নিয়ে দেবাংশুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "এমনিতেই বিজেপি নেতারা ঝাড়খণ্ড এবং বাংলায় সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন । মহারাষ্ট্রের কায়দায় সরকার বদল করতে হলে বিপুল টাকার প্রয়োজন, তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না । এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে তদন্ত করে দেখতে হবে ।" একই সঙ্গে এই টাকার উৎস কী জানতে চেয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ৷ তিনি বলেন, "এই টাকা তোলাবাজির কি না, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার ৷ একই সঙ্গে তদন্ত হওয়া দরকার যে এর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ আছে কি না । এই টাকা ঘোড়া কেনাবেচার জন্য ব্যবহার করছিল কি না, তাও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কে দেখতে হবে ।"