হাওড়া, 8 নভেম্বর: এ যেন বলিউডয়ের কাহিনি । পেশায় দর্জি থেকে আল কায়েদার জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হয়ে ওঠা আমিরুদ্দিন খানের গতি প্রকৃতি বলিউডের কোনও চরিত্র থেকে কোনও অংশে কম নয় (Al Qaeda Terrorist) ।
দর্জির কাজ করে সংসার চালানো শুরু । পাশাপাশি ছিল পোশাক তৈরির ব্যবসা । এরপর নিজের তৈরি জামাকাপড় এই রাজ্য থেকে নিয়ে যেতেন সুদূর জম্মু কাশ্মীরে । সেখানে বিক্রি করতেন নিজের তৈরি সামগ্রী । এভাবেই চলছিল সব । তারই মাঝে কখন সাঁকরাইল ব্লকের মাসিলা পাঠানপাড়া এলাকার খান পরিবারের চতুর্থ ছেলে আমিরুদ্দিন আল কায়দা জঙ্গি গোষ্ঠীর সংস্পর্শে চলে আসে তার কোনও সূত্র খুঁজে পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা (Terrorist Parents and Relatives Shocked) ।
পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আমিরুদ্দিন চতুর্থ । মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করে স্থানীয় মাদ্রাসাতে শিশুদের পড়াশোনা করাতেন আমিরুদ্দিন এমনটাই দাবি তার মা আনোয়ারা বেগমের । বাড়িতে আরও দুই ছেলে রয়েছে । তাঁরা পড়াশোনা ও দর্জির কাজ করে । তবে ছেলে যে এই ধরণের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এটা এখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি । তার দাবি, তদন্তকারী আধিকারিকদের প্রকৃত তদন্ত করে দেখা উচিত ।
যদিও পরিবারের অপর সদস্য জাহিরা বেগম জানান, আমিরুদ্দিন এই ধরণের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন এটা তিনি বিশ্বাস করেন না । তার দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে । দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় ধরে সে জম্মু ও কাশ্মীরে রয়েছে । প্রতিদিন পরিবারের সঙ্গে তাঁর কথা হতো ফোনে । ওখানেই আমিরুদ্দিন একটি মাদ্রাসাতে পড়াতেন ও আলাদা করে দেড়শো বাচ্চাকে নিয়ে ক্লাস করাতো । বিয়েও করেছে কাশ্মীরের বাসিন্দা এক মহিলাকে । যে কোনও পরবের সময় সে সাঁকরাইলে নিজের বাড়িতে আসত । 6 মাস আগে বকরি ইদের সময়েও এসে এক মাস ছিল । আমিরুদ্দিন কেমন ছেলে সেটা যেন এলাকার বাসিন্দাদের থেকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে । আর তিনি চান, তদন্ত হওয়ার আগে কাউকে দোষী বলে বলা যায় না ।
পাশাপাশি আমিরুদ্দিনের দাদা আলমগীর খান দাবি করেন, তার ভাইকে ফাঁসানো হয়েছে । সে কোনওভাবেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে না । ঘটনার কথা মঙ্গলবার সকালে তিনি জেনেছেন । ভাইয়ের মোবাইলে ফোন করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । কাশ্মীরে তাঁদের কেউ জানাশোনা নেই যার সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাবেন । তিনি জানান, আমিরুদ্দিনের বউয়ের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হতো না । পাশাপাশি তার ভাইয়ের সঙ্গেও কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে কথা হতো না ৷
মঙ্গলবার সকালে আমিরুদ্দিনের গ্রেফতারির ঘটনা চাউর হতেই এলাকার বাসিন্দারা ভিড় জমান আমিরুদ্দিনের বাড়িতে ।মাসিলা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গোরাই খান জানান, আমিরুদ্দিন খুব ভালো ছেলে ৷ ওর বাবা-মা অনেক কষ্ট করে ওদের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করিয়েছে ৷ ও পড়াশুোনা বাইরেই করত ৷ আমিরুদ্দিন মাঝেমাঝে পরবের সময় ও ভোটের সময় বাড়িতে আসত ৷ ওকে ফাঁসানো হয়েছে ৷
এক এলাকাবাসী জানান, আমিরুদ্দিনের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে কোনও ৷ ও খুব ভালো ছেলে ৷ আমরা ভাবতেই পারছি না ৷ সম্প্রতি তার পরিবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে পাকা ঘর প্রাপক ছিল বলেই সূত্রের খবর । যদিও এলাকাবাসীর কাছে 'ভালো ছেলে' আমিরুদ্দিন আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেটা শোনার পর থেকে যথেষ্টই অবাক হয়েছেন সকলেই ।
আরও পড়ুন: জম্মুর রামবানে ধৃত আল কায়েদা জঙ্গি, নাম জড়াল হাওড়ারও
উল্লেখ্য, কিছু মাস আগে হাওড়ার বাঁকড়া এলাকা ও মধ্যপ্রদেশ থেকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে এসটিএফের বিশেষ দল । ধৃতদের থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে তদন্তকারী সদস্যদের হাতে । সেই সূত্রেই কাশ্মীরের রামবান থেকে আমিরুদ্দিনকে গ্রেফতার করে জম্বু ও কাশ্মীর পুলিশ ৷