হাওড়া, 4 মে: নদীটি কীভাবে ছিল, এখন কীভাবে রয়েছে সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষের বিশেষ কৌতূহল নেই । যদিও ইতিহাসবিদদের এই নদীটিকে নিয়ে কৌতুহল চিরকালের । তাঁদের গবেষণাতে বারেবারে উঠে এসেছে এই সরস্বতী নদী ৷ এবার এই নদীর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে এল একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কচিকাঁচারা (Students rally to save Sarasvati River) ।
রীতিমত মিছিল করে প্ল্যাকার্ড হাতে স্থানীয় মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কর্মসূচি পালন করে তারা । সরস্বতী নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে তারা আবেদন রাখে । হাতে ঝাড়ু নিয়ে নদীর ধারের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে প্যাকেটে আবর্জনা ভরে মানুষকে সচেতন করার কাজ করে । নদী আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত এমনটাই জানায়, আজকের কর্মসূচিতে আসা নবম শ্রেণির এক ছাত্রী দিয়া ঘোষ । সে বলে, পরিবেশে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম । একে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে । আগামী প্রজন্মের কাছে এর ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল হোক, এটাই চাই ।
আরও পড়ুন : Kolkata pond filling: হট মিক্স প্লান্টের রাবিশে শহরের জলা ভরাটের অভিযোগ
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুনিতা আরোরা দাবি করেন, তাদের স্কুল পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানোর কাজে যুক্ত রয়েছে । স্কুলের পাশ দিয়েই সরস্বতী নদী বয়ে গিয়েছে । তাই তাঁরা চান এই নদী বেচেঁ থাকুক । তিনি আরও জানান, তাঁরা কেন্দ্রীয় জল মন্ত্রকের 'জল শক্তি' প্রকল্প নমানি গঙ্গের সঙ্গে যুক্ত । প্রতি বছর তাঁরা গঙ্গা দূষণ রোধে অনেক কর্মসূচি পালন করেন । আর যেহেতু সরস্বতী বিদ্যার দেবী তাই ঐতিহাসিক এই নদীকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই জরুরি বলেই দাবি করেন তিনি। তাঁর দাবিকে সমর্থন জানিয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতের আইনজীবী ও পরিবেশবিদ সৌমেন সরকার জানান, এই নদীকে তার অতীতের চেহারাতে ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি । এই নদী এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পট পরিবর্তন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে । মনসা মঙ্গলের মত কাব্যে চাঁদ সওদাগরের উপাখ্যানে এই নদীর উল্লেখ ছিল ।
তিনি আরও জানান, তিনি খুব শীঘ্র উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করতে চলেছেন । পাশাপাশি বর্তমানে নদীর এই খারাপ অবস্থার জন্য স্থানীয় মানুষদের সচেতনতার অভাব ও কিছু অসাধু নির্মাণকারী ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন । এছাড়াও জেলার প্রশাসনিক স্তরেও এই নদীকে কেন্দ্র করে কোনও হেলদোল নেই বলেই আক্ষেপ করেন তিনি ।
আরও পড়ুন : Illegale Construction In Kanksa : কাঁকসায় পুকুর ভরাট করে বেআইনি নির্মাণ, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
তবে এখনও সরস্বতীর অস্তিত্ব আছে ত্রিবেণী সঙ্গমেই । এখান থেকে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী 'মুক্তবেণী' হয়ে ছুটে চলেছে বঙ্গোপসাগরের দিকেই । এলাহাবাদের প্রয়াগের 'যুক্তবেণী', অর্থাৎ যেখানে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী মিশেছে ৷ যদিও ত্রিবেণীতে এর ঠিক উলটো ৷ এখানে তিনটি নদী জট ছাড়িয়ে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব গ্রহণ করে । বর্তমানে কিছু কিছু এলাকায় এই নদী এত সরু যে প্রায় খালের আকার ধারণ করেছে । কিছু জায়গায় সংস্কারের অভাবে বুজে এসেছে । আন্দুল রাজবাড়ির পাশ দিয়ে একদা বয়ে যাওয়া খরস্রোতা এই নদী এখন নালার চেহারা নিয়েছে । তবু সে তার নদীর স্বভাব আজও বজায় রেখেছে । অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে আজও তাতে চলে জোয়ার ভাটার খেলা ।