কলকাতা, 19 নভেম্বর: প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার পর অবশেষে চলতি মাসের 19 তারিখ থেকে সাঁতরাগাছি সেতুর মেরামতির কাজ শুরু হতে চলেছে এমনটাই জানা গিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ (Howrah City Police) সূত্রে। ফলত 19 নভেম্বর সকাল থেকে সাঁতরাগাছি সেতুতে যান নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হবে বলেই জানা যাচ্ছে ।
শুক্রবার এই বিষয়টিকে নিয়ে হাওড়া পুলিশ কমিশনার (Howrah Police Commissioner) অফিসে বিশেষ বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় 19 নভেম্বর রাত 11টা থেকে ভোর 5টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ। এছাড়াও ওই দিন ভোর 5টা থেকে রাত 11টা পর্যন্ত কলকাতাগামী একমুখী লেন খোলা রাখা হবে। নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এই কাজ চলবে পুরো ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রায় দেড় মাস যাত্রীদের ভোগান্তির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
গত শুক্রবার এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠি-সহ ট্রাফিক বিভাগের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের লালবাজার ট্রাফিক কন্ট্রোলের আধিকারিকরা ও রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের বাস্তুকারেরা। যে ক'দিন ব্রিজ মেরামতির (Bridge Repair)কাজ চলবে সেই ক'দিন কোনও পণ্যবাহী ট্রাক চলতে দেওয়া হবে না সেতুর উপর দিয়ে। সেক্ষেত্রে পণ্যবাহী ট্রাক রাত দশটার পর কলকাতার দিক থেকে চলাচল করতে পারবে।
আরও পড়ুন: প্রতি বর্ষায় ভেঙে যায় সাঁকো, চাঁদা তুলে তা তৈরি করেন গ্রামবাসীরাই
দ্বিতীয় সেতুর টোল প্লাজা পেরিয়ে আন্দুল রোড হয়ে জাতীয় সড়কের উদ্দেশ্যে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। অপরদিকে, পণ্যবাহী ট্রাক কলকাতায় ঢুকবে রাত দশটার পর নিবেদিতা সেতু হয়ে। যদিও ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, 19 নভেম্বর থেকে 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নিয়ম মেনে ট্রাফিক মুভমেন্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে সাঁতরাগাছি সেতুর কলকাতা অভিমুখে যে জয়েন্ট খারাপ হয়েছে । প্রথমে সেগুলো ঠিক করা হবে।
যদিও এর আগে 2016 সালে সেতুতে সাঁতরাগাছি অভিমুখী লেনের জয়েন্টগুলি সারানো হলেও কলকাতা অভিমুখী লেনের কাজ হয়নি। এই সেতু হয়ে প্রতিদিন প্রায় সত্তর হাজার গাড়ি চলাচল করে। যার দরুণ সেতুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পরীক্ষা করে দেখা হয়। আর খারাপ হওয়া জয়েন্টগুলি ঠিক না করলে বড়সড় দুর্ঘটনার সম্ভবনা রয়েছে। হাওড়া ও কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সত্তর হাজার গাড়ি চলাচল করে। আর এই তথ্য সামনে আসার পরই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজ্যের মুখ্য প্রশাসনিক ভবন নবান্নের।
সেতু বন্ধের খবর প্রকাশ্যে আসতেই এখন চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। এই দেড় মাস ধরে চলবে সেতুর মেরামতি করার কাজ। ইতিমধ্যেই ওই রাস্তা ব্যবহারকারী গাড়ির উপরে সমীক্ষা করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সমীক্ষায় প্রকাশ কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দৈনিক 70 হাজার গাড়ি চলে। যদিও গোটা প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করতে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রায় 800 পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে বলেই ট্রাফিক সূত্রের খবর। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গার্ডরেল ও ভ্যান রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ আমলের কার্নাক সেতু ভেঙে ফেলায় মুম্বইয়ে 27 ঘণ্টা ট্রেন চলাচল অবরুদ্ধ
যে কোনও সমস্যা হলে এবং যানজট হলে সহজেই তার মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠি জানান, যেহেতু অন্য কোনও বিকল্প নেই তাই আন্দুল রোডকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই পূর্ত দফতর থেকে আন্দুল রোডের রাস্তায় প্যাচ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁরা আশাবাদী দেড় মাসের মধ্যেই সেতু সারাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গুজরাতের মোরবিতে ঝুলন্ত সেতুর দুর্ঘটনা থেকে আগাম শিক্ষা নিয়ে এবার রাজ্যের বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে নজর দিয়েছে নবান্ন। দ্রুততার সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুরাতন ও ব্যাস্ত সেতুগুলোর হালহকিকত জানতে সেগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। আবার ছয় বছর বাদে রাজ্য পূর্ত দফতর ও কেএমডি-এর ইঞ্জিনিয়াররা সেগুলিকে ফের মেরামতির প্রয়োজন রয়েছে বলেই রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন।
এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরেই সাঁতারাগাছি সেতুকে চার লেনের সেতুতে পরিণত করার পরিকল্পনা এখনও বিশ বাঁও জলে পড়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে দক্ষিণ পূর্ব রেলের জায়গাতে অদূর ভবিষ্যতে যদি ওই চার লেনের সেতু নির্মাণের কাজ রাজ্য সরকার শুরু করতে পারে সেক্ষেত্রে নিত্যযাত্রী-সহ ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষের কষ্ট অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও সেতুর এই সম্প্রসারণের কাজের জন্য আটকে রয়েছে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো বাবুঘাট থেকে সাঁতরাগাছিতে বাস স্ট্যান্ড সরিয়ে আনার কাজও।