হাওড়া, 12 মে : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের MEME পোস্ট করায় গ্রেপ্তার হাওড়ার দাশনগর অঞ্চলের BJP যুব মোর্চা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা শর্মা । বৃহস্পতিবার (৯ মে) ফেসবুকে একটি MEME পোস্ট করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা । তাঁর বিরুদ্ধে দাশনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বিভাস হাজরা । গতকাল প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেপ্তার করে দাশনগর থানার পুলিশ । তাঁকে 14 দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত ।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর ছবি মর্ফড করার অভিযোগে প্রিয়াঙ্কা শর্মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।"
কী ছিল ওই MEME-তে ?
সম্প্রতি মেট গালা ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া । তাঁর ছবি ভাইরাল হয় । কেউ বা কারা ওই ছবিতে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মুখের জায়গায় মমতা ব্যানার্জির মুখ বসিয়ে দেয় । পরে সেই ছবিটি BJP-র যুবনেত্রী তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করেন। যা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক ।
এবিষয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, "আমি ছবিটা পেয়ে শুধু পোস্ট করেছিলাম । এছাড়া আমার অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না । কিন্তু আমি যেহেতু BJP করি তাই ফাঁসানোর জন্য FIR করা হয়েছে ।"
অভিযোগকারী বিভাস হাজরা বলেন, "বাংলায় এরকম বিকৃত কাজকর্ম আগে কখনও দেখিনি । যেভাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করা হয়েছে তা কাম্য নয় । আমি সহ্য করতে না পেরে থানায় ফোন করে অভিযোগ জানিয়েছিলাম । আমরা চাই, শান্তির পরিবেশ থাকুক । এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে ।"
অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে পুলিশ । গ্রেপ্তার করা হয় প্রিয়াঙ্কাকে ।
যদিও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ নেটিজ়েনরা । তাঁদের কথায়, MEME-টির মধ্যে কোনও অশ্লীলতা নেই । তাহলে MEME পোস্ট করায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে কেন ? অনেকেই এই প্রসঙ্গে অম্বিকেশ মহাপাত্রর উদাহরণ তুলে ধরছেন । নেটিজ়েনরা বলছেন, "রাজ্যে অসহিষ্ণু পরিবেশ তৈরি হচ্ছে । শাসকের অপছন্দের কিছু পোস্ট করা হলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংস্কৃতি কি এটা হওয়া উচিত ? এভাবে কার্যত ব্যক্তি স্বাধীনতা ও স্বাধীন মতামতের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। " যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছে, ছবি মর্ফড মানেই তা সাইবার ক্রাইম । পুলিশ গ্রেপ্তার করে ভুল করেনি ।
উল্লেখ্য, 2012 সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁর "অপরাধ" ছিল তিনি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের টাইমলাইনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কার্টুন পোস্ট করেছিলেন। এজন্য পুলিশ অম্বিকেশবাবুকে গ্রেপ্তার করেছিল। একই অভিযোগে পুলিশ অম্বিকেশবাবুর বন্ধু সুব্রত সেনগুপ্তকেও গ্রেপ্তার করেছিল। এই ঘটনায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশন অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে ৫০০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ মানেনি। তারপর বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অম্বিকেশবাবু। মামলায় তিনি জেতেন। অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে মোট ৭৫০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে । প্রিয়াঙ্কা শর্মার গ্রেপ্তারির ঘটনায় জল কতদূর গড়ায় সেটাই এখন দেখার।