শিবপুর, 12 নভেম্বর : সুন্দরবন নয়, লবণাক্ত জলের উদ্ভিদ ম্যানগ্রোভের এখন নতুন ঠিকানা তিলোত্তমা সংলগ্ন গঙ্গার পাড় । বোটানিকাল গার্ডেন ।
শুনতে অবাক লাগলেও, সামনে এসেছে এমন ঘটনাই । এশিয়ার সব থেকে বড় বোটানিকাল গার্ডেন শিবপুরের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিকাল গার্ডেন ৷ আর এখানেই গঙ্গার পাড় বরাবর উঁকি দিচ্ছে হারগোজা, বাইন, ওঁরাও, কৃপাণের মত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের শ্বাসমূল । বোটানিকাল গার্ডেন থেকে শুরু করে বেলুড় পর্যন্ত গঙ্গার পাড় বরাবর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠছে এমন গাছ ।
নোনা জলের ম্যানগ্রোভকে গঙ্গার মিষ্টি জলে জন্মাতে দেখে প্রথমে চোখ কপালে উঠেছিল উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের । কিন্তু পরে তাঁরা পরীক্ষা করে বোঝেন এই পুরোটাই হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে । বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বসন্ত সিংহ জানান, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে । সেই নোনা জল ক্রমশ ঢুকে পড়ছে সমুদ্র থেকে একশো কুড়ি কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে থাকা কলকাতা ও হাওড়া শহর সংলগ্ন গঙ্গায় । আর এ ভাবেই গঙ্গার জলে তৈরি হচ্ছে ম্যানগ্রোভ জন্মানোর অনুকূল পরিস্থিতি ।
বোটানিকাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, গঙ্গার পাড় বরাবর তৈরি করা হবে ম্যানগ্রোভ অরণ্য । গত 6 জুলাই বিশ্ব অরণ্য সপ্তাহের প্রথম দিন এই কাজ শুরু হয় । প্রাকৃতিক ভাবে 6 প্রজাতির ম্যানগ্রোভ বেড়ে উঠেছিল । পরে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে লাগানো হয় আরও 6 প্রজাতির ম্যানগ্রোভ । অর্থাৎ, মোট 12 প্রজাতির প্রায় 2000 ম্যানগ্রোভ এখন রয়েছে বোটানিকাল গার্ডেনে । বসন্ত সিংহর কথায়, বিগত 10 বছর ধরে এই জাতীয় ম্যানগ্রোভ দেখছি । বোটানিকাল গার্ডেন ছাড়াও বালি-বেলুড় পর্যন্ত মিলেছে ম্যানগ্রোভের খোঁজ । তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের পাশাপাশি ইন ওয়ার্ড মাইগ্রেশন (অন্তবর্তী অভিযোজন) এর জন্য দায়ী ৷
তবে এ ভাবে ম্যানগ্রোভ জন্মানের বিষয়টি যথেষ্ট চিন্তার, তাও স্পষ্ট করেছেন বসন্তবাবু ৷ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, কলকাতা এবং হাওড়ার মতো দুটি বড় শহরের অধিকাংশ মানুষই পানীয় জল হিসেবে গঙ্গার জল ব্যবহার করেন । সেই জলেই বাড়ছে নুনের পরিমাণ ৷ আশঙ্কা এখানেই ৷
এভাবে ম্যানগ্রোভ গাছ জন্মাতে থাকলে বোটানিকাল গার্ডেনের পাশে তৈরি হবে হবে না তো এক টুকরো সুন্দরবন! আশঙ্কা এখানেই ৷