হাওড়া, 19 মার্চ: 1943 সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টানা 80 (আশি) বছর বিরামহীন পরিষেবা দিয়ে চলেছে রবীন্দ্র সেতু ৷ যার 'ডাকনাম' হাওড়া ব্রিজ ৷ এই সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংস্কার বলতে শুধু পিচের প্রলেপ ও নতুন রঙের আস্তরণ পড়েছে ৷ এর বাইরে সেভাবে এই সেতুর কখনও কোনও সংস্কার করা হয়নি ! এর ফলে সেতুর রাস্তার উপর জমেছে বিটুমিনাসের স্তর ৷ ফলে সেতুর ওজন মারাত্মক হারে বাড়ছে ! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অতিরিক্ত ভার বহন করতে করতে সেতুর কাঠামো খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে ৷ তাতে যেকোনও সময় ঘটে যেতে পারে বড় কোনও বিপর্যয় ৷
তাই রবীন্দ্র সেতুর উপরে যান চলাচলের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে (কলকাতা পুলিশ) কলকাতা বন্দরের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে ৷ সেই চিঠিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, হাওড়া ব্রিজের 'বুক থেকে' ভার কমাতে বহু দশক ধরে জমে থাকা বিটুমিনাসের স্তর উপড়ে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে সেতুর রাস্তাটির সম্পূর্ণ মেরামতি ও সংস্কারের (Howrah Bridge Renovation) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ৷
আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যেই এই কাজ শেষ করে ফেলতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ৷ দিনকয়েক আগে কলকাতা পুলিশকে পাঠানো চিঠিতে সেকথা জানানো হয়েছে ৷ পোর্ট ট্রাস্টের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন সিনিয়র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার জন্য 27 দিনের সময়সীমা ধার্য করেছেন ৷ তাঁরা জানিয়েছেন, সেতুর রাস্তায় বিটুমিনাসের স্তরের নীচে কংক্রিটের ডেক স্ল্যাবগুলিগুলি মেরামত করা দরকার ৷
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, হাওড়া ব্রিজ সংস্কারের কাজটি পর্যায়ক্রমে শেষ করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সেতুর আয়ু বাড়াতে হলে অবিলম্বে সংস্কার জরুরি ৷ উল্লেখ্য, টানা কয়েক দশক ধরে জমা বিটুমিনাসের স্তরকেই মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয় ৷ রবীন্দ্র সেতুর দু'টি টাওয়ারের মধ্যে ব্যবধান 1 হাজার 500 ফুট ৷ রাস্তার প্রস্থ 71 ফুট ৷ এছাড়া, পথচারীদের জন্য ব্যবহৃত ফুটপাথের (বাইরের দিকের বর্ধিত অংশ-সহ ফুটপাথ) এক-একটি 18.5 ফুট করে চওড়া ৷ এরই সঙ্গে রয়েছে 78টি হ্য়াঙ্গার ৷ সবমিলিয়ে ওজন অনেক ৷ এর উপর যদি বিটুমিনাসের ভার লাগাতার বাড়তে থাকে, তাহলে তা আরও বাড়ে ৷ নিরাপত্তার স্বার্থে এই বাড়তি ভারই ছেঁটে ফেলতে চাইছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৷
আরও পড়ুন: সারাদিনে চলে লক্ষাধিক গাড়ি, ছিয়াত্তরেও "যুবক" ক্যান্টিলিভার হাওড়া ব্রিজ
সূত্রের খবর, সেতুর কংক্রিটের ডেকের উপরিভাগ এবং তার দু'টি 'অ্যাপ্রোচ' মেরামতির 'ওয়ার্ক অর্ডার' ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে ৷ এই কাজটি সম্পূর্ণ করতে খরচ হবে প্রায় 3 কোটি 50 লক্ষ টাকা ৷ এখন বিষয় হল, মেরামতির কাজ শুরু করলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেতুতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ৷ কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে দফায়-দফায় ৷ প্রয়োজনে রাতে সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে ৷ তবে, এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি ৷